অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া। বাকি তিনটি দল আপনি ইচ্ছেমতো বেছে নিতে পারেন।’
বিশ্বকাপে শীর্ষ চারটি দল কারা হতে পারে, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন প্যাট কামিন্স। তাঁর কথায় ঔদ্ধত্য খুঁজবেন, নাকি প্রবল আত্মবিশ্বাস, সেটি আপনার ব্যাপার। তবে দলটি অস্ট্রেলিয়া বলে কামিন্সের কথাকে শুধুই ‘বলার জন্য বলা’ ভেবে নেওয়াটা একরকম বোকামিই হবে। এই তো গত বছরের শেষ দিকে আহমেদাবাদে ‘বড়’ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, একসময় যাদের সেমিফাইনাল খেলাই ছিল প্রবল শঙ্কায়!
অবশ্য ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে দলটির দাপট যেমন, ২০ ওভারের সংস্করণে সেটি ঠিক অনূদিত হয়নি সেভাবে। ২০০৭ সালে শুরু ছোট ক্রিকেটের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা-খরা ঘুচেছে এই তো ২০২১ সালে এসে। পরের আসরে আবার দেশের মাটিতে ব্যর্থ সেমিফাইনালে উঠতেই। সে আসরের পর অবসরে চলে যান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ, এরপর এক বছরের মতো অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি খেলেছে পূর্ণ মেয়াদের কোনো অধিনায়ককে ছাড়াই। শেষ পর্যন্ত সে দায়িত্ব পড়েছে মিচেল মার্শের কাঁধে, সেটিও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সময়।
সেই দলে জায়গা হয়নি আলোচিত দুজনের—২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়া স্টিভেন স্মিথ আর আইপিএল মাতানো জেইক ফ্রেজার-ম্যাগার্ক। স্মিথের টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা নড়বড়ে ছিল অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই, সর্বশেষ বিশ্বকাপেও বেশির ভাগ সময় পানি টানার কাজ করেছেন। আর ফ্রেজার-ম্যাগার্ক নিজেই বলেছেন, এখনো জাতীয় দলে জায়গাটা ‘প্রাপ্য’ নয় তাঁর।
স্টিভ স্মিথকে বাদ দিলেও অস্ট্রেলিয়া ভরসা রেখেছে অভিজ্ঞদের ওপরই। ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শদের নিয়ে গড়া টপ অর্ডারের পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, টিম ডেভিড, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড থাকবেন মিডল অর্ডারে। পেস বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভরসা অন্য দুই সংস্করণের মতোই প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড ও মিচেল স্টার্ক। স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগারকে অস্ট্রেলিয়া নিয়েছে ঠিকই, তবে প্রথম পছন্দ আগের মতোই অ্যাডাম জাম্পা। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই লেগ স্পিনার ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
সব মিলিয়ে দলটার ভারসাম্য বেশ ভালোই। অবশ্য অধিনায়ক মার্শের আইপিএল থেকে চোট নিয়ে ফিরে যাওয়া বা সেখানে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা ম্যাক্সওয়েলের ফর্ম একটা দুশ্চিন্তার কারণ তাদের। সেসব বাদ দিলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে আছে ইংল্যান্ডের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে একই সঙ্গে দুই সংস্করণের বিশ্বকাপ জেতার হাতছানি। সেটি হলে অবশ্য আরেকটা ইতিহাসও গড়বে তারা, প্রথম দল হিসেবে তিন সংস্করণের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট একসঙ্গে থাকবে তাদের কাছে।
সেটি নিশ্চয়ই চাইবেন ডেভিড ওয়ার্নারও। বাকি দুই সংস্করণ থেকে আগেই অবসর নেওয়া ওয়ার্নার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন এই বিশ্বকাপ দিয়েই। ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে হারা দলটির মধ্যে একমাত্র ওয়ার্নারই আছেন এবার। ওয়ার্নার আর অস্ট্রেলিয়ার চক্রপূরণ—হতেই তো পারে।
আর যা-ই হোক, দলটির যে আত্মবিশ্বাস প্রবল, তা নিয়ে তো সংশয় নেই কোনো। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। অস্ট্রেলিয়া দলের ট্রেডমার্কই তো ওই আত্মবিশ্বাস।