তালতলী উপজেলার সওদাগরপাড়া সড়কে কলাগাছ ও সীম গাছের লতাপাতায় বালু ফেলে সলিং রাস্তা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নজরুল ইসলাম লিটু ও স্থানীয়রা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুর এন্টারপ্রাইজের মালিক শামীম মিয়া বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ইটের সলিংএর নিচের ছয় ইঞ্চি বালুর স্থলে এক ইঞ্চি ও নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করছেন। এ সকল অভিযোগ উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনকে জানালেও তিনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
জানাগেছে, ২০২৩-২৪ অর্ধ বছরে তালতলী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এডিপির প্রকল্পে দরপত্র আহবান করে। ১৯ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬’শ ৬৮ টাকা ব্যয়ে বড়বগী ইউনিয়নের প্যাকেজের ১৫ টি কাজ পায় মেসার্স নুর এন্টার প্রাইজের মালিক শামীম মিয়া। ওই প্যাকেজে পাঁচটি গভীর নলকুপ, পাঁচটি সলিং রাস্তা, চারটি মসজিদ ও একটি মন্দিরের মেরামতের কাজ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার শামীম মিয়া সলিং রাস্তায় কলাগাছ ও সীম গাছের লতাপাতার ওপর বালু ফেলে ইট বিছিয়ে সলিং রাস্তা নির্মাণ করছেন। এছাড়াও ছয় ইঞ্চি বালুর স্থলে এক ইঞ্চি বালু ও নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করছেন। ঠিকাদারের এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনকে জানালেও তিনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। উল্টো ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাইছেন। স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন ঠিকাদার উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনের যোগসাজসে দায়সারা কাজ করছেন।
নইলে ঠিকাদারের এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকৌশলীকে জানালেও তিনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর এমন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্র্তৃপক্ষকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শনিবার দক্ষিণ সওদাগরপাড়া সলিং রাস্তা ঘুরে দেখাগেছে, ঠিকাদারের লোকজন কলাগাছ ও সীম গাছের লতাপাতার ওপরে বালু দিয়ে নিম্নমানের ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছে। স্থানীয়রা ওই কলাগাছ ও সীমের লতাপাতা তুলে ফেলেছেন।
সওদাগরপাড়া গ্রামের সোহরাফ হোসেন বলেন, ঠিকাদার কলাগাছ ও সীম গাছের তলাপাতার ওপরে অল্প বালু দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। ওই বালুর উপর নি¤œমানের ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছেন। তিনি আরো বলেন, আমি এর প্রতিবাদ করেছি কিন্তু ঠিকাদার আমাদের দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।
ঠিকাদারের এমন কর্মকান্ড উপজেলা প্রকৌশলীকে জানালে তিনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। উল্টো তিনি আমাকে বলেন অভিযোগ না দিয়ে ঠিকাদারের সহযোগীতা করে দ্রæত কাজ সম্পন্ন করতে।
বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম লিটু বলেন, ঠিকাদার প্রাক্কলন অনুসারে কাজ করছেন না। প্রাক্কলনে অনুসারে ছয় ইঞ্চি বালু দেয়ার কথা থাকলেও তিনি দিচ্ছেন এক ইঞ্চি বালু। বালুর নিচে কলাগাছ ও সীম গাছের লতাপাতা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছেন। এছাড়া নিম্নমানের ইট দিয়ে তিনি সলিং রাস্তা করছেন। ঠিকাদারের এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনকে জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। উল্টো তিনি আমাকে ঠিকাদারকে সহযোগীতা করতে বলেন। তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশেই ঠিকাদার এমন অনিয়ম করছেন। ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।
মেসার্স নুর এন্টার প্রাইজের ঠিকাদার শামীম মিয়া বলেন, কলাগাছ ও সীমের লতাপাতা দিয়ে মানুষ রাস্তায় থাকা ডোবায় চলাফেরা করেছে। ওই গুলোর কথা বলছেন বালুর নিচে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আসলে দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, আমার কাজের মান ভালো। উপজেলা প্রকৌশলী সবই জানেন।
তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ রেখেছি। শতভাগ কাজ বুঝিয়ে না দিলে তার বিল দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার কলাগাছ ও সীম গাছের লতাপাতার ওপরে বালু দিয়ে সলিং রাস্তা করছেন কিনা তা আমার জানা নেই।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।