all-in-one-wp-security-and-firewall
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114মহামারি করোনার পর থমকে যায় বিশ্ব অর্থনীতি। বন্ধ হয়ে যায় নামি দামি অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেক কোম্পানি কর্মী ছাঁটাইয়ে বাধ্য হয়। যার আঁচ লাগে দেশের পোশাক শিল্পেও। বন্ধ হয়ে যায় রপ্তানি আদেশ। পরে সচল হয় অর্থনীতি, ঘুরে দাঁড়ায় দেশের পোশাক খাত। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি ফের বাধ সাধে। কয়েকগুণ বেড়ে যায় জ্বালানির দাম। গ্যাস-বিদ্যুতের বর্ধিত দামে দেখা দেয় বহুমুখী সংকট।
এসব সংকট সামলে ওঠার আগেই ৪৩টি পণ্যে রপ্তানি সহায়তা বা নগদ প্রণোদনা কমিয়েছে সরকার। উন্নয়শীল দেশের কাতারে যাওবার ফলে ২০২৬ সাল থেকে কোনো প্রণোদনা থাকছে না। এ কারণে চলতি (জানুয়ারি) মাস থেকেই কার্যকর হয়েছে নতুন এ সিদ্ধান্তটি। তবে শিল্পোদ্যোক্তারা এটাকে ভালো চোখে দেখছেন না।
তাদের মতে, বহুবিধ সংকটে দেশের রপ্তানি খাত বিশেষ করে পোশাক শিল্প। বিশ্বের প্রধান বাজারে রপ্তানি কমেছে পোশাকের। উৎপাদনের ব্যয় বাড়লেও সে হারে দাম পাচ্ছে না পণ্যের। এ অবস্থায় প্রণোদনা সহায়তা কমানো হলে মুখ থুবড়ে পড়বে মাঝারি ও ছোট শিল্প। আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হলে সংকট কিছু সামলেও নেওয়া যাবে বলে জানান তারা।
সরকারের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি (২০২৪) সালের ১ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত জাহাজি করা পণ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪৩টি খাতে রপ্তানিতে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। এখন দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ হারে এ নগদ সহায়তা পাবেন রপ্তানিকারক। এর আগে যেটা ছিল ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
রপ্তানি সহায়তা কমিয়েছে সরকার। যেটা চলতি মাস থেকে কার্যকর হবে। কয়েকটি ক্যাটাগরির রপ্তানিতে পণ্য সহায়তা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে টি-শার্টসহ পোশাক রপ্তানির বড় পণ্যে সুবিধা থাকছে না। নতুন বাজারে সহায়তা কমানো হয়েছে। এতে আরও চাপ তৈরি করবে, বাধাগ্রস্ত হতে পারে অর্থনীতি।—মোহাম্মদ হাতেম
পোশাক খাতে ১ শতাংশের পরিবর্তে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাবেন পোশাক রপ্তানিকারকরা। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যে ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে এত দিনে ভর্তুকি ১০ শতাংশ থাকলেও এখন থেকে পাবেন ৮ শতাংশ। অন্য খাতেও রপ্তানিতে ভর্তুকি কমিয়েছে সরকার।
দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৩ শতাংশ করা হয়েছে, আগে যেটা ছিল ৪ শতাংশ। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের প্রণোদনার হার ৩ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তাও ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। তবে রপ্তানিকারকদের জন্য নিট, ওভেন ও সোয়েটারসহ তৈরি পোশাক খাতের সব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অতিরিক্ত ৪ শতাংশ বহাল আছে। নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে রপ্তানিতে ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানিতে বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন এ নির্দেশনার ফলে এসব খাতে নির্ধারিত পাঁচটি এইচএস কোডের রপ্তানির বিপরীতে কোনো নগদ সহায়তা মিলবে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জাগো নিউজকে বলেন, রপ্তানি সহায়তা কমিয়েছে সরকার। যেটা চলতি মাস থেকে কার্যকর হবে। কয়েকটি ক্যাটাগরির রপ্তানিতে পণ্য সহায়তা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে টি-শার্টসহ পোশাক রপ্তানির বড় পণ্যে সুবিধা থাকছে না। নতুন বাজারে সহায়তা কমানো হয়েছে। এতে আরও চাপ তৈরি করবে, বাধাগ্রস্ত হতে পারে অর্থনীতি।
এমন একটা সময়ে প্রণোদনা কমানো হলো যখন উদ্যোক্তারা কঠিন সময় পার করছেন। কোনো স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়নি, আলোচনা করা হয়নি। আমরা পাঁচ-ছয় মাস আগে বায়ারকে প্রাইস দিয়েছি, সুতা কিনেছি বেশি দাম দিয়েছি। এ অবস্থায় প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত জানুয়ারি থেকে কার্যকর হলে বিপদে পড়ে যাবেন ছোট ও মাঝারি শিল্প মালিকরা। মুখ থুবড়ে পড়তে পারে, বন্ধ হতে পারে সেগুলো।—শহিদুল্লাহ আজিম
তবে বৈরী পরিবেশেও বিনিয়োগ আসে দেশে। গড়ে ওঠে কারখানা। গত দুই বছরে ছয় শতাধিক নতুন কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও নতুন বেতন কার্যকর, ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া বন্ধও হয়েছে বেশ কিছু কারখানা। তবে উদ্বেগ তৈরি করেছে প্রধান কিছু বাজারে রপ্তানি কমে যাওয়া। বিশেষ করে মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২২ শতাংশ আসা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১১ মাসে ২৫ শতাংশ কমেছে। ইউরোপের বাজারেও কমেছে রপ্তানি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রপ্তানিতে সংকট দেখা দেবে এমনটাই বলছেন উদ্যোক্তারা। যদিও এর সাথে রাজনৈতিক কোনো বিষয় দেখছেন তারা।
এ বিষয়ে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, এমন একটা সময়ে প্রণোদনা কমানো হলো যখন উদ্যোক্তারা কঠিন সময় পার করছেন। কোনো স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়নি, আলোচনা করা হয়নি। আমরা পাঁচ-ছয় মাস আগে বায়ারকে প্রাইস দিয়েছি, সুতা কিনেছি বেশি দাম দিয়েছি। এ অবস্থায় প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত জানুয়ারি থেকে কার্যকর হলে বিপদে পড়বেন ছোট ও মাঝারি শিল্প মালিকরা। মুখ থুবড়ে পড়তে পারে, বন্ধ হতে পারে সেগুলো।
তিনি আরও বলেন, অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের, উৎপাদন বেড়েছে, ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়েছে। গ্যাস-ইলেকট্রিসিটির বিল দ্বিগুণ বেড়েছে, ওয়েস্ট বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। এ অবস্থার মধ্যে প্রণোদনা কমানোর ফলো অনেক কারখানা বন্ধ হতে পারে, অনেক বড় বড় কারখানাও বেতন দিতে পারবে না। আমরা গ্রো করছিলাম সেই সময়ে ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি কমে গেছে। আমরা নতুন বাজারে রপ্তানি করছি, যেটা ভালো করছে তবে সহায়তা বন্ধের ফলে সেটাও বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রণোদনা কমার ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। গ্যাসের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে বহু বছর ধরে, এটাকে একটা প্রাইসের মধ্যে আনলে অপচয় হতো না। তাছাড়া আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করেছি, সেখানে শর্তের কারণে কিছু সুবিধা চাইলেও দিতে পারবো না। তাই প্রণোদনা থেকে আমাদের সরে যেতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।—সেলিম আর এফ হোসেন
প্রণোদনা কমার ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ব্র্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, প্রণোদনা কমার ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। গ্যাসের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে বহু বছর ধরে, এটাকে একটা প্রাইসের মধ্যে আনলে সেটাতে অপচয় হতো না। তাছাড়া আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়শীল দেশের কাতারে প্রবেশ করেছি, সেখানে শর্তের কারণে কিছু সুবিধা চাইলেও দিতে পারবো না। তাই প্রণোদনা থেকে আমাদের সরে যেতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
রপ্তানি সহায়তার বিষয়ে কথা হয় অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মানিত ফেলো মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, রপ্তানিতে প্রণোদনা সুবিধা আরও দুই বছর রাখতে পারি, যেহেতু ’২৬ সালের পর প্রণোদনা বন্ধ হবে। তবে সেখানে সমস্যা দেখা দেবে রপ্তানিকারকদের জন্য। একবারে বা একধাপে সহায়তা বন্ধ করলে তাদের ক্ষেত্রে খুবই কঠিন হতো, এক্ষেত্রে ধাপে ধাপে বন্ধ করা হচ্ছে। সেই জন্যই গ্রাজুয়ালি করা হচ্ছে। প্রণোদনা হলো তার আয়-ব্যয়ের একটা অংশ মাত্র। তার অন্য জায়গায় যেগুলোতে হ্যারাসমেন্ট হয়, সেসব জায়গায় তাদের সহায়তা দিতে হবে।
অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন টাকার অবনমন চলছে, সেটা তো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে অব্যাহত থাকবে। সেটা হলেও কিছুটা প্রশমন হবে। কারণ এক ডলারের বিপরীতে ১১০ টাকা পাচ্ছিল সেটা তো এখন ১১২ বা ১৩ টাকা পাবে। ধীরে ধীরে আরও কিছু অবনমন হবে। আমার মনে হয় সেদিকটায়ও কিছুটা সামাল দিতে পারবেন রপ্তানিকারকরা। মোট কথা গ্রাজুয়ালি রপ্তানিকারকদের প্রস্তুত করে তোলা থেকেই প্রণোদনা ধাপে ধাপে কমানো হচ্ছে।