ঢাকা ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছেলে যেতে চেয়েছিল মেডিকেলে,পরিবার নিলো ওঝার কাছে! অতঃপর..

ছেলে যেতে চেয়েছিল মেডিকেলে,

পরিবার নিলো ওঝার কাছে! অতঃপর..

 

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বিষধর সাপের ছোবলে বুলবুল আহমেদ (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার দেওপাড়া ইউপির চাপাল গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।

পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার পবা উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গার ফেরতাপাড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যান বুলবুল। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় পুকুর পাড়ের পাশে বিষাক্ত সাপে ছোবল দেয় তাকে। এরপর তিনি তার বড় ভাই ঈদুল ফিতরকে ফোন দিয়ে জানান। এরপর আত্মীয়-স্বজনরা ঘটনাস্থলে গেলে বুলবুল বারবার মেডিকেলে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনরা তার নিজ এলাকার ওঝা আকবর আলীর কাছে নিয়ে যান। সেটা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে ওঝা পরীক্ষা করে দুইবার ওষুধ খাওয়ান। তৃতীয়বারে বমি করে দেওয়ায় কবিরাজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে নেয়ার পথেই বুলবুলের মৃত্যু হয়।

বুলবুলের বড় ভাই ইদুল ফিতর বলেন, আমার ভাইকে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে সাপে কেটেছিলো। এরপর সাড়ে ৭টার দিকে কবিরাজের কাছে নিয়ে আসি। দুইবার ওষুধও দিয়েছিলো। তৃতীয়বারে বমি করতে করতে নিথর হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভাই মারা যায়।

শনিবার (২৯ জুন) মৃত বুলবুলের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পরিবার এখনো শোকে কাতর। তার বাবা-মা ও ভাইদের আফসোস ছেলেকে ছোবলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি বেঁচে যেতেন। তবে ওঝার ওষুধের প্রতিও পূর্ণ বিশ্বাস ছিল তাদের।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় বুলবুলের প্রতিবেশী হাসিবুল জোর গলাতেই বলেন, এই কবিরাজ অনেক দক্ষ। তাকেও নাকি সাপে ছোবল দিয়েছিলো। তিনি এই কবিরাজের ওষুধই ভালো হয়েছেন!

এদিকে ওই কবিরাজের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বয়-বৃদ্ধ আকবর আলী লাঠিতে ভর করেই হাঁটাচলা করেন। তিনি বলেন, বুলবুল আমার এলাকার ছেলে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, নওগাঁ থেকে রোগী এসে আমার ওষুধে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু বুলবুল ভালো হলো না। বুলবুলের পরিবারের অবহেলাতেই রোগীটা নষ্ট হয়েছে। পা যদি সঠিকভাবে বাঁধতো, তাহলে বিষ মাথায় উঠতো না। ওর বিষ মাথায় উঠে গিয়েছিলো।

শেষে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেডিকেলে নিয়ে গেলে রোগীটা বাঁচলেও বাঁচতে পারতো। এ সময় তিনি বলেন, শনিবার দুপুরেও একটা সাপে কাটা রোগী এসেছিলো। তার বিষ হাঁটু পর্যন্তই ছিলো। এ কারণে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, সাপে ছোবল দেওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগীর জীবন অনেকটাই সেফ হয়ে হয়ে যায়। কিন্তু বুলবুলকে হাসপাতালে আনা হয়েছে দেরিতে। ওঝার ঝাড়ফুঁকে কাজ না হওয়ার পর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. জাহেদুল ইসলাম বলেন, সাপে কাটা ওই যুবককে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। সেখানে ইসিজি করে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

মোহনপুর বারনই নদীতে অবৈধভাবে সুতি জাল দিয়ে মাছ শিকার কালে মোবাইল কোর্ট অভিযান

ছেলে যেতে চেয়েছিল মেডিকেলে,পরিবার নিলো ওঝার কাছে! অতঃপর..

আপডেট সময় ০৮:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

ছেলে যেতে চেয়েছিল মেডিকেলে,

পরিবার নিলো ওঝার কাছে! অতঃপর..

 

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বিষধর সাপের ছোবলে বুলবুল আহমেদ (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার দেওপাড়া ইউপির চাপাল গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।

পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার পবা উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গার ফেরতাপাড়া এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যান বুলবুল। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় পুকুর পাড়ের পাশে বিষাক্ত সাপে ছোবল দেয় তাকে। এরপর তিনি তার বড় ভাই ঈদুল ফিতরকে ফোন দিয়ে জানান। এরপর আত্মীয়-স্বজনরা ঘটনাস্থলে গেলে বুলবুল বারবার মেডিকেলে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনরা তার নিজ এলাকার ওঝা আকবর আলীর কাছে নিয়ে যান। সেটা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে ওঝা পরীক্ষা করে দুইবার ওষুধ খাওয়ান। তৃতীয়বারে বমি করে দেওয়ায় কবিরাজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে নেয়ার পথেই বুলবুলের মৃত্যু হয়।

বুলবুলের বড় ভাই ইদুল ফিতর বলেন, আমার ভাইকে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে সাপে কেটেছিলো। এরপর সাড়ে ৭টার দিকে কবিরাজের কাছে নিয়ে আসি। দুইবার ওষুধও দিয়েছিলো। তৃতীয়বারে বমি করতে করতে নিথর হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভাই মারা যায়।

শনিবার (২৯ জুন) মৃত বুলবুলের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পরিবার এখনো শোকে কাতর। তার বাবা-মা ও ভাইদের আফসোস ছেলেকে ছোবলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি বেঁচে যেতেন। তবে ওঝার ওষুধের প্রতিও পূর্ণ বিশ্বাস ছিল তাদের।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় বুলবুলের প্রতিবেশী হাসিবুল জোর গলাতেই বলেন, এই কবিরাজ অনেক দক্ষ। তাকেও নাকি সাপে ছোবল দিয়েছিলো। তিনি এই কবিরাজের ওষুধই ভালো হয়েছেন!

এদিকে ওই কবিরাজের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বয়-বৃদ্ধ আকবর আলী লাঠিতে ভর করেই হাঁটাচলা করেন। তিনি বলেন, বুলবুল আমার এলাকার ছেলে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, নওগাঁ থেকে রোগী এসে আমার ওষুধে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু বুলবুল ভালো হলো না। বুলবুলের পরিবারের অবহেলাতেই রোগীটা নষ্ট হয়েছে। পা যদি সঠিকভাবে বাঁধতো, তাহলে বিষ মাথায় উঠতো না। ওর বিষ মাথায় উঠে গিয়েছিলো।

শেষে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেডিকেলে নিয়ে গেলে রোগীটা বাঁচলেও বাঁচতে পারতো। এ সময় তিনি বলেন, শনিবার দুপুরেও একটা সাপে কাটা রোগী এসেছিলো। তার বিষ হাঁটু পর্যন্তই ছিলো। এ কারণে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, সাপে ছোবল দেওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগীর জীবন অনেকটাই সেফ হয়ে হয়ে যায়। কিন্তু বুলবুলকে হাসপাতালে আনা হয়েছে দেরিতে। ওঝার ঝাড়ফুঁকে কাজ না হওয়ার পর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. জাহেদুল ইসলাম বলেন, সাপে কাটা ওই যুবককে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। সেখানে ইসিজি করে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।