সবেমাত্র হেমন্তের ঢেউ লেগেছে প্রকৃতিতে। কার্তিকের প্রথম সপ্তাহ পূরণ হতে এখনও বাকি।রাতে কুয়াসা আর সকালে ঘাসের ওপর শিশিরবিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীতের আমেজে কুয়াশায় মোড়ানো থাকছে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চল।
২০ অক্টোবর রোববার রাজশাহীনআবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দিন যতই যাচ্ছে, ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমছে। ক্রমন্বয়ে প্রত্যহ সন্ধ্যার পর থেকেই হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করছে।সঙ্গে কুয়াশার মাত্রাও বাড়ছে। সম্প্রতি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহীসহ উত্তরে চলে এসেছে শীতের আবহ। দিন গড়িয়ে রাত হলে ক্রমেই বাড়ছে কুয়াশা। রাত নামতেই বাতাসে বিরাজ করছে হাল্কা ঠান্ডা ভাব। হিমেল বাতাসে অনেক সময় শিউরে উঠছে গা। ঘাসের ডগায় জমছে শিশিরবিন্দু। লতাপাতা, ধান, নানা জাতের সবজির ডগায় ও পাতায় শিরায় শিশিরবিন্দু জমছে একইভাবে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন মুক্তোর মতো শিশির কণা জমে আছে। জানান দিচ্ছে শীত আগমন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাতের কুয়াশায় গাছের পাতায় জমা শিশির বিন্দু টিপ টিপ করে ঝরে ভিজে গেছে পিচঢালা পথ। গাছের পাতা, সবুজ ধানের ক্ষেত আর ঘাসের ওপর থেকে ঝরছে শিশিরবিন্দু। এখন দেখা মিলছে কুয়াশার বুক চিরে ভোরের সূর্যোদয়। বিকেলের নীল আকাশের ক্যানভাসে খেলা করছে থোকা থোকা সাদা মেঘের ভেলা। মিষ্টি রোদের খেলা চলে সকালটায়।
এদিকে ভোরের আলোকছটায় কৃষকের ফসলি সবুজ প্রান্তরে দেখা দিয়েছে কুয়াশা নামক প্রকৃতির আবরণ। সকালে হিমহিম আমেজের সঙ্গে রাতের শেষে শরীরে যুক্ত হচ্ছে শীত নিরাময়ের কাঁথা। ভোরের কুয়াশায় হিমশীতল বাতাস অনুভবে শীতকালীন সবজির ক্ষেত পরিচর্যা করছেন অনেকে। এ শুধু গ্রামীণ কৃষকের ক্ষেত আর রাত্রিকালীন শীতের অনুভূতি। এতসব অনুভূতির সঙ্গে গ্রামীণ চা স্টলের অনুভূতিটা না হলে শীতটা কেমন জানি অপূর্ণ থেকে যায়। সন্ধ্যার পর চা প্রেমীদের খুব একটা দেখা না মিললেও ভোরের গ্রামীণ বাজারে চায়ের চুমুকে শীতের জানান দিচ্ছে অনেকে।
অন্যদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে মধ্যরাত নামার আগেই কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চারপাশ। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই মহাসড়কে যানবাহনের চালকরা সাবধান হয়ে যান। রাত নামতেই তারা চলন্ত যানের হেডলাইট জ্বালিয়ে দেন। মহাসড়কের জনমানবহীন স্পটগুলোয় কুয়াশার দাপট কিছুটা বেশি।
শীতকালীন অনেক ফুলের গাছেও কলি ফেটে বেরিয়ে আসছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। শীতের অনুভূতিগুলো আশ্বিনে শরীর শীন শীন পেরিয়ে কার্তিকে পা দিলো। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্ত পাড়ি দিবে শীতের সূচনা সংকেত। আসছে পৌষ ও মাঘের ভরা মৌসুম শীত। আবারও খুঁজতে হবে গরমের অনুভূতি। এরপর আবারও শীত। এভাবেই পালা বদলে পরিবর্তন হচ্ছে ষড়ঋতুর সুজলা সুফলা মায়া ভরা বাংলার প্রকৃতি।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষক স্বরেন মন্ডল
বলেন, ভোর সাড়ে ৫টায় বাড়ি থেকে সবজির জমিতে এসেছি। ভোরের হিম হিম ঠান্ডায় বেশ মোটা পোশাকে পড়ে বেরোতে হয়েছে। এখন প্রতিদিন সকালে কুয়াশার আবাস পাচ্ছি। কিন্তু হঠাৎ করেই আজ সকালে কুয়াশায় চারপাশ ঢাকা পড়ে যায়। সকালে হালকা ঘন কুয়াশা দেখা গেলেও এখনও শীত শুরু হয়নি। এ কুয়াশায় জানান দিচ্ছে শীত দরজায় কড়া নাড়ছে। এবারের কুয়াশা দেখে মনে হচ্ছে শীত ভালোই পড়বে।
রাজশাহী - ঢাকা সড়ক পথে চলাচল কারি দেশ ট্রাভেভেলস বাসের ড্রাইভারসহ একাধিক যানবাহন চালক বলেন, এখন সন্ধার পর থেকেই কুয়াশার দাপট বাড়ছে। সন্ধ্যার পর সড়ক-মহাসড়ক ধরে উত্তরের জেলা শহরগুলোতে যেতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। ফাঁকা স্থানগুলোয় কুয়াশার দাপটে গাড়ি টানাই যায় না। চারদিক থেকে কুয়াশা চেপে আসায় যেন কিছুই চোখে পড়তে চায় না। কোনো কোনো সময় গাড়ি থামিয়ে গাড়ির গ্লাসে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়।
রাজশাহী আবহাওয়া দপ্তর জানায়,উত্তরের ঠান্ডা বায়ু প্রবাহ শুরু হয়েছে। ফলে দিন ছাড়া রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় থেকে অনেকটা হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত বাড়ার সঙ্গে শীত অনুভূত হয়। কুয়াশাও বাড়ছে। মধ্যরাত থেকে শুরু করে রাতের শেষ ভাগ পর্যন্ত শীত অনুভূত হচ্ছে।
সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বৃষ্টিপাতের পর থেকেই হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চল জুড়ে শীত নামতে শুরু করেছে। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। এর প্রভাব পড়ছে উত্তরাঞ্চলের জেলা শহর বগুড়ায়। সম্প্রতি জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৩.কুয়াসা - ঘাসে শিশিরবিন্দু
জানান দিচ্ছে শীত বার্তা৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।