Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
পুরনো লাইন ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু সংস্কার না হওয়ার কারণ বাড়ছে রেল দূর্ঘটনা
ঢাকা ০৪:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরনো লাইন ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু সংস্কার না হওয়ার কারণ বাড়ছে রেল দূর্ঘটনা

পুরনো লাইন ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু সংস্কার না হওয়ার কারণ বাড়ছে রেল দূর্ঘটনা

সারাদেশে রেলওয়ে উন্নয়নে একাধিক নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও সংস্কার হচ্ছেনা মেয়দউর্তীর্ন রেললাইন ও রেলসেতু। লক্কড় ঝক্কড় রেল ট্রাক,মেয়াদাতীর্ন রেলপাত, মেয়াদার্তীর্ন রেলের কোচ ও লোক মাস্টার( ইন্জিন), দায়সারা প্রশিক্ষন নেয়া চালক,নীতি নির্ধারক দের দূরদর্শীতার অভাব,সব মিলিয়ে রেলের হযরলব অবস্থার কারনেই রেলে দূর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
সারাদেশে প্রতিনিয়ত লাইনচ্যুতিসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা ও লাইনচ্যুতির প্রায় ৭০ শতাংশই হয় ঝুঁকিপূর্ণ লাইন ও দুর্বল সেতুর কারণে। সারাদেশে ছোট-বড় মিলে গত ৫ বছরে দুই হাজারের বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। বেসরকারি গবেষকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি না থাকায় এ সব দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। আর রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্ঘটনা রোধে রেলের অনেক বিধিবিধান রয়েছে, সেগুলো মানা হয় না বলেই বাড়ছে দুর্ঘটনা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ দূষণরোধ, যাতায়াত নিরাপত্তা, স্বল্প খরচে মালামাল পরিবহন, ভূমির পরিমিত ব্যবহার, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বোপরি নগরের সঙ্গে গ্রামের সেতুবন্ধনে রেলের গুরুত্ব অনেক। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলওয়েকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। উন্নয়ন বাজেটেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর পরেও তেমন কোনো সুফল মিলছে না। একের পর এক স্টেশন বন্ধ, মেয়াদোত্তীর্ণ রোলিং স্টক, জরাজীর্ণ রেল কারখানা, লোকবল সংকট, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে না পারা, টিকিট পেতে ভোগান্তি, ছেঁড়া ও নোংরা আসনসহ নানা অব্যবস্থাপনা লেগেই আছে।
এছাড়া প্রচন্ড ঠান্ডা রেল পাতের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠেছে।
প্রতিদিন কোন না কোন স্থানে রেল লাইনে ফাটল বা ভেঙ্গে যাচ্ছে।এ-র ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে ট্রেন চলাচল।পাশাপাশি শঙ্কিত যাত্রীরাও।
রাজশাহীর নন্দনগাছিতে রেললাইনে ফাটলঃ-
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর নন্দনগাছি স্টেশনের অদূরে চিলাহাটি থেকে রাজশাহী গামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্টেনটি অল্পপের জন্য রক্ষা পায়।
রাজশাহীর নন্দনগাছি স্টেশনের কাছে রেললাইন ভেঙে যাওয়ায়ন ঘন্টাব্যাপি সারাদেশের সাথে রাজশাহীর রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।রেললাইন ভেঙ্গে যাওযায় সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের পাশাপাশি রাজশাহী-ঢাকা রুটের ধূমকেতু এবং যশোর- রাজশাহী রুটের কপোতাক্ষ ট্রেনও আটকা পড়ে।
চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনে ফাটল:-
১৬ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলীতে রেললাইনে ফাটল  ফাটল দেখা দিলে স্থানীয়রা দুটি লোকাল ট্রেন থামিয়ে দেন। অতিরিক্ত লোডের কারণে রেললাইন ফেটে গেছে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মিজানুর রহমান।
নাটোরের নলডাঙ্গায় রেললাইনে ফাটল:-  কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে।
২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রেললাইন পাহারার দায়িত্ব থাকা এক আনসার সদস্য মাধনগর রেলস্টেশনের উত্তরে ২৪৪ নম্বর ব্রিজের কাছে রেল লাইনে ফাটল দেখতে পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। খবর পেয়ে রাতেই রেললাইন মেরামতের কাজ শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে পাবনার ঢালারচর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের ২টি বগির ৮টি চাকা লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে পাবনার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এই ঘটনায় হতাহত হয়নি। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাবনার কাশিনাথপুর-বাঁধেরহাট রেল স্টেশনের মাঝে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনের কাছে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেনের আঘাতে ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয় তিতাস কমিউটার ট্রেনের।
তবে এতে কোনো হতাহতের খরব পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পরেই ঢাকার সঙ্গের সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
২০২৩ সালের  এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ছয় মাসে সারাদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে   রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান। এর মধ্যে গত এপ্রিল-১২টি, মে-৭টি, জুনে-৬টি, জুলাই-৬টি, আগস্টে-১৪টি ও সেপ্টেম্বরে-৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। মেইন লাইনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অঞ্চল থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দেওয়া হয় কিন্তু প্রতিকার হয় না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বেসরকারি সংগঠন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, রেলপথের দুর্ঘটনার মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ, ট্রেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, লেভেল ক্রসিং, সিগন্যালিং ত্রুটি, লাইনচ্যুতিসহ নানা কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে লাইনচ্যুতির ৭৫ শতাংশই ঘটছে রেললাইনের কারণে। এর অন্যতম কারণ যন্ত্রাংশের সংকট, রেলপথের যন্ত্রপাতি চুরি ও রেলপথে পাথর না থাকা। পাশাপাশি রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, লোকবল ঘাটতি, নিয়মিত তদারকি ও মেরামতের অভাব, রেলপথে মানসম্মত পর্যাপ্ত পাথরের স্বল্পতা ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা।
★আট কারণে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা;- বেসরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে সারাদেশে তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি রেললাইন রয়েছে। এর মধ্যে মানসম্পন্ন রেললাইন মাত্র এক হাজার কিলোমিটার। আর আট কারণে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা।
 সিগন্যালিং ত্রুটি :- রেল দুর্ঘটনায় পড়ার অন্যতম কারণ সিগন্যাল অমান্য করা বা সিগন্যালিং ত্রুটি। কোনো কারণে যদি সিগন্যালে ত্রুটি দেখা দেয় কিংবা চালক অমান্য করেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে।
ঝুঁকিপূর্ণ রেল ক্রসিং:- রেলপথের ওপরে ক্রসিং থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও যোগাযোগের প্রয়োজনেই অনেক সময় তা করতে হয়। তবে কোনো স্থানে নতুন রেললাইন নির্মাণ করলে প্রয়োজনে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করে সেখানে গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দেশে এখনো ২ হাজার ৩১টি ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিং রয়েছে। সেসব স্থানে কোনো গেটকিপার নেই।
অতিরিক্ত বগি সংযোজন:- রেল দুর্ঘটনার অন্যতম আরও একটি কারণ হচ্ছে ক্ষমতার অতিরিক্ত বগি স্থাপন করা। যে কারণে অনেক সময় বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
রেললাইনে পাথরের স্বল্পতা:-
 নিরাপদ ট্রেন পরিচালনায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে পাথরের অপর্যাপ্ততা। পর্যাপ্ত পাথর থাকলে গতিবেগ বাড়লেও ট্রেনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যায়। তবে সম্প্রতি রেলপথে পাথরের পরিমাণ কমে এসেছে। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ঘনফুট ক্রাশড স্টোন বা চূর্ণ পাথর প্রয়োজন হলেও পাওয়া যাচ্ছে মাত্র এক লাখ ঘনফুট পাথর। আর যেসব পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোও নিম্ন মানের বলে অভিযোগ রয়েছে।
নড়বড়ে ট্র্যাক :-
দেশে রেলপথ বাড়লেও দীর্ঘদিনের পুরনো লাইনগুলো ঠিকমতো সংস্কার না করায় রেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হলেও স্লিপার, ফিশপ্লেটসহ বিভিন্ন উপকরণ নিম্নমানের ব্যবহার হওয়ায় দ্রুতগতির ট্রেন চলায় ব্যাঘাত ঘটছে।
ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু :-
 দেশে বর্তমানে রেলপথে ছোট-বড় তিন হাজার ১৪৩টি কালভার্ট ব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে ৩২৬টি বড় সেতু (৬০ ফুট বা তার বেশি) ও দুই হাজার ৮১৭টি ছোট সেতু রয়েছে। এর অধিকাংশই ব্রিটিশ আমলের। সেতুগুলো সংস্কার না করায় এরই মধ্যে ৪০২টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে মাঝে মধ্যে ব্রিজ ভেঙে, কিংবা স্লিপার না থাকায় লাইনচ্যুৎ হয়ে রেল দুর্ঘটনা হচ্ছে।
আধুনিক প্রযুক্তির অভাব:-
 রেল দুর্ঘটনা রোধে নানা প্রযুক্তি আবিষ্কার হলেও দেশে এখনো তার ব্যবহার হচ্ছে না। তবে পাশের দেশ ভারত ট্রেনের মুখোমুখি দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। দেশটির রেললাইনে দুটি ট্রেন মুখোমুখি চলে আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রযুক্তি চালু আছে।
লোকবল সংকট ঃ-
রেলে এখনো অভিজ্ঞ লোকো পাইলটের অভাব রয়েছে। এই ঘাটতির কারণে নতুন যারা আছে তাদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং না দিয়ে চালকের আসনে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিজ্ঞ চালক সংকটের কারণে অনেকক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে রেল গবেষক ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে নানা কারণে ট্রেনের দুর্ঘটনা ঘটে। প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের রেল সেই সক্ষমতা অর্জন করেনি। এ জন্য কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছাও নেই। দুর্ঘটনা রোধে রেল কর্তৃপক্ষ রেলের গতি কমানো ও উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য ক্রেনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ধরনের চিন্তা থেকে রেলকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ রেলওয়ে পুলিশ বা আনসার বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, রেলওয়ে হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের এ ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সক্রিয় করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: 24nababani@gmail.com
জনপ্রিয় সংবাদ

বটিয়াঘাটা প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটি গঠন; আহবায়ক দুলু সদস্য সচিব শাহীন

পুরনো লাইন ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু সংস্কার না হওয়ার কারণ বাড়ছে রেল দূর্ঘটনা

আপডেট সময় ০৪:১৪:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪
সারাদেশে রেলওয়ে উন্নয়নে একাধিক নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও সংস্কার হচ্ছেনা মেয়দউর্তীর্ন রেললাইন ও রেলসেতু। লক্কড় ঝক্কড় রেল ট্রাক,মেয়াদাতীর্ন রেলপাত, মেয়াদার্তীর্ন রেলের কোচ ও লোক মাস্টার( ইন্জিন), দায়সারা প্রশিক্ষন নেয়া চালক,নীতি নির্ধারক দের দূরদর্শীতার অভাব,সব মিলিয়ে রেলের হযরলব অবস্থার কারনেই রেলে দূর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
সারাদেশে প্রতিনিয়ত লাইনচ্যুতিসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা ও লাইনচ্যুতির প্রায় ৭০ শতাংশই হয় ঝুঁকিপূর্ণ লাইন ও দুর্বল সেতুর কারণে। সারাদেশে ছোট-বড় মিলে গত ৫ বছরে দুই হাজারের বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। বেসরকারি গবেষকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি না থাকায় এ সব দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। আর রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্ঘটনা রোধে রেলের অনেক বিধিবিধান রয়েছে, সেগুলো মানা হয় না বলেই বাড়ছে দুর্ঘটনা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ দূষণরোধ, যাতায়াত নিরাপত্তা, স্বল্প খরচে মালামাল পরিবহন, ভূমির পরিমিত ব্যবহার, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বোপরি নগরের সঙ্গে গ্রামের সেতুবন্ধনে রেলের গুরুত্ব অনেক। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলওয়েকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। উন্নয়ন বাজেটেও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর পরেও তেমন কোনো সুফল মিলছে না। একের পর এক স্টেশন বন্ধ, মেয়াদোত্তীর্ণ রোলিং স্টক, জরাজীর্ণ রেল কারখানা, লোকবল সংকট, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে না পারা, টিকিট পেতে ভোগান্তি, ছেঁড়া ও নোংরা আসনসহ নানা অব্যবস্থাপনা লেগেই আছে।
এছাড়া প্রচন্ড ঠান্ডা রেল পাতের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠেছে।
প্রতিদিন কোন না কোন স্থানে রেল লাইনে ফাটল বা ভেঙ্গে যাচ্ছে।এ-র ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে ট্রেন চলাচল।পাশাপাশি শঙ্কিত যাত্রীরাও।
রাজশাহীর নন্দনগাছিতে রেললাইনে ফাটলঃ-
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর নন্দনগাছি স্টেশনের অদূরে চিলাহাটি থেকে রাজশাহী গামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্টেনটি অল্পপের জন্য রক্ষা পায়।
রাজশাহীর নন্দনগাছি স্টেশনের কাছে রেললাইন ভেঙে যাওয়ায়ন ঘন্টাব্যাপি সারাদেশের সাথে রাজশাহীর রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।রেললাইন ভেঙ্গে যাওযায় সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের পাশাপাশি রাজশাহী-ঢাকা রুটের ধূমকেতু এবং যশোর- রাজশাহী রুটের কপোতাক্ষ ট্রেনও আটকা পড়ে।
চুয়াডাঙ্গায় রেললাইনে ফাটল:-
১৬ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলীতে রেললাইনে ফাটল  ফাটল দেখা দিলে স্থানীয়রা দুটি লোকাল ট্রেন থামিয়ে দেন। অতিরিক্ত লোডের কারণে রেললাইন ফেটে গেছে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মিজানুর রহমান।
নাটোরের নলডাঙ্গায় রেললাইনে ফাটল:-  কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে।
২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রেললাইন পাহারার দায়িত্ব থাকা এক আনসার সদস্য মাধনগর রেলস্টেশনের উত্তরে ২৪৪ নম্বর ব্রিজের কাছে রেল লাইনে ফাটল দেখতে পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। খবর পেয়ে রাতেই রেললাইন মেরামতের কাজ শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে পাবনার ঢালারচর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের ২টি বগির ৮টি চাকা লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে পাবনার সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এই ঘটনায় হতাহত হয়নি। সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পাবনার কাশিনাথপুর-বাঁধেরহাট রেল স্টেশনের মাঝে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনের কাছে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেনের আঘাতে ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয় তিতাস কমিউটার ট্রেনের।
তবে এতে কোনো হতাহতের খরব পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পরেই ঢাকার সঙ্গের সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
২০২৩ সালের  এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ছয় মাসে সারাদেশের প্রায় অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে   রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান। এর মধ্যে গত এপ্রিল-১২টি, মে-৭টি, জুনে-৬টি, জুলাই-৬টি, আগস্টে-১৪টি ও সেপ্টেম্বরে-৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। মেইন লাইনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অঞ্চল থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দেওয়া হয় কিন্তু প্রতিকার হয় না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বেসরকারি সংগঠন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, রেলপথের দুর্ঘটনার মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ, ট্রেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, লেভেল ক্রসিং, সিগন্যালিং ত্রুটি, লাইনচ্যুতিসহ নানা কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে লাইনচ্যুতির ৭৫ শতাংশই ঘটছে রেললাইনের কারণে। এর অন্যতম কারণ যন্ত্রাংশের সংকট, রেলপথের যন্ত্রপাতি চুরি ও রেলপথে পাথর না থাকা। পাশাপাশি রেলওয়ের সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, লোকবল ঘাটতি, নিয়মিত তদারকি ও মেরামতের অভাব, রেলপথে মানসম্মত পর্যাপ্ত পাথরের স্বল্পতা ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা।
★আট কারণে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা;- বেসরকারি তথ্যমতে, বর্তমানে সারাদেশে তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি রেললাইন রয়েছে। এর মধ্যে মানসম্পন্ন রেললাইন মাত্র এক হাজার কিলোমিটার। আর আট কারণে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা।
 সিগন্যালিং ত্রুটি :- রেল দুর্ঘটনায় পড়ার অন্যতম কারণ সিগন্যাল অমান্য করা বা সিগন্যালিং ত্রুটি। কোনো কারণে যদি সিগন্যালে ত্রুটি দেখা দেয় কিংবা চালক অমান্য করেন তাহলে অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে।
ঝুঁকিপূর্ণ রেল ক্রসিং:- রেলপথের ওপরে ক্রসিং থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও যোগাযোগের প্রয়োজনেই অনেক সময় তা করতে হয়। তবে কোনো স্থানে নতুন রেললাইন নির্মাণ করলে প্রয়োজনে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করে সেখানে গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দেশে এখনো ২ হাজার ৩১টি ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিং রয়েছে। সেসব স্থানে কোনো গেটকিপার নেই।
অতিরিক্ত বগি সংযোজন:- রেল দুর্ঘটনার অন্যতম আরও একটি কারণ হচ্ছে ক্ষমতার অতিরিক্ত বগি স্থাপন করা। যে কারণে অনেক সময় বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
রেললাইনে পাথরের স্বল্পতা:-
 নিরাপদ ট্রেন পরিচালনায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে পাথরের অপর্যাপ্ততা। পর্যাপ্ত পাথর থাকলে গতিবেগ বাড়লেও ট্রেনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে যায়। তবে সম্প্রতি রেলপথে পাথরের পরিমাণ কমে এসেছে। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ঘনফুট ক্রাশড স্টোন বা চূর্ণ পাথর প্রয়োজন হলেও পাওয়া যাচ্ছে মাত্র এক লাখ ঘনফুট পাথর। আর যেসব পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোও নিম্ন মানের বলে অভিযোগ রয়েছে।
নড়বড়ে ট্র্যাক :-
দেশে রেলপথ বাড়লেও দীর্ঘদিনের পুরনো লাইনগুলো ঠিকমতো সংস্কার না করায় রেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হলেও স্লিপার, ফিশপ্লেটসহ বিভিন্ন উপকরণ নিম্নমানের ব্যবহার হওয়ায় দ্রুতগতির ট্রেন চলায় ব্যাঘাত ঘটছে।
ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু :-
 দেশে বর্তমানে রেলপথে ছোট-বড় তিন হাজার ১৪৩টি কালভার্ট ব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে ৩২৬টি বড় সেতু (৬০ ফুট বা তার বেশি) ও দুই হাজার ৮১৭টি ছোট সেতু রয়েছে। এর অধিকাংশই ব্রিটিশ আমলের। সেতুগুলো সংস্কার না করায় এরই মধ্যে ৪০২টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে মাঝে মধ্যে ব্রিজ ভেঙে, কিংবা স্লিপার না থাকায় লাইনচ্যুৎ হয়ে রেল দুর্ঘটনা হচ্ছে।
আধুনিক প্রযুক্তির অভাব:-
 রেল দুর্ঘটনা রোধে নানা প্রযুক্তি আবিষ্কার হলেও দেশে এখনো তার ব্যবহার হচ্ছে না। তবে পাশের দেশ ভারত ট্রেনের মুখোমুখি দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। দেশটির রেললাইনে দুটি ট্রেন মুখোমুখি চলে আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রযুক্তি চালু আছে।
লোকবল সংকট ঃ-
রেলে এখনো অভিজ্ঞ লোকো পাইলটের অভাব রয়েছে। এই ঘাটতির কারণে নতুন যারা আছে তাদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং না দিয়ে চালকের আসনে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিজ্ঞ চালক সংকটের কারণে অনেকক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে রেল গবেষক ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে নানা কারণে ট্রেনের দুর্ঘটনা ঘটে। প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের রেল সেই সক্ষমতা অর্জন করেনি। এ জন্য কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছাও নেই। দুর্ঘটনা রোধে রেল কর্তৃপক্ষ রেলের গতি কমানো ও উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য ক্রেনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ধরনের চিন্তা থেকে রেলকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ রেলওয়ে পুলিশ বা আনসার বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, রেলওয়ে হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের এ ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সক্রিয় করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।