Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
মন্ত্রিসভায় যারা সফল
ঢাকা ০৮:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মন্ত্রিসভায় যারা সফল

তারা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর খুব বেশ দেরি নেই। যে কোনো দিন ঘোষণা হতে পারে তপশিল। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচনকালীন সরকারে শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে তারা পরবর্তী মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য দিন গুনতে থাকবেন। তবে বর্তমান মন্ত্রিসভার যেসব সদস্যের আমলনামা ভালো, তাদের কেউ কেউ হয়তো পরবর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। তাই গত প্রায় পাঁচ বছরে কোন মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেমন চালিয়েছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য রয়েছে সরকারপ্রধানের কাছেও।

সরকারে উচ্চপর্যায়ের এক সূত্রমতে, ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও অন্তত এক ডজন মন্ত্রী গত পাঁচ বছরে সুনাম কুড়িয়েছেন। তারা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েও সুবিচার করতে না পারায় অনেকে হয়েছেন সমালোচিত। সফল ও ব্যর্থ এসব মন্ত্রীদের আমলনামা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও করোনা মহামারির মতো অভিঘাত সত্ত্বেও বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দায়িত্ব পালনে সাধারণ মানুষ ও সরকারের উচ্চমহলের সুনজর কেড়েছেন।

প্রায় ১৫ বছর সরকারপ্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একটানা দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময়ের মধ্যে যখনই নতুন সরকার গঠন করেছেন, তখন তিনি তার সহযাত্রীদের পরিবর্তন করেছেন। তবে সরকার গঠনের পর বিশেষ বড় ধরনের কারণ ছাড়া মন্ত্রিসভা থেকে কাউকে বাদ দেননি। যদিও মন্ত্রণালয়ে অনুপস্থিত, কাজের ধীর গতি ও এডিপি বাস্তবায়নে আশানুরূপ ফল অর্জন করতে না পারা মন্ত্রীর সংখ্যা কম নয়।

জানা গেছে, সব্যসাচীর ন্যায় দল ও মন্ত্রণালয় চালিয়ে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা আন্দোলন করবে জানা সত্ত্বেও তা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের মতো দেশের প্রাচীন সংগঠনের তৃতীয়বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। আন্দোলন মোকাবিলায় সারা দেশে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপিসহ মাঠের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে কোণঠাসা করার মূল কারিগরও তিনি। তার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই সম্পন্ন হয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প, যা বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশব্যাপী এক দিনে একশ সড়ক এবং দেড়শ সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মাধ্যমে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। মহামারির সময় যখন সবাই ভীতসন্ত্রস্ত-তখনো মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ নিয়মিত তত্ত্বাবধান করে গেছেন তিনি।

অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক রাজনীতিতে যেমন সরব তেমনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বেশ দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা না রাখা নীতি বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এতে দেশে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার প্রভাব মোকাবিলায় কৃষিতে প্রণোদনার দেওয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র সংশোধন ও আগামী নির্বাচনে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রী হচ্ছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। জাতীয় যে কোনো সংকট মোকাবিলা করেছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে। তিনি প্রথম দফায় দেড় বছর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করায় পরবর্তী সময়ে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। একাদশ জাতীয় সংসদেও তাকে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সদালাপী এই মন্ত্রী জঙ্গি দমনসহ সীমান্তে সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করার কারণে এখন পর্যন্ত তিনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে রয়েছেন। প্রচারবিমুখ এই মন্ত্রীর দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে রয়েছেন।

সরকারের অন্যতম মুখপাত্র তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। রাজনীতিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কড়া জবাব যেমন দিয়েছেন, তেমনি মন্ত্রণালয় সামলাতেও সিদ্ধহস্ত তিনি। মন্ত্রণালয়ের নাম পাল্টে তিনি পুরোনো তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে নিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান গণমাধ্যমের উৎকর্ষ সাধনে রেখেছেন ভূমিকা। করোনাকালে গুজব প্রতিরোধ করেছেন বেশ দক্ষতার সঙ্গে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সম্মেলন ছাড়াও দলের সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিদেশি টিভি চ্যানেলে অনুমতি ছাড়া বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ করা, কেবল নেটওয়ার্কের পূর্ণ ডিজিটালে রূপায়ণ, টিভি চ্যানেলগুলোর ক্রম ঠিক করার মাধ্যমে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং অবৈধ ডিশ টিভির দৌরাত্ম্য বন্ধ করেছেন তিনি। সম্প্রচার আইন ও গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রণয়নের কাজ চলমান হলেও উদ্যোগটি বেশ প্রশংসনীয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সরকারের সাফল্যের রূপকার হলেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তার সময়ে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়।

নদী তীর দখলমুক্ত করা মাধ্যমে আলোচনায় আসেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথে নৌযান চলাচলের উপযোগী করার কাজও এগিয়ে নিয়েছেন অনেকটা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ, সমুদ্র পরিবহন ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, সমুদ্র বন্দরগুলোর আধুনিকায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শাহরিয়ার আলম। সফল এই ব্যবসায়ী কূটনীতিতেও বেশ পারদর্শী। বিশেষ করে-বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদারে কাজ করে চলেছেন তিনি। যখনই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের অতিকথনের কারণে সমালোচিত হয়েছেন, তখন নেপথ্যে থেকে শাহরিয়ার আলম সরকারের কূটনীতি সামলেছেন। গুছিয়ে কথা বলার কারণে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তিনি বেশ সমাদৃত। সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর ইস্যুতে গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট সংযমী।

সুরক্ষা অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের টিকা নিবন্ধন এবং গ্রহণ প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার পুরো কৃতিত্ব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ৯ হাজার ৩৯৭টি ডিজিটাল সেন্টারের ১৭ হাজার ৮০০-এর অধিক নারী-পুরুষ উদ্যোক্তা ৩৮৫টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি সেবা নাগরিককে সহজে, দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন। প্রতিমাসে ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৭৫ লাখেরও বেশি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ইনফো সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার জন্যেও তিনি প্রশংসিত।

বন্যা ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শতবর্ষী ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে নদীভাঙন এক-তৃতীয়াংশ কমে এসেছে।

নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার পর থেকে একটি মহলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নোট-গাইড ও কোচিং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় সুশীল সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক।

আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: 24nababani@gmail.com
জনপ্রিয় সংবাদ

বটিয়াঘাটা প্রেসক্লাবের আহবায়ক কমিটি গঠন; আহবায়ক দুলু সদস্য সচিব শাহীন

মন্ত্রিসভায় যারা সফল

আপডেট সময় ০৪:৫৩:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর খুব বেশ দেরি নেই। যে কোনো দিন ঘোষণা হতে পারে তপশিল। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচনকালীন সরকারে শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে তারা পরবর্তী মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য দিন গুনতে থাকবেন। তবে বর্তমান মন্ত্রিসভার যেসব সদস্যের আমলনামা ভালো, তাদের কেউ কেউ হয়তো পরবর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। তাই গত প্রায় পাঁচ বছরে কোন মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেমন চালিয়েছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য রয়েছে সরকারপ্রধানের কাছেও।

সরকারে উচ্চপর্যায়ের এক সূত্রমতে, ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও অন্তত এক ডজন মন্ত্রী গত পাঁচ বছরে সুনাম কুড়িয়েছেন। তারা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েও সুবিচার করতে না পারায় অনেকে হয়েছেন সমালোচিত। সফল ও ব্যর্থ এসব মন্ত্রীদের আমলনামা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে রয়েছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও করোনা মহামারির মতো অভিঘাত সত্ত্বেও বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দায়িত্ব পালনে সাধারণ মানুষ ও সরকারের উচ্চমহলের সুনজর কেড়েছেন।

প্রায় ১৫ বছর সরকারপ্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একটানা দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময়ের মধ্যে যখনই নতুন সরকার গঠন করেছেন, তখন তিনি তার সহযাত্রীদের পরিবর্তন করেছেন। তবে সরকার গঠনের পর বিশেষ বড় ধরনের কারণ ছাড়া মন্ত্রিসভা থেকে কাউকে বাদ দেননি। যদিও মন্ত্রণালয়ে অনুপস্থিত, কাজের ধীর গতি ও এডিপি বাস্তবায়নে আশানুরূপ ফল অর্জন করতে না পারা মন্ত্রীর সংখ্যা কম নয়।

জানা গেছে, সব্যসাচীর ন্যায় দল ও মন্ত্রণালয় চালিয়ে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা আন্দোলন করবে জানা সত্ত্বেও তা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের মতো দেশের প্রাচীন সংগঠনের তৃতীয়বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। আন্দোলন মোকাবিলায় সারা দেশে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপিসহ মাঠের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে কোণঠাসা করার মূল কারিগরও তিনি। তার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই সম্পন্ন হয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প, যা বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশব্যাপী এক দিনে একশ সড়ক এবং দেড়শ সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মাধ্যমে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। মহামারির সময় যখন সবাই ভীতসন্ত্রস্ত-তখনো মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ নিয়মিত তত্ত্বাবধান করে গেছেন তিনি।

অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক রাজনীতিতে যেমন সরব তেমনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বেশ দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা না রাখা নীতি বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এতে দেশে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার প্রভাব মোকাবিলায় কৃষিতে প্রণোদনার দেওয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র সংশোধন ও আগামী নির্বাচনে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রী হচ্ছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। জাতীয় যে কোনো সংকট মোকাবিলা করেছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে। তিনি প্রথম দফায় দেড় বছর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করায় পরবর্তী সময়ে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। একাদশ জাতীয় সংসদেও তাকে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সদালাপী এই মন্ত্রী জঙ্গি দমনসহ সীমান্তে সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করার কারণে এখন পর্যন্ত তিনি বিতর্কের ঊর্ধ্বে রয়েছেন। প্রচারবিমুখ এই মন্ত্রীর দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে রয়েছেন।

সরকারের অন্যতম মুখপাত্র তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। রাজনীতিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের কড়া জবাব যেমন দিয়েছেন, তেমনি মন্ত্রণালয় সামলাতেও সিদ্ধহস্ত তিনি। মন্ত্রণালয়ের নাম পাল্টে তিনি পুরোনো তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে নিয়েছেন। ক্রমবর্ধমান গণমাধ্যমের উৎকর্ষ সাধনে রেখেছেন ভূমিকা। করোনাকালে গুজব প্রতিরোধ করেছেন বেশ দক্ষতার সঙ্গে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সম্মেলন ছাড়াও দলের সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রেখে চলেছেন। বিদেশি টিভি চ্যানেলে অনুমতি ছাড়া বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ করা, কেবল নেটওয়ার্কের পূর্ণ ডিজিটালে রূপায়ণ, টিভি চ্যানেলগুলোর ক্রম ঠিক করার মাধ্যমে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং অবৈধ ডিশ টিভির দৌরাত্ম্য বন্ধ করেছেন তিনি। সম্প্রচার আইন ও গণমাধ্যমকর্মী আইন প্রণয়নের কাজ চলমান হলেও উদ্যোগটি বেশ প্রশংসনীয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সরকারের সাফল্যের রূপকার হলেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তার সময়ে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়।

নদী তীর দখলমুক্ত করা মাধ্যমে আলোচনায় আসেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথে নৌযান চলাচলের উপযোগী করার কাজও এগিয়ে নিয়েছেন অনেকটা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ, সমুদ্র পরিবহন ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, সমুদ্র বন্দরগুলোর আধুনিকায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি।

২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শাহরিয়ার আলম। সফল এই ব্যবসায়ী কূটনীতিতেও বেশ পারদর্শী। বিশেষ করে-বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদারে কাজ করে চলেছেন তিনি। যখনই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের অতিকথনের কারণে সমালোচিত হয়েছেন, তখন নেপথ্যে থেকে শাহরিয়ার আলম সরকারের কূটনীতি সামলেছেন। গুছিয়ে কথা বলার কারণে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তিনি বেশ সমাদৃত। সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর ইস্যুতে গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট সংযমী।

সুরক্ষা অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের টিকা নিবন্ধন এবং গ্রহণ প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার পুরো কৃতিত্ব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ৯ হাজার ৩৯৭টি ডিজিটাল সেন্টারের ১৭ হাজার ৮০০-এর অধিক নারী-পুরুষ উদ্যোক্তা ৩৮৫টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি সেবা নাগরিককে সহজে, দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন। প্রতিমাসে ডিজিটাল সেন্টার থেকে ৭৫ লাখেরও বেশি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ইনফো সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার জন্যেও তিনি প্রশংসিত।

বন্যা ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শতবর্ষী ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে নদীভাঙন এক-তৃতীয়াংশ কমে এসেছে।

নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার পর থেকে একটি মহলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নোট-গাইড ও কোচিং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় সুশীল সমাজ, শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক।