সোলায়মান সুখন
আমাদের মতো উর্বর সমতল এলাকার মানুষজন একটু আত্মকেন্দ্রিক হয় প্রাকৃতিক কারণেই। ধানের বীজ ছিটিয়ে দিলেই ফসল হয়ে গেছে, পাশের পুকুরে বড়শি ফেলে গা এলিয়ে বসে থাকলেই দুই চারটা মাছ উঠে গেছে, সুপেয় পানির জন্যে দলবেঁধে পাহাড় বা মরু ডিঙিয়ে মাইলের পর মিলে হাটতে হয়নি, বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাই রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিতে হয়নি।
জীবিকার জন্যে আমাদেরকে মরু বা বরফ ঢাকা বা সমুদ্র দিয়ে ঘেরা জনপদের মানুষের মতো ছোট ছোট নৌকা বানিয়ে নিজের এলাকা ছেড়ে যেতে হয়নি। তাই বিশ্বজুড়ে ছড়ানো বৈচিত্রের অনেকটাই আমরা দেখতে পাইনি। ফলস্বরূপ আমরা কিছুটা গন্ডিবদ্ধ। এজন্যই আমাদের মধ্যে অন্যের জন্যে নিজে কিছু করার চেষ্টাটাও একটু কম দেখা যায়।
ব্যক্তিগত অর্জনটাই আমাদের বেশিরভাগের কাছে জীবনের প্রধান লক্ষ্য। অন্যের সাথে নিজের ভাগ শেয়ার করারটাকে আমরা অনেকেই বোকামি মনে করি। জীবনের তাগিদে দলবদ্ধভাবে চলতে হয়নি বলে আমাদের মধ্যে অহেতুক দলাদলি বেশি। আমরা আরামপ্রিয়, তাই পরিবর্তন অপ্রিয়। ‘যেমন খুশি তেমন চলুক’ অনেকেরই আমাদের জীবনধারার মূল থিম।
আমাদের ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত এবং প্রথাগুলো খুবই স্বল্পমেয়াদি অর্জনকেন্দ্রিক। কেউ পরিবর্তনের কথা বললে তাকে নিয়ে আমরা ফান করি, এতই আরামপ্রিয় আমরা যে নিজেরা কি ভুল করছি সেটা না এনালাইসিস করে অন্য কেউ বা অন্য একটা দেশ কেন এত ভালো করে ফেলল সেটা নিয়ে হিংসান্বিত হয়ে যাই খুব সহজেই।
কারণ হিংসা করার জন্যে নিজের বিছানা থেকেও উঠতে হয় না, গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে মস্তিস্কের অলস কয়েকটা সেলকে একটু নাড়াচাড়া করলেই কাজ হয়ে যায়
সমতলের মানুষ কিছুটা অলস নৃ-তাত্ত্বিকভাবেই! অলসতা কাটিয়ে বৈচিত্র্যকে ভালোবাসতে শিখতে হবে! বৈচিত্রই ভবিষ্যৎ!