প্রকৃতির রংধনুর মাধুর্যে ভরা সিলেট জাফলং এর পিয়াইন নদী। প্রাণবন্ত এই নদী বইছে সিলেটের উত্তর সীমান্ত ঘেসে। বহতা পিয়ানের স্বচ্ছ জলে নৌকা ভাসিয়ে পর্যটকরা উপভোগ করে দারুন নৌবিহার। কর্মব্যস্ত এ নদী জুরে দুচোখ মিলে দেখার মতো আছে অনেক কিছু । বৈশিষ্ট্য আর বৈচিত্রে পিয়াইনকে মিলানো যায় না অন্য আর দশটা নদীর সাথে । অন্যদিকে তাই পর্যটকদের আনাগোনায় জমে উঠেছে এ নদী। পর্যটক কেন্দ্রে প্রিয় মুহূর্তগুলো স্মৃতিপটে বন্দি করার মত দারুন দৃশ্য। এবং বনভোজন প্রিয়জনদের জন্য নদীপাড়ে পিকনিক স্পটও আছে। কি ছোট কি বড় নদীর কাকচক্ষু জল উৎসাহিত আনে সবার মনে । নদীর ওপারে পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের ডাওকি শহর । খালি চোখে দেখা যায় ওপারের ঘরবাড়ি ও শহরের অবকাঠামো। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসা ৫৮ টি নদীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পিয়াইন। আন্তর্জাতিক নদী বলে সীমান্ত রেখা মালিকানায় আধা- আধি । ওপারে ওরা ভারত জনগোষ্ঠী, এপারে আমরা বাংলাদেশী । পিয়াইন নদীর উৎপত্তি পার্বত্য আসামের উমগট নদী থেকে। পাহাড়ি নদীতে জলের গভীরতা কম থাকে। পিয়াইনের বুকে তাই নৌকা আটকে যায় কোথাও কোথাও । শুকনো মৌসুমে জলের অভাব থাকলেও ভরা মৌসুমে ভরাট এ নদী জলের তোড়ে হয় দারুন দূরত্ব । নদীর দেখাদেখি পিয়াইন পাড়ের ছোট শিশুরাও খেলাধুলায় মগ্ন থাকে। পিয়াইন নদীর এখন তিনটি ধারা পুরনো পিয়াইন, পবিত্র ডালা,ও নয়া ডালা । তুলনামূলকভাবে বেশি পানি নিয়ে আছে নয়া ডালা । এখন মূল ধারা নয়া কে স্থানীয় বলে নয়া গাঙ। বর্ষার পাহাড়ি ঢলে পুরনো পিয়াইন ও পবিত্র ডালার পানি থাকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য। খরা মৌসুমে দুপাড়ে জেগে থাকে পলির সঞ্চয়। জাফলংয়ের পিয়াইন নদী পাড়ে মোট ৫টি পঞ্জি আছে খাসিয়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর । ঐতিহ্যের পরম্পরায় খাসিয়ারা সাধারণত বসবাস করে পাহাড়ি নদীর ধারে। জাফলং থেকে ছাতক পর্যন্ত পিয়াইনের মোট ২২টি বাক। নদীর প্রতিটি বাঁকে জীবন ও জীবিকার প্রাণবন্ত আয়োজন। দিনের আলো ফুরিয়ে গোধূলি ধারায় প্রকৃতি যেন মাধুরী ছড়াচ্ছে নদীর বুকে। রূপ লাবণ্য আর ঐতিহ্যে ভরা প্রাণের এই ধারা নদী সিলেট জাফলংয়ের প্রাণকেন্দ্র।