বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা, লুটপাট, উপাসনালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক, নারীনেত্রীসহ দেশের ২৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা ওই সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে জনমনে নিরাপত্তাবোধ জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (৭ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনের নামে পুলিশের গুলি ও অন্যদের হামলায় ৫ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
যাদের বেশিরভাগই নিরস্ত্র শিক্ষার্থী, শিশু, নারী ও সাধারণ নাগরিক। এরমধ্যে পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য ও সংবাদকর্মী পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনার কোনো বিচার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। তবে আন্দোলন তীব্রতর হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন।
এই পদত্যাগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থী-জনতার একটি ঐতিহাসিক বিজয়। জাতির এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আমরা সংগ্রামী ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানাই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে একশ্রেণির দুষ্কৃতকারী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট চালাচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিস্টান, আহমদিয়া সম্প্রদায় ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষের বাড়িঘরে হামলা করছে।
অগ্নিসংযোগ ও শারীরিক নির্যাতনে লিপ্ত হয়েছে। প্রতিটি জেলায় তারা বিভিন্ন থানা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও দলিলপত্র লুটপাট করেছে।
এতে আরো বলা হয়, আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ যে, গত কয়েকদিনে কমপক্ষে ৩৫টি জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা নন, পঞ্চগড় ও রংপুর জেলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী, দিনাজপুর, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জ ও পটুয়াখালীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং জামালপুরে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) নাগরিকরাও আক্রান্ত হয়েছেন।
অনেক মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে মানবেতর অবস্থায় আছে। এই সকল জনগোষ্ঠী যেকোনো সময় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কবৃন্দ, সেনাবাহিনীর প্রধান ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে তাদের বক্তব্যে এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধের কথা বলেছেন। তারপরও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিও তেমন দৃশ্যমান নয়। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান এবং তাদের ওপর আক্রমণ প্রতিহত করতে আমরা রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বৃহত্তর নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের সকল বন্ধুদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিদাতারা হলেন, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, ড. হামিদা হোসেন, খুশী কবির, রাশেদা কে. চৌধুরী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, সেলিম সামাদ, ড. শাহনাজ হুদা, শিরীন হক, কাজল দেবনাথ, অ্যাডভোকেট তবারক হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, ড. সুমাইয়া খায়ের, ড. ফস্টিনা পেরেইরা, শামসুল হুদা, মনীন্দ্র কুমার নাথ, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, রেজাউল করিম চৌধুরী, মাকসুদুল হক, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, অধ্যাপক বীনা ডি কস্তা, সালেহ আহমেদ, সাইদুর রহমান, ফারহা তানজিম তিতিল, ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা, নাসের বখতিয়ার, হানা শামস আহমেদ, দীপায়ন খীসা ও মুক্তাশ্রী চাকমা।