শেখ হাসিনাকে ব্রিটেনের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। কয়েকটি অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম দাবি করেছে, তিনি ব্রিটেনে আশ্রয় চেয়েছেন। কিন্তু এখনো সেখান থেকে সবুজ সংকেত মেলেনি।
আপাতত ভারতে রয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
সে দেশের গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, তিনি যে পদ্ধতিতে ব্রিটেনের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন, অভিবাসন আইন অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। ওই পদ্ধতিতে কাউকে আশ্রয় দিতে পারে না ব্রিটেন। সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই তথ্য পেয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
অন্যদিকে সম্প্রতি ব্রিটেনে ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি।
প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কিয়ের স্টারমার। এক সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি বলেছে, হাসিনার আবেদন বিবেচনা করে দেখছে ব্রিটেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের পরিস্থিতিতে যেকোনো ব্যক্তি নিকটতম নিরাপদ দেশেই সাধারণত আশ্রয় চেয়ে থাকেন বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কঠিন সময় ব্যক্তি বিশেষকে আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে ব্রিটেনের।
সে ইতিহাস গর্বের। কিন্তু ব্রিটেনে পৌঁছে সেখানে আশ্রয় চাওয়ার নিয়ম নেই। যাদের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রয়োজন, তারা দেশ ছাড়ার পর প্রথম যে নিকটবর্তী নিরাপদ দেশে পা রাখছেন, সেখানেই আশ্রয় চাওয়ার কথা। সেটাই তার নিরাপত্তা পাওয়ার দ্রুততম রাস্তা।’
ব্রিটেনের মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, ব্রিটেনে গিয়ে সেখানে আশ্রয় চাইতে পারবেন না হাসিনা।
আগে থেকে তাকে আবেদন জানাতে হবে আশ্রয়দানকারী দেশের সরকারকে। এ ক্ষেত্রে হাসিনা সেই সময় পাননি। তাই এখনো তার কাছে সবুজ সংকেত আসেনি।
পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে প্রথমে ভারতেই পৌঁছান শেখ হাসিনা। আপাতত তাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। আত্মস্থ হতে কিছুদিন তাকে সময় দেওয়া হয়েছে বলে সর্বদল বৈঠকে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। হাসিনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী, তা তিনি ভারত সরকারকে জানালে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর সঙ্গে সঙ্গে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন বোন রেহানাও। তাদের বিমান নেমেছিল উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সেখানেই রাত কাটিয়েছেন হাসিনা। তারপর গেছেন দিল্লিতে। হাসিনার বোনের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। রেহানার মেয়ে ব্রিটেনের সংসদ সদস্যও বটে। তার পক্ষে ব্রিটেনে পৌঁছনোয় অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে সবুজ সংকেত আসেনি হাসিনার কাছে। তাকে দিল্লিতে রেখে রেহানা ব্রিটেনে চলে যেতে পারেন বলেও দাবি করছে কয়েকটি অসমর্থিত সূত্র।
এদিকে হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে এখনো সরকারিভাবে কিছু জানায়নি ব্রিটেন। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্টারমার সরকার। একটি বিবৃতিতে ব্রিটেন জানিয়েছে, তারা গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক উত্থানের ঘটনার ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’ চায়। তারা এ-ও চায়, ওই তদন্ত হোক জাতিসংঘের নেতৃত্বে, স্বাধীনভাবে। যদিও দীর্ঘ ওই বিবৃতিতে শেখ হাসিনার নাম একটিবারও উল্লেখ করেনি তারা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা