মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও সামাজিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদুল আজহার নামাজ শেষে নির্দিষ্ট মাঠে কোরবানির কথা থাকলেও এক মুসল্লীর বাড়িতে পশু জবাই দেওয়ায় ইমাম ও সভাপতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুরে। এতে সভাপতির সাথে তর্কাতর্কিতে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন ইমাম। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের দিনে এমন ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন ওই সমাজের মুসল্লীরাও। সোমবার সকালের দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামে অবস্থিত বায়তুল নুর জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।
মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে সামাজিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাঠে পশু জবাই করার বিষয়টি চুড়ান্ত হয়। কিন্তু ঈদের দিন নামাজের পর সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্থানীয় ইদ্রিস আলী নামের একজনের বাড়ির পাশে কোরবানির পশু জবাই করে। ওই জবাইয়ে বায়তুল নুর জামে মসজিদের ইমাম আবু বকর সিদ্দিক অংশ গ্রহন করেন। বিষয়টি সামাজিক সিদ্ধান্তের উল্টো হওয়ায় ওই মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি কফিল উদ্দিন হুজুরের কাছে কারন জানতে চান। এসময় ইমাম ও সভাপতির মধ্যে তর্ক বির্তক হয়। পরে ইমাম বিষয়টি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জানিয়ে মসজিদে অবস্থান করে ইমাম। এ নিয়ে আসরের নামাজের পর আবারও তর্কবির্তক হলে জবেহ টাকা দিয়ে ইমামকে শান্ত থাকতে বলে কয়েকজন মুসল্লী। কিন্তু ইমাম ঈদের দিন আসরের নামাজের পর বাড়িতে চলে যান।
এ বিষয়ে মসজিদ পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ খোকন মিয়া বলেন,’ দুজনেই উত্তেজিত ছিল। বিষয়টি ঠিক হয়নি। আমরা সাধারণ মানুষ একটু রাগ থাকবে এবং ইমাম সাহেব আমাদেরকে শিক্ষা দিবেন। কিন্তু তা-না করে ইমাম নিজেই উত্তেজিত হয়ে কথা বলেন। এ বিষয়টি নিয়ে এর আগেও আমি উনাকে বলছি যে আপনি শান্ত থাকেন। ইমামদেরও গরম কম থাকা ভালো।’
এ ঘটনায় ভাংনাহাটি মধ্যপাড়া বায়তুল নুর জামে মসজিদের ইমাম আবু বকর বলেন,’ ইদ্রিস আলী তো ওই সমাজেরই মুসল্লী। উনার বাড়ির দিকে গরু জবাই করার জন্য ডাকছে তাই গেছি। পরে সভাপতি ডাক দিছে সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসছি। তারপর তিনি আমার সঙ্গে রাগারাগি করছে। আমি ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জানিয়ে বাড়িতে চলে আসছি।’
এ বিষয়ে ওই মসজিদের মুসল্লী শামীম বলেন,’ মসজিদটি আমরা অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি। কিছু লোক আছে কোন্দল সৃষ্টি করে। মাসিক বেতন দিতে চায়না। কফিল উদ্দিন কাকার পরিবার মিলেমিশে ইমামের বেতন ভাতায় বেশী অবদান রাখছে। গত কয়েকদিন আগেও আমরা ৪ পরিবার মিলে পানির মটরের ৭৫ হাজার টাকা দিয়েছি। সেদিন সামাজিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল মাঠে একসাথে সবাই কোরবানি দিবে। কিন্তু একজনের বাড়িতে ইমাম ওই গরু জবাই করতে কেনো গেল?। এটা নিয়ে এখন মাম সন্মান সবই যাচ্ছে। আমরা হুজুরকে মারি নাই।’
বায়তুল নুর জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আল আমীন বলেন,’আমি ঘটনা শুনেছি। এমন ঘটনা সত্যিই দু:খজনক। তবে, খোঁজ নিয়ে পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো।’
এ ঘটনায় ভাংনাহাটি মধ্যপাড়া বায়তুল নুর জামে মসজিদের সভাপতি কফিল উদ্দিন বলেন,’ এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছে। হুজুর চলে গেছে কেনো.এমন প্রশ্নের উত্তরে সভাপতি বলেন,’উনি ছুটিতে গেছেন।’
এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান মন্ডল বলেন,’ইমাম আমার কাছে এসেছিল। ঈদের দিন রাগারাগি করা ঠিক হয়নি। রাতে আমার এখানে খাওয়া দাওয়া করে সকালে বাড়ি চলে গেছে।,
এ বিষয়ে উপজেলা উলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান সজল বলেন,’আমরা ইমামের সাথে যোগাযোগ করেছি। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতির সঙ্গেও কথা বলে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো। অন্যায় ভাবে কেউ যাতে অপমানিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করছি।