উৎসব মুখর পরিবেশে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন-২০২২ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এই জনপদ অনেক প্রাচীন জনপদ। দীর্ঘদিন এই জনপদের মানুষ শোষিত হয়েছেন। তারা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছেন, স্বাধীন হতে বারবার চেষ্টা করেও দীর্ঘদিন সফল হচ্ছিলেন না। অবশেষে কবি এলেন, সেই কবি, যিনি ২৪টি বছর বাংলার জনপদে ঘুরে ঘুরে মানুষের মাথায় প্রবেশ করালেন, শেখালেন জয় বাংলা। তিনি বললেন,‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাক।’ তিনি হচ্ছেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী, হাজার বছরের বাঙালির আশা-আকাঙ্খার বাস্তবায়নকারী, একটা দেশ সৃষ্টিকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গর্ব করে এটি বলতে পারি। এটি অন্য কোন দলের কেউ বলতে পারবে না।
সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে রাসিক মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করছি। এছাড়া মেট্রোরেল, যমুনা সেতুর রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। দেশের মানুষের মাথা পিছু আয় বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে সমুদ্রসীমা জয় করেছি। কৃষিক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত উৎপাদন হচ্ছে। সংকটে থাকা শ্রীলংকাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করোনা মহামারির সময়েও আমরা ধরে রাখতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, দেশের উন্নয়নের সাথে রাজশাহীও এগিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীর উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য আমি আবারো প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শিক্ষানগরী রাজশাহীতে আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। বিশেষ করে একটি পুর্নাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দরকার। আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে সেটি করা সম্ভব হবে। রাজশাহীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী দল, বিএনপি রাজাকারদের দল, বিএনপি ষড়যন্ত্রের দল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি। কারণ তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার কোন পথ নেই। আওয়ামী লীগকে সরিয়ে যে কাউকে ক্ষমতায় বসাতে চায় তারা। বিএনপি যে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে, তাতে তারা কখনো সফল হবে না।
মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল ও বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সদস্য বেগম আখতার জাহান বক্তব্য দেন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ডাবলু সরকার। আরো বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আসলাম সরকার প্রমুখ। সম্মেলনমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর রফিকুল ইসলাম সেখ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন ও রেজাউল ইসলাম বাবুল সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
শুরুতে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উন্মোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের করেন প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা সহ মহান মুক্তি সংগ্রামে সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে মতিহার থানা আওয়ামী লীগের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশনে মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক পদে মোঃ আলাউদ্দিনকে পুনরায় দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সম্মেলনে দ্বিতীয় অধিবেশনে নব-নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।