ঢাকা ০৬:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খসড়ায় যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তাতে অনেকেই সেল্ফ সেন্সরড হয়ে যাবে

ডিজিটাল মিডিয়া রেগুলেশনের খসড়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: টিআইবি

ফাইল ছবি

‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস ২০২১’ শীর্ষক খসড়া নীতিমালা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তাদের দাবি এটি চূড়ান্ত হলে একটা নজরদারিভিত্তিক ব্যবস্থা তৈরি হবে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

রোববার (৩ এপ্রিল) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইনটির খসড়া নিয়ে এমন মতামত দিয়েছে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মুহাম্মদ মনজুর ই-আলম।

এসময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খসড়ায় যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তাতে অনেকেই সেল্ফ সেন্সরড হয়ে যাবে। এটা আসলে মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতো। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

টিআইবি জানায়, ডিজিটাল মিডিয়া, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ও ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্মমূহের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করাই হবে খসড়া নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য। আবার ধারা ১(৩) এ বলা হয়েছে যে, এটি মূলত ‌‘ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা প্রদানকারী’ যারা অনলাইনে কনটেন্ট, সেবা অথবা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট প্রদান করবে তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

অথচ খসড়া নীতিমালায় ‘ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা প্রদানকারী’, ‘সেবা’ অথবা ‘অ্যাপ্লিকেশন’ এর মতো শব্দগুলোর সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। ফলে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হবে।

এছাড়া বিদেশি মালিকানাধীন বা বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার বাইরে অবস্থানকারী সেবা প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বা সহযোগিতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ নেই, অথচ নীতিমালার প্রয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে সমধর্মী বিদেশি প্ল্যাটফর্মমূহ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অর্ন্তভুক্তির ইঙ্গিত রয়েছে।

ফলে নীতিমালাটির এই অস্পষ্টতা ও সর্বব্যাপী ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনায় দেশের বাইরের সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে।

ধারা ১(২) অনুযায়ী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ওয়েবসাইটে নীতিমালাটি যেদিন প্রকাশ করা হবে, সেদিন থেকেই এটি কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ (২০০১ আইন) এর ৯৯ ধারায় বলা হয়েছে, প্রয়োজন দেখা দিলে বিটিআরসি (১) সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এবং (২) প্রজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারবে। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনায় খসড়া নীতিমালাটি প্রস্তুত করা হয়েছে, তাই নীতিমালাটি কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের অনুমতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আর নীতিমালাটি কার্যকরভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্তত দুই বছর সময় দেওয়া উচিত। যাতে করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা, পরিচলন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়। তাছাড়া, নীতিমালাটির কার্যকর প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিটিআরসির অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি ও আধুনিকায়নের জন্যও উল্লিখিত সময় জরুরি।

সংগঠনটি জানায়, ধারা ৩-এ উদ্দেশ্য যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তার সঙ্গে ইন্টারনেট বা অনলাইনের চাইতে প্রচলিত টেলিকমিউনিকেশন ও সম্প্রচারের বেশি মিল রয়েছে। অথচ অনলাইনে যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে কনটেন্ট পরিবেশন করা হয়, তা কোনো অর্থেই প্রচলিত টেলিকমিউনিকেশন বা সম্প্রচার মাধ্যমের অনুরূপ নয়।

খসড়া নীতিমালার ধারা-৪ ও ৫-এও এর প্রতিফলন ঘটেছে। কেননা, ধারা দুটিতে নীতিমালার উদ্দেশ্যসমূহ ও নিবন্ধনের যেসব পূর্বশর্ত দেওয়া আছে, তা মূলত প্রচলতি টেলিকমিউনিকেশন সেবাপ্রদানকারী (ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী ও মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর) প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ডিজিটাল মিডিয়া রেগুলেশনের খসড়া ডিজিটাল খসড়া নীতিমালায় ‘অনলাইন সেবাপ্রদানকারী’ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সনদ পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা মূলত প্রচলিত টেলিকমিউনিকেশন মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা থেকেই করা হয়েছে। আর পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ এবং পেনাল কোড-১৮৬০ এর মতো আইনের অধীনেও দায়বদ্ধ থাকতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার ও আমাদের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খসড়ায় যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তাতে অনেকেই সেল্ফ সেন্সরড হয়ে যাবে

ডিজিটাল মিডিয়া রেগুলেশনের খসড়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: টিআইবি

আপডেট সময় ০২:৩৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০২২

‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস ২০২১’ শীর্ষক খসড়া নীতিমালা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তাদের দাবি এটি চূড়ান্ত হলে একটা নজরদারিভিত্তিক ব্যবস্থা তৈরি হবে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

রোববার (৩ এপ্রিল) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইনটির খসড়া নিয়ে এমন মতামত দিয়েছে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মুহাম্মদ মনজুর ই-আলম।

এসময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খসড়ায় যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তাতে অনেকেই সেল্ফ সেন্সরড হয়ে যাবে। এটা আসলে মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতো। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

টিআইবি জানায়, ডিজিটাল মিডিয়া, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ও ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্মমূহের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করাই হবে খসড়া নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য। আবার ধারা ১(৩) এ বলা হয়েছে যে, এটি মূলত ‌‘ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা প্রদানকারী’ যারা অনলাইনে কনটেন্ট, সেবা অথবা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট প্রদান করবে তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

অথচ খসড়া নীতিমালায় ‘ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা প্রদানকারী’, ‘সেবা’ অথবা ‘অ্যাপ্লিকেশন’ এর মতো শব্দগুলোর সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। ফলে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হবে।

এছাড়া বিদেশি মালিকানাধীন বা বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার বাইরে অবস্থানকারী সেবা প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বা সহযোগিতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু উল্লেখ নেই, অথচ নীতিমালার প্রয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে সমধর্মী বিদেশি প্ল্যাটফর্মমূহ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অর্ন্তভুক্তির ইঙ্গিত রয়েছে।

ফলে নীতিমালাটির এই অস্পষ্টতা ও সর্বব্যাপী ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনায় দেশের বাইরের সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে।

ধারা ১(২) অনুযায়ী, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ওয়েবসাইটে নীতিমালাটি যেদিন প্রকাশ করা হবে, সেদিন থেকেই এটি কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ (২০০১ আইন) এর ৯৯ ধারায় বলা হয়েছে, প্রয়োজন দেখা দিলে বিটিআরসি (১) সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এবং (২) প্রজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারবে। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনায় খসড়া নীতিমালাটি প্রস্তুত করা হয়েছে, তাই নীতিমালাটি কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের অনুমতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আর নীতিমালাটি কার্যকরভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্তত দুই বছর সময় দেওয়া উচিত। যাতে করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা, পরিচলন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়। তাছাড়া, নীতিমালাটির কার্যকর প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিটিআরসির অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি ও আধুনিকায়নের জন্যও উল্লিখিত সময় জরুরি।

সংগঠনটি জানায়, ধারা ৩-এ উদ্দেশ্য যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তার সঙ্গে ইন্টারনেট বা অনলাইনের চাইতে প্রচলিত টেলিকমিউনিকেশন ও সম্প্রচারের বেশি মিল রয়েছে। অথচ অনলাইনে যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে কনটেন্ট পরিবেশন করা হয়, তা কোনো অর্থেই প্রচলিত টেলিকমিউনিকেশন বা সম্প্রচার মাধ্যমের অনুরূপ নয়।

খসড়া নীতিমালার ধারা-৪ ও ৫-এও এর প্রতিফলন ঘটেছে। কেননা, ধারা দুটিতে নীতিমালার উদ্দেশ্যসমূহ ও নিবন্ধনের যেসব পূর্বশর্ত দেওয়া আছে, তা মূলত প্রচলতি টেলিকমিউনিকেশন সেবাপ্রদানকারী (ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী ও মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর) প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ডিজিটাল মিডিয়া রেগুলেশনের খসড়া ডিজিটাল খসড়া নীতিমালায় ‘অনলাইন সেবাপ্রদানকারী’ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সনদ পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে, তা মূলত প্রচলিত টেলিকমিউনিকেশন মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা থেকেই করা হয়েছে। আর পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ এবং পেনাল কোড-১৮৬০ এর মতো আইনের অধীনেও দায়বদ্ধ থাকতে হবে।