রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন সব থেকে শেষ হয়ে যায়। দৃশ্যপটঃ কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জ। এই রেঞ্জের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে তুলাবাগান ও পানেরছড়া বনবিট। তুলাবাগান বিটের অধিকাংশ বনভূমি চলে গেছে রামু সেনানিবাসের অধীনে। অবশিষ্ট বনভুমিতে নাম মাত্র বনায়ন রয়েছে। তবে দখলেও চলে গেছে বনভুমি।
পানেরছড়া বিটের বনভূমি ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। নতুন বনায়ন সৃজন করলেও দ্বিগুন হচ্ছে উজাড়। প্রতি বছর বনায়ন সৃজনের জন্য লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও সিংহভাগ বরাদ্দ চলে যাচ্ছে বনকর্মীদের পকেটে। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি বনভূমি, বন্যপ্রাণী ও বনায়ন রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত ফরেস্টার, ফরেস্ট গার্ড ও বনপ্রহরী রক্ষক না হয়ে ভক্ষকের ভুমিকা পালন করছে।
এই পানেরছড়া রেঞ্জের অধিকাংশ বনভূমি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। এদের নেতৃত্বে বনভূমি দখল ও বিক্রি হয়েছে। এই রেঞ্জের বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে শত শত পানেরবরজ, পাশাপাশি গড়ে উঠেছে পরিবেশ বিধ্বস্ত ব্যক্তিগত গরু, ছাগল ও মুরগীর খামার, বাগানবাড়ি সহ হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনা। এসব দখলদারিত্বের বিপরীতে সুবিধা নিচ্ছে পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মোহন্ত।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত যোগদানের পর থেকে সরকারী বনভুমি নিয়ে তিনি জমিদারি করছেন। তার সহযোগীতা এই রেঞ্জে বেড়েছে পাহাড় কাটা, বালু উত্তোলন, বনায়নের গাছ কেটে পাচার সহ বিভিন্ন বন অপরাধ কর্মকাণ্ড। এখানে সক্রিয় রয়েছে একাধিক পাহাড় খেকো, বালু খেকো, বনের গাছ পাচারকারী চক্র। এই চক্র গুলো প্রতিনিয়ত উঁচু পাহাড় কেটে ডাম্পার গাড়িতে করে মাটি পাচার, পাহাড়ের পাদদেশে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন, বনের গাছ কেটে বন উজাড় করে আসছে।
এই চক্র গুলোকে নেপথ্যে ইন্দন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধি। এদের মধ্যে আবার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এসব কাজে রাসরি জড়িত রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে,পানেরছড়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদে রামু দক্ষিণ মিঠাছড়ির এক ইউপি সদস্যে নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট পাহাড় কাটা, গাছ কাটা,বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত। এই সিন্ডিকেটের টার্গেট পানেরছড়া রেঞ্জের উঁচু উঁচু পাহাড় ও সামাজিক বনায়ন। উক্ত সিন্ডিকেট ইতোমধ্যে অনেক সরকারী পাহাড় কেটে সাবাড় ও গাছ কেটে বাগান উজাড় করেছে।
আরও জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারী মাসে পানেরছড়া রেঞ্জের হোয়ারীঘোনার সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে পাচার করা সময় বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে গাছ জব্দ করে। পরে দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ এর নেতৃত্বে একটি টিম গাছ কাটার ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তদন্ত কালে বনায়নের গাছ কেটে পাচারের সাথে জড়িত ৭ জনের নাম উঠে আসে। এই ৭ জনের নামে গত ২২ ফেব্রুয়ারী পৃথক দুটি বন মামলা দায়ের করে বনবিভাগ। এই মামলায় ইউপি সদস্য অন্যতম আসামি।
বিভিন্ন সুত্রে অভিযোগে প্রকাশ,পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত যোগদানের পর বালি, মাটি ও গাছ পাচার চক্রের দাপট বেড়ে যায়। এসব কাজে তিনি সরাসরি সহযোগিতা দেন বলে অভিযোগ।
এসব সিন্ডিকেটের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত ভুমিকা রাখলেও মাঝে মধ্যে চাপের মুখে অভিযানও চালায়। রেঞ্জ কর্মকর্তার অভিযানে বিভিন্ন সময় মাটিভর্তি ডাম্পার জব্দ করলেও পরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার মত ঘটনা অহরহ ঘটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। উক্ত পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সামাজিক নবায়নের টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলন সিন্ডিকেট থেকে মাসোহারা আদায়, বাগানের গাছ পাচার চক্রের সাথে চুক্তিভিত্তিক মোটা অংকের অর্থ আদায়, বনভূমি দখলকারী ও বিক্রেতা থেকে টাকা নেয়া সহ বনভূমিতে কাঁচা- পাকা স্হাপনা নির্মাণকারীদের কাছ থেকে টাকা নেন রতন লাল মহত। তিনি পানেরছড়া রেঞ্জে যোগদানের পর থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তার ক্ষমতা ব্যবহার করে বন রক্ষায় চেয়ে ধ্বংসযজ্ঞে জড়িয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এব্যাপারে পানের ছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিনিধিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে লাইন কেটে দেন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরওয়ার আলম বলেন, বনভুমি দখলকারী ও বনধ্বংসে জড়িত কোন ছাড় নেই। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বনবিভাগ একাধিক মামলা দায়ের ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করেছে এবং অভিযান অব্যাহত ।