প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ৯:৫০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১৪, ২০২২, ৮:১২ পি.এম
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা, যৌতুক, চোরাচালান, সন্ত্রাস ও নাশকতা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় উপজেলা পরিষদ অডিটারিয়ামে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জানে আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মালেক, ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া খাতুন মিলি।বক্তব্য প্রদান করেন, দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বেলাল উদ্দিন সোহেল, পাকড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জালাল উদ্দিন, রাজশাহী জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ শাহাদুল হক, উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আশোক কুমার চৌধুরী, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক কলামিষ্ট মোঃ হায়দার আলী, জেলা পরিষদ সদস্য কৃষ্ণা দেবীসহ জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, দপ্তরের প্রধানগণ সুধিজন উপস্থিত ছিলেন।
বক্তরা বলেন, বিভিন্ন দপ্তরের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরাও চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, এরা খুবই শক্তিশালি, মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশ, বিজিপি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত সদস্যরা এখন বীর দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এরা কার সাহসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ? আপনারা জনগনের উপর দোষ দিয়ে আপনারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাবে না। সীমান্ত এলাকায় কাঁটা তারের বেড়া থাকা শর্তেও হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য আসে কি করে। আপনারা আরও মাদকের বিরুদ্ধে আন্তরিক হলে কোন মাদকদ্রব্য দেশে আসবে না। দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক আসে বিজিবি সদ্স্যরা সর্তক দৃষ্টি রাখলে কোন মাদক আসবে না। বড় বড় চালান আসবে না। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকদের একযোগে কাজ করতে হবে। আমার ইউনিয়নের বিজয় নগর, রাজাবাড়ী, চাপাল, জুট মিলের পরিত্যক্ত ভবণে ব্যপকভাবে মাদক বিক্রি হচ্ছে। আমিও আপনার সহযৌগিতা করবো মাদকের বিরুদ্ধে। পুলিশি টহল জোরদার করার অনুরোধ জানান।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিজিবি, পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করছে। ওসি সাহেব বললেন, আমি ২ বছরের জন্য এসেছি মাদক ধরা আমার কাজ নয়। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের কাজ। পুলিশকেও মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। পুলিশ, বিজিবি মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করলেও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর তেমনভাবে কাজ করে না। সাংবাদিক তোতা বললেন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, রাজশাহীর সদস্যরা গোদাগাড়ীতে এসে মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ীতে টোল/চাঁদা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তারা এসভায় থাকেন না। ট্রাফিককে সভার সদস্য করতে হবে, ফিরোজচত্তর এলাকা যততত্র বিভিন্ন যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে এগুলি পরিস্কার করতে হবে।
এসময় ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, কোন পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা থাকে প্রমান করতে পারেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। থানায় আসতে দালাল লাগবে না। শ্রমিক, ভ্যানচালকসহ যে কেউ আসতে পারেন, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কোন মাদক ব্যবসায়ী, শিশু নির্যাতন, কোন আপরাধ করে পার পাবে না। সুলতানগঞ্জ থেকে রাজশাহী পর্যন্ত মাদক কারবার চলে। মাদক ধরা পুলিশের কাজ নয়। তার পরেও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছে। সোর্স হেরোইনসহ মাদকদ্রব্য ধরালে তাকে টাকা দিনে হয় এ টাকা কোথায় পাবে। একজন ইনফরমার এক কেজি হোরোইন ধরালে তিন ভাগের ১ ভাগ দাবী করে, ১ এক কেজি হেরোইনের মূল্য ৩০ লাখ টাকা, সোর্সকে দিতে হবে ৫ লাখ টাকা। এটা কোথায় পাব। তিন ভাগ হেরোইন দিলে ধরে লাভ কি। আমরা এখানে চাকুরী করার জন্য এসেছি, এখানে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, মাদক ব্যবসা কমে আসবে। ক্রিকেট জুয়াড়ি, বাল্যবিয়ে, মাদক ব্যবসায়ীদের কোনভাবে ছাড় দেয়া হবে না।
চর আষাড়িয়াদহ ইউপি চেয়ার ম্যান মোঃ আশরাফুল হক বলেন, আমার ইউপি এলাকায় হেরোইন, ইয়াবা, ইদানিং গাঁজা, মাদক ব্যপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।
শ্রী কৃষ্ণ কুমার সরকার বলেন, বিদিরপুর ক্লাব, প্রেমতলী, নিমতোলা, রাজাবড়ি, পিরিজপুর, আলিমগজ্ঞ, গোপালপুর প্রভূতি স্থানে মাদকের হাট বসে। এরা খুব শক্তিশালি তাই এদের বিরুদ্ধে তথ্য দিতে ভয় পায়। মাদক আসে সীমান্ত দিয়ে, বিজিপি সজাগ থাকলে ৯০ ভাগ মাদক আসা বন্ধ হয়ে যাবে। মাদক ব্যবসা কমে যাবে। আমি আপনাদের সহযোগিতা করবেন। গোদাগাড়ীর গোগ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত সংঘর্ষের মামলা হয়েছে, আসামিরা বাড়ীতে ঘুমাবে না এটা স্বাভাব।
উপজেলার বসুদেবপুর, মাদারপুর, গোপালপুর, মিষ্টির দোকানের সামনে হিরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিলের কারবার চলে এছাড়া রাজাবাড়ী, প্রেমতলী হাসপাতাল এলাকা, রেলবাজার মনির হোটেল, কসাইপাড়া, মহিশালবাড়ী গরুরহাট, সুলতানগজ্ঞ, ফিরোজচত্তর, সুলতানগজ্ঞ, বাসুদেবপুর, পিরিজপুর, কুমুরপুর, মাদারপুর, শিবসাগর প্রভূতি এলাকায় অবাদে হোরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্নধরের মাদকসেবন, বেচাবিক্রিসহ ছোটবড় অপরাধ হয়। ওই স্থানে অভিযান ও মোবাইল কোর্টসহ মাদকব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।
অন্যান্য বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে আরো বলেন, গোদাগাড়ীর আইনশৃঙ্খলা ভালই আছে, তবে আরও ভাল রাখার জন্য উপজেলার পুলিশ, বিজিপি, সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনেক সচেতন হতে হবে। গোদাগাড়ীর একটাই বদনাম মাদক, হিরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল,গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক ব্যবসায়ী গডফাদার এখানে রয়েছে। গোদাগাড়ীতে পুলিশের তালিকাভুক্ত ১৭৩ জন মাদকব্যসায়ী রযেছে। তাদেরকে গ্রেফতার করলে মাদক ব্যবসা কমে আসে।মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ী সাইনবোর্ড লিখে ঝুলাতে হবে। এছাড়া কামালা মাঝি, শ্রমিক, ভান চালকসহ যারা শূন্য থেকে শত শত কোটি টাকার সম্পাদকের তদন্ত করে তাদের সম্পদ সরকারী কোষাগারে জমা করার ব্যপারে আলোচনা করা হয়।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন তাই কোনভাবে মাদকব্যবসায়ীরা যেন কোনভাবে পার পেতে না পারেন সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে শক্ত মামলা, চার্জসীট প্রদান করতে হবে।