all-in-one-wp-security-and-firewall
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114কলকাতার দে’জ পাবলিশিং থেকে ১৩৯২ বঙ্গাব্দের মহালয়ায় প্রথম দে’জ সংস্করণে প্রকাশিত হয় ‘মেমসাহেব’। যুগযুগ ধরে যে প্রেমকে বাঙালি অন্তরে লালন করে এসেছে তারই আরেকটি অনুপম প্রেমের ইতিহাস নিয়ে সাতচল্লিশের প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাস। বাঙ্গালীর আবেগ নদীতে নতুনভাবে দোলা দিয়ে পাঠক মহলের কাছে প্রিয় হয়ে আছে ‘মেমসাহেব’। পাঠকনন্দিত এই উপন্যাসটি রোমাঞ্চকর প্রেম ও জীবন সংগ্রামের মিশেলে রচিত। কথাশিল্পী নিমাই ভট্টাচার্য তার জীবনের এক মাহেন্দ্রক্ষণে লিখেছিলেন ‘মেমসাহেব’ উপন্যাস। সুবিনস্থ ভাষা ব্যবহার আর জোড়ালো অনুভূতিতে লেখা এই গল্পকাহিনী বার বার নতুন করে ভালোবাসতে শেখায়। অনেক পাঠক উপন্যাসের চরিত্রের ভেতর দিয়ে ভালোবেসে ফেলে মেমসাহেবকে। সাহিত্যবোদ্ধাদের কেউ কেউ মনে করেন এই ‘মেমসাহেব’-এর গল্পটি লেখকের নিজের জীবনের এক সত্য উচ্চারিত ঘটনা প্রবাহের আলোকপাত।
মেমসাহেব মূলত প্রেমের উপন্যাস হলেও এখানে রয়েছে দেশভাগের কথা, এক রিপোর্টারের অজানা জীবনকথা। সাতচল্লিশের দেশ ভাগ পরবর্তী সময়ে কলকাতা শহরের লাখ লাখ বেকারের মাঝে কি করে একজন হাফ বেকার, হাফ রিপোর্টার শুধু মনের জোর আর নিষ্ঠায় ভালোবাসার শক্তিকে অবলম্বন করে কীভাবে সর্বোত্তম পদে নিজেকে অধিষ্ঠিত করার গল্প।
উপন্যাসটির শুরু হয়েছে দোলা বৌদিকে লেখা চিঠির মাধ্যমে। পুরো উপন্যাসটিই চিঠির মতো করে লেখা। উপন্যাসের মূল চরিত্র দু’জন। একজন মেমসাহেব অপরজন এই উপন্যাসের নায়ক বাচ্চু। নিজের অনাড়ম্বর জীবনের কথাগল্প শোনাতেই একদিন চিঠি লিখতে শুরু করে দোলা বৌদির কাছে। পাঠকের চোখেকে গভীর সমুদ্রের ঢেউ দিয়ে ভিজিয়ে সুনিপুন ভাবে লেখক তুলে আনেন মেমসাহেব চরিত্রটিকে। তবে তার আগে উপন্যাসে এসেছে নায়ক বাচ্চুর জন্মকথা। উপন্যাসের এই অনুচ্ছেদটি পড়লেই তার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠে-
“সেদিন কি তিথি, কি নক্ষত্র, কি লগ্ন ছিল, তা আমি জানি না। জীবন নদীতে এত দীর্ঘদিন উজান বাইবার পর বেশ বুঝতে পারছি যে সেদিন বিশেষ শুভলগ্নে আমি পৃথিবীর প্রথম আলো দেখি নি। এই পৃথিবীর বিরাট ষ্টেজে বিচিত্র পরিবেশে অভিনয় করার জন্য আমার প্রবেশের কিছুকালের মধ্যেই মাতৃদেবী প্রস্থান করলেন। একমাত্র দিদিও আমার জীবনাট্যের প্রথম অঙ্কেই জামাইবাবুর হাত ধরে শ্বশুরবাড়ি কেটে পড়ল। আমার জীবনে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আমি নারী – ভূমিকা-বর্জিত নাটকে অভিনয় শুরু করেছি।”
উপন্যাসের বাচ্চু নারী ভুমিকা বর্জিত জীবনকে শৈশব থেকেই উপলব্ধি করতে শিখে। শৈশব থেকেই আক্ষেপ শব্দটির সাথে পরিচয় ঘটে। মা’র অভাব পূর্ণ হয়না, উল্টো চোখের জলে বুঝতে পারে যদি শৈশবের শুরুতে গাছের গোড়ায় জল পড়তো তাহলে সুন্দর একটা জীবন তারও হতো। কিন্তু বিধাতা পুরুষ হয়তোবা সেটা চাননি। শৈশবের দিনগুলোতে কোন জন্মদিনেই বাবা ছাড়া আর কেউ তাকে আর্শিবাদ করেনি, কোনদিন অপেক্ষা করেনি কেউ স্কুল গেটে। তবে ছোটবেলা থেকে অপেক্ষা হয়েছিল তার সঙ্গি। রোজ রাত্তিরে এবং দুর্গোপুজায় সঙ্গীবিহীন ঘুরে একা একা বাড়ি ফিরে বাবার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। এই অংশে মাকে নিয়ে উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে লেখকের বেশ কিছু মমস্পর্শি বয়ান যার মাঝে একটি অনুচ্ছেদের খানিকটা তুলে দিলাম-
“অনেকে মা পায়না কিন্তু তাঁর স্মৃতির স্পর্শ পায় প্রতি পদক্ষেপে। মা’র ঘর, মা’র বিছানা, মা’র বাক্স, মা’র ফার্নিচার, মা’র ফটো ফটো থাকলেও মা’র একটা আবছা ছবি মনের পর্দায় উঁকি দেবার াবকাশ পায়। আমার পোড়াকপালে তাও সম্ভব হয় নি। নিমতলা শ্মশানঘাটে মা’র একটা ফটো তোলা হয়েছিল। পাঁচ টাকা দিয়ে তিনটে কপিও পাওয়া গিয়েছিল। নিয়মিত বাসাবদলের দৌলতে দু’টি কপি নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তৃতীয় কপিটি দিদির সংসারে ক্ষুধার্ত উইপোকার উদরের জ্বালা মেটাচ্ছে। মানুষের জীবনের প্রথম ও প্রধান নারী হচ্ছে মা। তাঁর স্নেহ, তাঁর ভালবাসা, তাঁর চরিত্র, আদর্শ, প্রতি পুত্রের জীবনেই প্রথম ও প্রধান সম্পদ। ”
নায়কের জীবনে প্রথম নারীর উপস্থিতি ঘটে কৈশরের শেষ দিনগুলিতে পাড়াতো দাদার বাড়িতে। জীবনের প্রথম আবেগী অনুভূতিটির নাম হলো ‘নন্দিনী’। কিশোরী নন্দিনী জীবন নাট্যের নায়ক খুঁজতে বেড়িয়েছিলে সে বয়সেই। কিন্তু উপন্যাসের নায়ক বাচ্চু প্রথম প্রেমের আহবান গ্রহন করতে পারেনা। কারো কারো জীবনে আক্ষেপের সাথে অপরাগতা এত বেশি মাত্রায় যুক্ত হয়ে যায় যে তখন অনেক কিছুই গ্রহণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। নন্দিনী হয়তোবা বাচ্চুর জীবন মঞ্চে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারেনি তবে জীবনের প্রথম প্রেম হিসেবে রয়ে যায় অমূল্য স্মৃতি। ম্যাট্রিক পাস করবার পর নন্দিনী চলে যায় বোম্বে। তবে জীবন থেকে একেবারে চলে যায় না, সেই থেকে জীবনের এই মাহেন্দ্রক্ষণ পর্যন্ত প্রতি নায়কের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ভূল হয় না। দীর্ঘ দশ বছর পর একদিন কার্শিয়াং এর কুয়াশা ভেদ করে নন্দিনীর সাথে পুনরায় দেখা হয়ে"যায়।