লন্ডনে বসবাসকারী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আরে বেটা সাহস থাকলে বাংলাদেশে ফিরা আয়, আমরা তোকে দেখি।’
রোববার (১২ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নরসিংদীর মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া এখন জেলে। আমি দয়া করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নেতা কই? তাদের কথা মানুষ শোনে না। বিএনপি হত্যাকারী। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী। খালেদার ছেলে খুনি তারেক জিয়া। গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানকে হত্যা করেছে। এত টাকা কোথায় পায়? অস্ত্র চোরাচালানি করে। মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। পালিয়ে থাকে লন্ডনে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক রহমান রাজনীতি করবে না মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে গিয়েছিল। জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে সেখানে থাকছে। পালিয়ে থাকে লন্ডনে, আর সেখানে বসে দেশে আগুন জ্বালাতে বলে। আরে ব্যাটা তোর যদি সাহস থাকে, তাহলে বাংলাদেশে ফিইর্যা আয়, আমরা একটু দেখি।’
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চোরাগোপ্তা হামলা করে সরকার হটানো যায় না। মানুষ যদি সঙ্গে না থাকে তবে আন্দোলন হয় না। বিএনপি একটি সন্ত্রসী দল, আর জামায়াত হলো যুদ্ধাপরাধী দল। তাদের কথা এ দেশের মানুষ শোনে না। তাদের কিছু লোক আছে তারাই নাচানাচি করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ করে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কি হাসপাতালে আক্রমণ করে? তারেক জিয়ার চামচারা এসব হামলা করছে বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।
দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক বিএনপির নেতাকর্মীরা তা চায় না বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এগিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি অবরোধের নামে আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে পড়াশোনা বিঘ্নিত করছে। তারেক এবং খালেদা জিয়া লেখাপড়ায় আগ্রহী নয় বলেই নিজেরা পড়াশোনা করেনি। তাই বছর শেষে বাচ্চাদের পরীক্ষার সময় অবরোধ দিচ্ছে আর করবেই বা না কেন, খালেদা জিয়া মেট্রিক ফেল আর তারেক জিয়া তিন স্কুল থেকে বহিষ্কার হয়েছে।
এ সময় তিনি শিক্ষার উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা প্রি প্রাইমারি শুরু করেছি। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন করেছি, কওমি মাদ্রাসার উন্নয়ন করেছি। কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিয়েছি। প্রযুক্তির শিক্ষা আমরা নিশ্চিত করেছি। আমরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছি।
এ সময় বাসে আগুন দিয়ে যারা মানুষ পোড়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি বাসে আগুন দিতে যায় তাকে ধরে সেই আগুনে ফেলে দেবেন। সে বুঝুক আগুনের কত জ্বালা।
এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম পরিবেশবান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে এই কারখানার উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী সার কারখানা স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেন। এর আগে বেলা ১২টার কিছু আগে এখানে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে স্বাগত জানানো হয়।
নরসিংদীর পলাশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন। জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব এই কারখানায় বছরে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। দিনে উৎপাদন হবে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের অক্টোবরে কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হলে প্রকল্পের অবকাঠামোর কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। পরে একই বছরের ১৬ আগস্ট পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হয়।
১১০ একর জমির ওপর নির্মিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ২১ লাখ টাকা আর জাপান ও চীনের ঠিকাদারদের যৌথ কনসোর্টিয়াম ব্যাংক অব টোকিও-মিৎসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড ও দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেড ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকার ঋণ দেয়।