Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
অবহেলা-অনাদরে ঝরতে পড়া ফুল রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সানজামুল
ঢাকা ০১:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ক্রিকেটের সবুজ মাঠ যদি হয় পুষ্প কানন, তবে সে কাননের হাস্নাহেনা সানজামুল ইসলাম!

অবহেলা-অনাদরে ঝরতে পড়া ফুল রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সানজামুল

ফাইল ছবি

ক্রিকেটের সবুজ মাঠ যদি হয় পুষ্প কানন, তবে সে কাননের হাস্নাহেনা সানজামুল ইসলাম! সারা নিশি গন্ধ বিলিয়ে সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেও, প্রভাতে মানুষ তাকে ফেলে সাথী করে অন্য কাউকে! ঘরোয়া ক্রিকেটের বাইশ গজের উইকেট যদি হয় যাদুর মঞ্চ, তবে সে মঞ্চের সবচেয়ে অবহেলিত যাদুকরও পদ্মা পাড়ের আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা সানজামুল ইসলাম।
নয়ন নামেই সবার কাছে পরিচিত ৩২ বছর বয়সী রাজশাহীর এ তরুণ দেশের ক্রিকেটে নিজ মেধার ছাপ রেখে চলেছেন আজ এক যুুগ ধরে। কখনো বলে, কখনো ব্যাটে, আবার কখনোবা ফিল্ডিংয়ে! নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণে মুগ্ধ করে রেখেছেন ক্রীড়া প্রেমীদের। ২০০৯ সালে লিস্ট-এ ক্রিকেটে সানজামুলের অভিষেক। অভিষেক ম্যাচেই তার অনবদ্য বোলিং নৈপুণ্যে রাজশাহী বিভাগ ১৯২ রানে অলআউট হয়েও ১৭ রানে হারায় সিলেট বিভাগকে। সে ম্যাচে মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাড়া ফেলা সানজামুল ২০১০ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রবেশ করেই বাঁ-হাতের স্পিন ভেলকিতে ক্রিকেট পাড়ার সবার হৃদয়ে স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে যান।
প্রথম ইনিংসে ২টি ও পরের ইনিংসে ৩টি উইকেট নিয়ে সে ম্যাচে ৫ উইকেট লাভ করেন। অভিষেকে ৫ উইকেট লাভের পুরস্কার সরূপ পরের মৌসুমেই সানজামুলের সুযোগ মেলে ৩টি ম্যাচে। তিন ম্যাচের ৫ ইনিংসে বল করে সানজামুল সংগ্রহ করেন ১৩টি উইকেট। এরপর আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি রাজশাহীর এই কৃতি ক্রিকেটারকে। জাতীয় ক্রিকেট লীগের ২০১১/১২ মৌসুমে ব্যাটে বলে সানজামুলের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে টানা চতুর্থ বারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় রাজশাহী বিভাগ।
ব্যাট হাতে ২৬৪ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নেন ২৮ উইকেট। মূলত এই মৌসুমেই দেশের ক্রিকেটাঙ্গন অলরাউন্ডার সানজামুল এর দেখা পায়। দুই মৌসুম পরেই অর্থাৎ ২০১৩/১৪ মৌসুমে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ১৭২ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলে নিজের অলরাউন্ডার পরিচিতিকে আরো পাকা পোক্ত করেন সানজামুল। ক্রিকেটের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ধারাবাহিকতার সব থেকে বড় বিজ্ঞাপনের নামটি সানজামুল। ২০০৯ সালে লিস্ট-এ ক্রিকেটে অভিষেকের দিন সিলেটকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে যে সাফল্যগাঁথার শুরু, তা এক যুগ পরও অব্যহত রয়েছে, নতুন কোন দলকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে।
এইতো দিন কয়েক আগে, জাতীয় ক্রিকেট লীগের দ্বিতীয় ম্যাচেই বরিশালকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে করে ফেললেন বিশ্বরেকর্ড! প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সবচেয়ে কম রান দিয়ে ম্যাচে ১০উইকেট নেওয়া বাংলাদেশী বোলারের রেকর্ড! বরিশালের বিপক্ষে দুই ইনিংসে মাত্র ৩৩ রান দিয়ে এ কীর্তি গড়েন তিনি। এর আগে ২০১৬-১৭ মৌসুমে বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ইতিহাসে এক অনবদ্য কীর্তি গড়েন সানজামুল। নর্থ জোনের হয়ে সেন্ট্রাল জোনের বিপক্ষে এক ইনিংসে মাত্র ৮০ রান খরচায় পান ৯ উইকেট। বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে সে বছর যৌথভাবে হন সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।
সে বছর টি-২০ তে নিজ সামর্থ্যের প্রমান রাখেন সানজামুল! বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ফাইনালে তাঁর বোলিং নৈপুণ্যেই যে শিরোপা জেতে ঢাকা ডাইনামাইট্স। বছরের পর বছর ধারাবাহিক ভাবে নিজ সামর্থ্যের প্রমান দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচকদের দৃষ্টি কাড়েন সানজামুল! ২০১৭ সালের মার্চে সুযোগ মেলে শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে! তবে দলের সাথে থাকলেও সে সিরিজে আর মাঠে নামা হয়নি তাঁর। তবে বেশীদিন মাঠের বাইরেও থাকতে হয়নি এই অসামান্য প্রতিভাকে। ঐ বছরের ১৯ মে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সুযোগ মেলে তাঁর।
মাত্র ৫ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিলেও আর সুযোগ মেলেনি সে সিরিজে! পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আবার সুযোগ আসে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে। সেই সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে মাঠে নেমে প্রথম ম্যাচে ১০ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়ে ১ উইকেট লাভ করেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট, যা আজো হয়ে আছে তাঁর শেষ একদিনের ম্যাচ! এর ক’দিন পর (৩১জানুয়ারী, ২০১৮) শ্রীলংকার বিপক্ষে টেষ্ট অভিষেক ঘটে সানজামুলের।
সে টেষ্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ২২ রান করেন সানজামুল এবং বল হাতে নেন ১ উইকেট। হয়তো এই একটি টেষ্টকেই সানজামুলের মতো প্রতিভাকে বিচার করার জন্য ধার্য করেছিলেন এ দেশের ক্রিকেট কর্তারা। তাই পরের টেষ্টেই দল থেকে বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে ভালো করলেও জাতীয় দলে আর পরীক্ষা দেবার সুযোগ হয়নি পদ্মা পাড়ের এ হতভাগার! বারবার নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিলেও কোন এক অজানা কারনে সানজামুল হয়ে গেছেন এ দেশের ট্র্যাজিক হিরো! অথচ যার নামটি প্রতি বছর জ্বলজ্বল করে জ্বলেছে এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ের পাতায় পাতায়।
এক যুুগ আগে দেশের লিস্ট-এ এবং প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নাম লেখানো সানজামুল এ পর্যন্ত ৮৪ টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৩১৭টি, যেখানে রয়েছে এক ইনিংসে ৯ উইকেট লাভের মত বিরল কীর্তি আর ব্যাট হাতে রান করেছেন ২৪৭৬, যেখানে রয়েছে ১৭২ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার ঘটনা। লিস্ট-এ ক্রিকেটেও সমান উজ্জ্বল সানজামুল। ১১০টি ম্যাচে হাত ঘুরিয়ে ঝুলিতে পুরেছেন ১৪০টি উইকেট। ফুটবল পাড়ায় যাদের পদচারণা, তাঁরা হয়তো খুব ভাল ভাবেই জানেন মেসি ও রোনালদোর পার্থক্য কোথায়? একজন অমিত প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন, অন্য জন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গেছেন মেসির কাতারে। সানজামুল যেন ক্রিকেটের সেই রোনালদো।
আহামরি প্রতিভা না থাকলেও কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় তাঁকে দিয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে এক অনন্য উচ্চতা। যে উচ্চতা দিয়ে সহজেই ছোঁয়া যায় একটি দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের বদ্ধ দুয়ার খোলার সোনার চাবি! কিন্তু কোথাও কোন এক অজানা কারনে, অকৃত্রিম চেষ্টায় বীণার তারে তোলা সুর ধরা দেয়না কারো কানে। নতুন একটা বছর আসে, নব উদ্যমে মাঠে ঝাঁপিয়ে পরেন পদ্মা পারের এ টগবগে সেনা, অসাধারণ সব কর্ম দিয়ে নিজের নামটি তুলে দেন রেকর্ড বইয়ের পাতায়। আবারও স্বপ্ন দেখেন, এবার বুঝি সে পাতা পড়বেন দেশের ক্রিকেট কর্তারা। বিধিবাম, সে পাতা আর কেউ পড়েনা! ভাগ্যের শিকেও ছিঁড়েনা!
জনপ্রিয় সংবাদ

বোয়ালখালী’র লোকমানের বিরুদ্ধে দুদেকে অভিযোগ 

ক্রিকেটের সবুজ মাঠ যদি হয় পুষ্প কানন, তবে সে কাননের হাস্নাহেনা সানজামুল ইসলাম!

অবহেলা-অনাদরে ঝরতে পড়া ফুল রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সানজামুল

আপডেট সময় ০৫:২২:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০২২
ক্রিকেটের সবুজ মাঠ যদি হয় পুষ্প কানন, তবে সে কাননের হাস্নাহেনা সানজামুল ইসলাম! সারা নিশি গন্ধ বিলিয়ে সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেও, প্রভাতে মানুষ তাকে ফেলে সাথী করে অন্য কাউকে! ঘরোয়া ক্রিকেটের বাইশ গজের উইকেট যদি হয় যাদুর মঞ্চ, তবে সে মঞ্চের সবচেয়ে অবহেলিত যাদুকরও পদ্মা পাড়ের আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা সানজামুল ইসলাম।
নয়ন নামেই সবার কাছে পরিচিত ৩২ বছর বয়সী রাজশাহীর এ তরুণ দেশের ক্রিকেটে নিজ মেধার ছাপ রেখে চলেছেন আজ এক যুুগ ধরে। কখনো বলে, কখনো ব্যাটে, আবার কখনোবা ফিল্ডিংয়ে! নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণে মুগ্ধ করে রেখেছেন ক্রীড়া প্রেমীদের। ২০০৯ সালে লিস্ট-এ ক্রিকেটে সানজামুলের অভিষেক। অভিষেক ম্যাচেই তার অনবদ্য বোলিং নৈপুণ্যে রাজশাহী বিভাগ ১৯২ রানে অলআউট হয়েও ১৭ রানে হারায় সিলেট বিভাগকে। সে ম্যাচে মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাড়া ফেলা সানজামুল ২০১০ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রবেশ করেই বাঁ-হাতের স্পিন ভেলকিতে ক্রিকেট পাড়ার সবার হৃদয়ে স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে যান।
প্রথম ইনিংসে ২টি ও পরের ইনিংসে ৩টি উইকেট নিয়ে সে ম্যাচে ৫ উইকেট লাভ করেন। অভিষেকে ৫ উইকেট লাভের পুরস্কার সরূপ পরের মৌসুমেই সানজামুলের সুযোগ মেলে ৩টি ম্যাচে। তিন ম্যাচের ৫ ইনিংসে বল করে সানজামুল সংগ্রহ করেন ১৩টি উইকেট। এরপর আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি রাজশাহীর এই কৃতি ক্রিকেটারকে। জাতীয় ক্রিকেট লীগের ২০১১/১২ মৌসুমে ব্যাটে বলে সানজামুলের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে টানা চতুর্থ বারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় রাজশাহী বিভাগ।
ব্যাট হাতে ২৬৪ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নেন ২৮ উইকেট। মূলত এই মৌসুমেই দেশের ক্রিকেটাঙ্গন অলরাউন্ডার সানজামুল এর দেখা পায়। দুই মৌসুম পরেই অর্থাৎ ২০১৩/১৪ মৌসুমে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ১৭২ রানের এক অনবদ্য ইনিংস খেলে নিজের অলরাউন্ডার পরিচিতিকে আরো পাকা পোক্ত করেন সানজামুল। ক্রিকেটের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ধারাবাহিকতার সব থেকে বড় বিজ্ঞাপনের নামটি সানজামুল। ২০০৯ সালে লিস্ট-এ ক্রিকেটে অভিষেকের দিন সিলেটকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে যে সাফল্যগাঁথার শুরু, তা এক যুগ পরও অব্যহত রয়েছে, নতুন কোন দলকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে।
এইতো দিন কয়েক আগে, জাতীয় ক্রিকেট লীগের দ্বিতীয় ম্যাচেই বরিশালকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে করে ফেললেন বিশ্বরেকর্ড! প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সবচেয়ে কম রান দিয়ে ম্যাচে ১০উইকেট নেওয়া বাংলাদেশী বোলারের রেকর্ড! বরিশালের বিপক্ষে দুই ইনিংসে মাত্র ৩৩ রান দিয়ে এ কীর্তি গড়েন তিনি। এর আগে ২০১৬-১৭ মৌসুমে বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ইতিহাসে এক অনবদ্য কীর্তি গড়েন সানজামুল। নর্থ জোনের হয়ে সেন্ট্রাল জোনের বিপক্ষে এক ইনিংসে মাত্র ৮০ রান খরচায় পান ৯ উইকেট। বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে সে বছর যৌথভাবে হন সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক।
সে বছর টি-২০ তে নিজ সামর্থ্যের প্রমান রাখেন সানজামুল! বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ফাইনালে তাঁর বোলিং নৈপুণ্যেই যে শিরোপা জেতে ঢাকা ডাইনামাইট্স। বছরের পর বছর ধারাবাহিক ভাবে নিজ সামর্থ্যের প্রমান দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচকদের দৃষ্টি কাড়েন সানজামুল! ২০১৭ সালের মার্চে সুযোগ মেলে শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে! তবে দলের সাথে থাকলেও সে সিরিজে আর মাঠে নামা হয়নি তাঁর। তবে বেশীদিন মাঠের বাইরেও থাকতে হয়নি এই অসামান্য প্রতিভাকে। ঐ বছরের ১৯ মে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে সুযোগ মেলে তাঁর।
মাত্র ৫ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিলেও আর সুযোগ মেলেনি সে সিরিজে! পরবর্তীতে ২০১৮ সালে আবার সুযোগ আসে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে। সেই সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে মাঠে নেমে প্রথম ম্যাচে ১০ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়ে ১ উইকেট লাভ করেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট, যা আজো হয়ে আছে তাঁর শেষ একদিনের ম্যাচ! এর ক’দিন পর (৩১জানুয়ারী, ২০১৮) শ্রীলংকার বিপক্ষে টেষ্ট অভিষেক ঘটে সানজামুলের।
সে টেষ্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ২২ রান করেন সানজামুল এবং বল হাতে নেন ১ উইকেট। হয়তো এই একটি টেষ্টকেই সানজামুলের মতো প্রতিভাকে বিচার করার জন্য ধার্য করেছিলেন এ দেশের ক্রিকেট কর্তারা। তাই পরের টেষ্টেই দল থেকে বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে ভালো করলেও জাতীয় দলে আর পরীক্ষা দেবার সুযোগ হয়নি পদ্মা পাড়ের এ হতভাগার! বারবার নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিলেও কোন এক অজানা কারনে সানজামুল হয়ে গেছেন এ দেশের ট্র্যাজিক হিরো! অথচ যার নামটি প্রতি বছর জ্বলজ্বল করে জ্বলেছে এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ের পাতায় পাতায়।
এক যুুগ আগে দেশের লিস্ট-এ এবং প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নাম লেখানো সানজামুল এ পর্যন্ত ৮৪ টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৩১৭টি, যেখানে রয়েছে এক ইনিংসে ৯ উইকেট লাভের মত বিরল কীর্তি আর ব্যাট হাতে রান করেছেন ২৪৭৬, যেখানে রয়েছে ১৭২ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার ঘটনা। লিস্ট-এ ক্রিকেটেও সমান উজ্জ্বল সানজামুল। ১১০টি ম্যাচে হাত ঘুরিয়ে ঝুলিতে পুরেছেন ১৪০টি উইকেট। ফুটবল পাড়ায় যাদের পদচারণা, তাঁরা হয়তো খুব ভাল ভাবেই জানেন মেসি ও রোনালদোর পার্থক্য কোথায়? একজন অমিত প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন, অন্য জন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গেছেন মেসির কাতারে। সানজামুল যেন ক্রিকেটের সেই রোনালদো।
আহামরি প্রতিভা না থাকলেও কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় তাঁকে দিয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে এক অনন্য উচ্চতা। যে উচ্চতা দিয়ে সহজেই ছোঁয়া যায় একটি দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের বদ্ধ দুয়ার খোলার সোনার চাবি! কিন্তু কোথাও কোন এক অজানা কারনে, অকৃত্রিম চেষ্টায় বীণার তারে তোলা সুর ধরা দেয়না কারো কানে। নতুন একটা বছর আসে, নব উদ্যমে মাঠে ঝাঁপিয়ে পরেন পদ্মা পারের এ টগবগে সেনা, অসাধারণ সব কর্ম দিয়ে নিজের নামটি তুলে দেন রেকর্ড বইয়ের পাতায়। আবারও স্বপ্ন দেখেন, এবার বুঝি সে পাতা পড়বেন দেশের ক্রিকেট কর্তারা। বিধিবাম, সে পাতা আর কেউ পড়েনা! ভাগ্যের শিকেও ছিঁড়েনা!