শ্রাবণের টানা কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহড়ি ঢলে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলাজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। এখনো পানির নিচে রয়েছে কয়েক শত একর চিংড়ি, কাঁকড়া ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ঘের। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পালংখালী ইউনিয়নের চিংড়ি, কাঁকড়া ও মৎস্যচাষী, ঘের মালিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরজমিন গিয়ে দেখা যায় উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া, নলবানিয়া, রহমতের বিল ও ধামনখালী এলাকায় প্রায় ২ হাজার একর চিংড়িঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তার মধ্যে মৌলভী আব্দুল লতিফ ওয়াক্কফ এস্টেটের ১৪টি মাছের প্রকল্পে অন্তত ১০ কোটি ৩ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালিকরা। তবে মৎস্যচাষিদের হিসাবে এই ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ ১শত কোটি টাকার চেয়ে বেশি।
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে প্রকল্পের বাধ ভেঙে ভেসে গেছে বাগদা, গলদা, কোরাল, টেংরা, লইল্যা, বাইলা, তেলাপিয়া, বাটা, খরুল ও রপ্তানিযোগ্য কাঁকড়াসহ প্রভৃতি প্রজাতির মাছ। ঘের গুলো এখনো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
মৌলভী আব্দুল লতিফ চৌধুরী ওয়াকফ্ এস্টেটের পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব লতিফ আনোয়ার চৌধুরী (প্রকাশ খোকামিয়া) জানান, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ১৪ টি প্রকল্পের ১০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। মৎস্যচাষী ও কৃষকদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও মৎস্যচাষীদের পুনবাসন ও সহায়তার দাবী জানান তিনি।
মৌলভী আব্দুল লতিফ চৌধুরী ওয়াকফ্ এস্টেটের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ এনামুল হক এনামও একই কথা জানান প্রতিবেদককে।
আঞ্জুমানপাড়া এলাকার চিংড়ি ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন তথ্য জানান, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাফরুল ইসলাম (বাবুল)।
তিনি জানান, আবুল খায়ের গংয়ের ফাঁসিয়াখালী চিংড়ি ঘেরে ২০ লাখ টাকা, আবুল কালাম গংয়ের পশ্চিম ভুলখালী ঘেরে ১০ লাখ টাকা, মুক্তার আহমদ গংয়ের পূর্ব ভুলখালী ঘেরে ১০ লাখ টাকা, বদিউর রহমান গংয়ের জিয়াতাখালী ঘেরে ১৬ লাখ, রমজান আলী গংয়ের গুইজ্জাখালী ঘেরে ১৮ লাখ টাকা, জাহাঙ্গীর আলম গংয়ের উত্তর নোয়াপাড়া ঘেরে ১০ লাখ টাকা, আনোয়ার কামাল গংয়ের উত্তর বাহারপ্যারা ঘেরে ১৫ লাখ টাকা, আব্দুর রহিম গংয়ের দক্ষিণ বাহারপ্যারা ঘেরে ১২ লাখ টাকা, একরাম গংয়ের দক্ষিণ নোয়াপাড়া ঘেরে ৫ লাখ টাকা, আজিজুর রহমানের কেরগৈয়াতলি ঘেরে ২০ লাখ টাকা, আবছার গংয়ের গুইল্লাখালী ঘেরে ১২ লাখ টাকা, মোহাম্মদ ইসমাইল গংয়ের লোইখুইন্না ঘেরে ১০ লাখ টাকা, বেলাল উদ্দিন গংয়ের হাওয়ারছড়া ঘেরে ৬ লাখ টাকা, রিজভি ফাঁড়ি (ডি) ঘেরে ৫ লাখ টাকা, কামাল হোসেন গংয়ের নোয়াপাড়া ঘেরে ৫ লাখ টাকা, আলমের গোদা নামক ঘেরে ৩ লাখ টাকা, এড. জামাল উদ্দিনের গোদা নামক ঘেরে ১০ লাখ টাকা, মোহাম্মদ রিফাত গংয়ের পূর্ব আমিত্তাপ্যারা ঘেরে ১০ লাখ টাকা, লুৎফুর রহমান গংয়ের পশ্চিম আমিত্তাপাড়া ঘেরে ৮ লাখ টাকা, আবছার কামাল গংয়ের দক্ষিণ প্যারা ঘেরে ১০ লাখ টাকা, আনোয়ার কাদের গংয়ের দরিন্নাগোদা নামক ঘেরে ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফয়েজুল ইসলাম জানান, মোহাম্মদ কালো গংয়ের চাষকৃত চিংড়িঘের উকিলের প্যারা নামক ঘেরে ২ লাখ টাকা, নলবনিয়া প্যারা নামক ঘেরে ৫ লাখ টাকা, সাম্পানঘাটা নামক ঘেরে ৫ লাখ টাকা ও গোল প্যারা নামক ঘেরের ৩ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।
এ ছাড়াও সীমান্তের নাফনদী ঘেঁষা থাইংখালী, রহমতের বিল ও ধামনখালী এলাকার বিস্তীর্ণ চিংড়ি ঘেরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে চিংড়ি, কাঁকড়াসহ নানা জাতের মাছ। এলাকার মৎস্যচাষী ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে শ্রাবণের টানা ভারী বৃষ্টির কারণে।
ইউপি সদস্য আলতাজ আহমদ জানান, টানা বৃষ্টির প্রভাবে রহমতের বিল ও ধামনখালী এলাকায় চিংড়ি ও মাৎস্যচাষীদের কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে ইউনিয়নের সবকয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে কৃষকদের ধানের চারা ও বীজতলার ক্ষতি হয়েছে বেশি। নাফনদী ঘেঁষা ধামনখালী, রহমতের বিল, নলবনিয়া ও আঞ্জুমানপাড়া এলাকায় কয়েক শত একর চিংড়ি এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ঘের ও পুকুর বানের পানিতে বাধ ভেঙে মাছ ভেসে গেছে। মৎস্যচাষি আর ঘের মালিকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ও কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান করেন এ জনপ্রতিনিধি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যার কারণে সমগ্র উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো, নিম্নাঞ্চলে ঘরবাড়ি, ইরি মৌসুমে কৃষকের বীজতলা, ধানের চারা ও মৎস্যঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার জন্য বলা হয়েছে। যাতে করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা যায়।”