কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, বাগেরহাটের মোংলাসহ বিভিন্নস্থানে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ নিপীড়নকারী সাতক্ষীরা পৌরসভার সিইও নাজিম উদ্দীন কর্তৃক সাতক্ষীরার সাংবাদিক মুনসুর রহমানকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক সমাজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব
করেন সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরী।
মানববন্ধনে এখন টেলিভিশনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আহসানুর রহমান রাজীবের সঞ্চালনায় বক্তব্যে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভায় নির্বাচিত ১৩ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছে। এই ১৩ জনের পরিষদ একজন সরকারী কর্মচারীকে এতোটাই মাথায় তুলেছে যে তিনি আর নিচে নামতে চায় না। সেজন্য যাকে তাকে বাস্টার্ড, যাকে তাকে গালাগালি করছেন। একসময়ে মধ্যযুগে জমিদাররা প্রজাদের সাথে যেমন আচারণ করতো এই নাজিম উদ্দীনের ব্যবহারও তেমনি হয়ে গেছে। বায়জিদ বলে একটি প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে। সে নিউ মার্কেট মোড়ে একটি (ভ্রাম্যমান দোকান) টলের দোকানের মধ্যে কম্পিউটার পরিচালনা করে তার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে। সেই টলটি উচ্ছেদ করে পৌরসভায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, মাননীয় সংসদ সদস্যগণ, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সুধীজনের উপস্থিতিতে
সিদ্ধান্ত হয়েছে কুরবানি ঈদ পর্যন্ত জেলার কোথাও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরে সিইও টলটি যদি পৌরসভায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে মনে হয় সেটি বৈধভাবে করা হয়নি, অবৈধভাবে হয়েছে। এর পিছনে কোন ব্যক্তি আক্রোশ থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, এই সিইও এর কর্মজীবন মোংলায় শুরু হয়। সেখানে একটি ফার্মেসীতে অভিযান পরিচালনা করতে যেয়ে মারামারি করেন। ঐ ঘটনায় তার বিচার বিভাগীয় শাস্তি হয়। পরে তাকে বদলী করা হয় কক্সবাজারে, সেখানে তার দাদার বয়সী এক ব্যক্তিকে কান ধরে উঠবস করানোর জন্য বদলী হয়ে কুড়িগ্রামে যায়। সেখানেও একজন সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে কারাদন্ড দেওয়ার মতো অপরাধ করেন। এই ঘটনায় রাষ্টপতির কাছে ক্ষমা পেয়ে চাকুরী রক্ষা করে। সেই নাজিমের মতো কর্মকর্তার সাতক্ষীরা পৌরসভায় জায়গা হয়। এই ব্যক্তি সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকের সাথে যে আচারণ করেছে তা শোভনীয় নহে। এই ধরনের মানুষের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায়। তিনি বলেন, সরকার যেখানে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করছে, সেখানে নাজিম উদ্দীনের মতো আনস্মার্ট কর্মকর্তার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বলবো এধরণের আনস্মার্ট কর্মকর্তাকে অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া হোক।
এছাড়াও বক্তব্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন কমান্ডার মশারফ হোসেন মশু বলেন, আজকের এই মানববন্ধন একটি ঐতিহাসক রুপ নিয়েছে। সাতক্ষীরা পৌরসভায় এমন একজন কর্মকর্তা আছে যার জন্য প্রতিনিয়ত মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন, এই সিইওকে দ্রুত সাতক্ষীরা থেকে প্রত্যাহার করা হোক। তিনি আরও বলেন, আমরা এই আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছি। আপনারা এগিয়ে যান, সকল মুক্তিযোদ্ধারা আপনাদের ভালো কাজে পাশে আছে।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী বলেন, ২৫ বছর এই পেশার সাথে জড়িত, সেই ছাত্রজীবন থেকে। অনেক নেতা মহারতি এই জেলায় চাকুরী করেছেন, চলেও গেছেন। কিন্তুু আমরা সাতক্ষীরায় আছি। আমরা জেনেছি, এই সিইও যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই মানুষের সাধে এমন আচারণ করেছেন। কেন এখানে সরকার তাকে রেখেছে জানিনি। ডিজিএফআই, এনএসআই এর প্রতিনিধিরা এখানে হয়তো বা আছেন তাদের কাছে অনুরোধ জানাই সিইওকে এখান থেকে অপসারণ করুক।
টিভি জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের আহবায়ক আবুল কাশেম বলেন, আজকের এই মানববন্ধনে সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা দাঁড়িয়ে আছেন। এই পৌরসভার সিইও এমন একজন কর্মকর্তা, উনি যেখানেই থাকেন সেখানেই একজনকে পেটান। উনি যেখানেই থাকেন সেখানের মানুষদের উত্তপ্ত করেন। দেশের বলতে উনারা, আর সবাই চাকর। তিনি দেশের কোথাও বেশিদিন চাকুরী করতে পারেনি। সাতক্ষীরাতে কেন পেরেছেন, এখানকার নেতাদের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর নেই। দেশে মেধাবী সন্তানদের কি অভাব রয়েছে। তারমতো অখাদ্য কুখাদ্য কর্মকর্তাকে পৌরসভায় রাখতে হবে। আর কোনো মেধাবী সন্তান নাই, কোনো বিসিএস কর্মকর্তা নেই। ইতিপূর্বে সাতক্ষীরার অনেক জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। তাদের ব্যবহার তো এমন ছিলো না। তার এধরণের ব্যবহার হবে কেন? তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই এই নাজিম উদ্দীনকে সাতক্ষীরা থেকে সরাতে হবে। তিনি যতোদিন সাতক্ষীরায় থাকবে ততোদিন এধরণের ঘটনা প্রতিনিয়ত জম্ম দেবেন। এভাবেই রাষ্টযন্ত্রের সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। এই ঘটনার
তীব্র নিন্দা জানাই।
উদীচী শিল্পগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী বায়জিদ ও মুনসুরের সাথে সিইও এর রুমে গিয়েছিলাম। সেখানে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে সেটা আমার সামনেই। একজন ম্যাজিস্ট্রেসী পাওয়া বা এডিসি র্যাংকের অফিসার এমন দুর্বর ব্যবহার করেছে তা শুনে বাস্টার্ড, বানচোদ, বোকাচোদা একজন অফিসার তার অফিসে বসে বলতে পারেন তা ধারণা ছিলো না। ৩২ বছর কৃষি ব্যাংকে চাকুরী করেছি। এধরণের ব্যবহার কোনো অফিসারের মুখে শুনিনি। মুনসুর পরিচয় দিয়েছে সাংবাদিক, বাংলায় মাস্টারসহ সরকারি কলেজ থেকে। এরপরেও সিইও বলছে তোর বাবার কি করে। মুনসুর বলে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসের শ্রমিক ছিলেন। একজন শ্রমিকের ছেলে কথাগুলো এমন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও এভাবে বলে না। তার কাছে জিরো আমরা। পুলিশ অফিসাররাও এমন ব্যবহার করে না। আমরা শহরের লোকেরা রাগ করলেও এমন খারাপ ব্যবহার করি না। এই জঘন্য ভাষার ব্যবহার তার কাছে আশা করিনা আমরা। আমরা চাই তার মতো একজন জঘন্য ব্যক্তি সাতক্ষীরা থেকে চলে যাক। সিইও বলেন মুনসুর ক্ষমা চাইলে বায়জিদের টল বসবে। আমরা সাতক্ষীরাবাসী শান্তি প্রিয় মানুষ। গালিগালাজ করে যে কথা বলা যায়, সেটি আমার জানা ছিলো না। মুনসুর তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। সাংবাদিকরা যে লাঞ্চিত হয় তা আমরা চাই না। তিনি একজন বিসিএস ক্যাটাগরির অফিসার।
ঐদিন অফিসের কর্মচারীদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। উনি যে কথাগুলো বললেন খুবই দুঃখজনক। সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ বলেন, কাউন্সিলর ও মেয়রকে ম্যানেজ করে পৌরসভাকে গিলে ফেলেছে এই দুর্নীতিবাজ সিইও নাজিম উদ্দীন। ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে বিভাজন। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিককে লাঞ্চিত করেছেন। এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি অবিলম্বে পৌরসভার সিইও নাজিম উদ্দীনকে সাতক্ষীরা থেকে প্রত্যাহার পূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করতে হবে। তার সাতক্ষীরায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তাকে অপসারণ করে পৌরসভাকে দুর্নীতিমুক্ত করা হোক।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের প্রাক্তন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, আব্দুস সামাদ, বাংলাভিশনের আসাদুজ্জামান আসাদ, দৈনিক তথ্যের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম (শাওন), বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মোঃ মুনসুর রহমান, সাব-এডিটর মারুফ আহম্মদ খান (শামীম), সাংবাদিক শেখ রেজাউল ইসলাম, হাসান, মাহফুজ, আবু সাঈদ, খায়রুলসহ
বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকবৃন্দ।