গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সম্ভাবনার হাতছানি দেওয়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা দুরন্ত বাংলাদেশ।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যক্লিষ্ট, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার সময় আমি এবং আমার ছোটবোন বিদেশে ছিলাম। সে কারণে আমরা প্রাণে বেঁচে যাই। দীর্ঘ ৬ বছর আমরা রিফিউজি হিসেবে প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হই। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জনগণের সমর্থন নিয়ে আমি দেশে ফিরে আসি। অবৈধভাবে ক্ষমতাসীন সরকার, জাতির পিতার হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারী এবং যুদ্ধাপরাধীদের সব রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করেই আমি দেশে ফিরে আসি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন থেকে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই- এই ৫ বছর পূর্ণ করে ২৬ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা ধান ও দানাদার শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রবর্তন এবং বর্গাচাষিদের বিনা জামানতে কৃষি ঋণ প্রদান করি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং নানা চক্রান্তের ফসল হিসেবে বিএনপি-জামায়াত-জোট ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করে। এরপরেই দেশে বিপর্যয় নেমে আসে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা এবং ৫০০’র বেশি মানুষকে আহত করে।
আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে ১১টি বিষয়। এর মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াযাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে। দৃশ্যমান অবকাঠামো বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানোর দিকে মনোযোগ দেবে সরকার। ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। এ ছাড়াও নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ, সর্বজনীন পেনশন, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা বৃদ্ধি করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ইশতেহারে। গুরুত্ব পাবে সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিন বদলের সনদ’। এরপর ২০১৪ সালে ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির ইশতেহারে স্লোগান ছিল, ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। আর ২০২৪ সালে দলটির নির্বাচনী স্লোগান হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’।