কক্সবাজারের টেকনাফে পারিবারিক কলহের জেরে ছেলে ডাকাত জয়নালের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেছে পিতা শাহাব মিয়া সাবুর (৬০)। মঙ্গলবার (৪ জুন) ভোররাত ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত রোববার (২ জুন) ছেলের ছুরিকাঘাতে আহত হন পিতা। এদিন বিকালের দিকে স্বামী সাবু ও স্ত্রী নুর নাহারের মধ্যে পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত হলে স্থানীয় মরহুম কবির আহমদ মেম্বারের পুত্র নুরুল ইসলামের নিকট নালিশ করতে যায় নুর নাহার। কিছুক্ষণ পর স্বামী সাবুও একই বিষয়ে নালিশ করতে যায়। এরইমধ্যে নুর নাহার হোয়াইক্যং এলাকায় বসবাসরত তার ছেলে ডাকাত জয়নালকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আসে। তখন নুরুল ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে সাথে নিয়ে সমাজ সর্দার ফরিদকে ডেকে সাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
ঘরের আঙ্গিনায় প্রবেশের সাথে সাথে পিতা পক্ষ এবং মা পক্ষ দু’গ্রুপের মধ্যে থেমে থেমে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। এসময় সালিশকারীরা কোন প্রকারে ঝগড়া থামিয়ে উত্তেজনার মধ্যে সমাধান করে কয়েক দিন পর পরিস্থিতি শান্ত হলে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে স্ত্রী নুর নাহারকে আপাতত এক ছেলের বাড়িতে থাকার আহবান জানালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ডাকাত জয়নাল তার ছোট ভাইকে ছুরিকাঘাত করার জন্য ধাওয়া করে। তাদের পিতা সাবু বাধা দিতে গেলে ছেলে জয়নাল তার বাবাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
নিহতের ভাই সোনা মিয়া বলেন, ছুরিকাঘাতকারী ঘাতক ছেলে ডাকাত জয়নাল পালিয়েছে ও প্ররোচনাকারী স্ত্রী নুর নাহারকে আমরা জনসাধারণ আটক করে রেখেছি। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার নিশ্চিত করতে আমি বাদী হয়ে মামলার পর তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হবে।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা খুবই দুঃখজনক। উক্ত বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা রাখি। তিনি সর্বস্তরের মানুষকে এই জাতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থেকে এলাকা ও সমাজকে শান্তিপূর্ণ বসবাসের উপযোগী রাখার আহবান জানান।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, আমরা নিজস্ব সোর্স মারফতে বিষয়টি জানতে পেরেছি। এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।
উল্লেখ্য, হ্নীলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব এইচকে আনোয়ারের সময়কাল হতে এই পরিবারে দাম্পত্য ও পারিবারিক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। যা চেয়ারম্যান, মেম্বার, সমাজ সর্দার ও গণ্যমান্য ব্যক্তি পর্যন্ত সালিশ গড়ায়। কিন্তু তাদের বিরোধ সমাধান না হওয়ায় পুরো পরিবার দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের জেরে ছেলের ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল কৃষক ও দিনমজুর বাবার।