একটি দুটি নয় সাত সাতটি বউ নিয়ে সংসার করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন লিবিয়া ফেরত রবিজুল হক। এর মধ্যে গত তিন মাসেই তিনটি বিয়ে করেছেন তিনি। আলোচিত রবিজুলের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি মিয়াপাড়ায়।
রাষ্ট্রীয় আইন এবং ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একসঙ্গে ৭ বউ নিয়ে সংসার করার সুযোগ না থাকলেও সবাইকে নিয়ে সুখে আছে পরিবারটি -এ কারণে এলাকার মানুষ বিষয়টিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেন।
৩৮ বছর বয়সী রবিজুল হকের দাবি, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় তার মা ছেলেকে সাতটি বিয়ে দেয়ার মানত করেছিলেন। মায়ের সেই মানত রক্ষা রক্ষা করতেই তিনি ৭-৭ টি বিয়ে করেছেন।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান রবিজুল হক। তার বাবার নাম আয়নাল হক। রবিজুল জানান মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বালুচর গ্রামের কিশোরী রুবিনা খাতুনকে। বিয়ের দু’বছরের মাথায় এই কিশোর-কিশোরী দম্পতির এক পুত্র সন্তান হয়। পরে বউ ও সন্তান বাড়ি রেখে লিবিয়া পাড়ি জমান রবিজুল হক। সেখানে টাইলসের কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন রবিজুল। পরে লিবিয়াতে পরিচয় হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যুবতী হেলেনা খাতুনের সঙ্গে।
পরে তারা দুজন সম্পর্কে জড়ান এবং একপর্যায়ে তাদের বিয়ে হয়। তাৎক্ষণিক প্রথম স্ত্রী কে বিষয়টি না জানালেও পরে জানার পর তিনি এই বিয়ে মেনে নেন। এরপর প্রথম স্ত্রী রুবিনাকেউ লিবিয়া নিয়ে যান রবিজুল। সেখানে দুই স্ত্রী এবং সন্তান নিয়ে ১২ বছর বাস করেন রবিজুল হক। এরপর দেশে ফিরে বাপের ভিটায় দুতলা বাড়ি বানান।
এর কিছু দিন বাদেই তার মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুবতী নুরুন্নাহারের সাথে। পরে নুরুন্নাহারকে বিয়ে করেন রবিজুল। তবে নুরুন্নাহারের অভিযোগ সম্পর্কের শুরুতে তিনি জানতেন রবিজুলের একজন স্ত্রী আছে। রবিজুলের দাবি মায়ের মানত রক্ষায় ধারাবাহিকভাবে তিনি চতুর্থ বিয়ে করেন গত বছর। তার চতুর্থ স্ত্রীর নাম স্বপ্না খাতুন, বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে। এরপর গত তিন মাসে পরপর তিনটি বিয়ে করেছেন রবিজুল।
তার পঞ্চম স্ত্রীর নাম বানু খাতুন, বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার ডম্বলপুর গ্রামে। আর মাসখানেক আগে বিয়ে করা সপ্তম স্ত্রী মিতা খাতুনের বাড়ি সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে। দুতলা বাড়ির সাতটি কক্ষে বসবাস করেন সাত স্ত্রী। প্রত্যেক স্ত্রীর শয়নকক্ষ তিনি আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছেন একইভাবে।
কক্ষগুলো ঘুরে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে একটি করে খাট, ওয়ারড্রব, ড্রেসিং টেবিল, শোকেস, এলইডি টেলিভিশন ও ফ্রীজসহ অন্যান্য আসবাব।
রবিজুল হক জানান, তিনি সাত জন নারীকে বিয়ে করলেও কারো সাথে বৈষম্য করেন না। সব স্ত্রীর ঘরে আলাদা আলাদা রান্না হয়। বাজার থেকে সদাই কিনে এনে তিনি প্রত্যেক স্ত্রীকে সমানভাগে ভাগ করে দেন। তবে রবিজুলের ৬ জন স্ত্রী নিজেদের সুখী মনে করলেও। প্রথম স্ত্রী রুবিনা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি বলে তার সাথে কথা বলে জানা যায়।
তবে তার অন্য সতীনরা জানান তারা সবাই মিলে বোনের মতো একসাথে হইহই করে সংসার করছেন। স্বামী হিসেবে তাদের কোন চাহিদাই অপূর্ণ রাখেন না রবিজুল। বর্তমানে প্রথম স্ত্রীর ঘরে রবিজুলের দুই ছেলে, দ্বিতীয় স্ত্রীর এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং তৃতীয় স্ত্রীর ঘরে জন্ম নিয়েছে এক কন্যা সন্তান।
বড় স্ত্রীর ছেলের বর্তমান বয়স ২৩ বছর, তিনি ইতালি প্রবাসী। রবিউলের এই বড় ছেলে বিবাহিত এবং ছেলের বউ বর্তমানে সন্তান সম্ভবা। রবিজুলের মা এক বছর হলো মারা গেছেন। বাবা আয়নাল হক ছেলের সংসারে আছেন।
আয়নাল হক জানান, ছেলে এতগুলো বিয়ে করেছে এটি নিয়ে তার কিছু বলার নেই। তবে মানত রক্ষার কারণে রবিউল সাতটি বিয়ে করেছেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে আয়নাল হক বলেন, তার এ ব্যাপারে কিছু জানা নেই। তবে ছেলের সাত বউ বৃদ্ধ আয়নাল হকের যত্ন নিন বলে তিনি জানান।
রবিজুলের প্রতিবেশী কারী মাহমুদ উজ্জ্বল জানান, ধর্মীয় দিক দিয়ে সাত বউ নিয়ে সংসার করার সুযোগ না থাকলেও রবিউল সবাইকে নিয়ে সুখে সংসার করছেন এই কারণে এলাকার মানুষ এসব বিষয়ে কোন প্রশ্ন তোলেন না।