Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
সব সংশয় কাটিয়ে ভোটের পথে ইসি
ঢাকা ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সব সংশয় কাটিয়ে ভোটের পথে ইসি

নির্বাচন কমিশন (ইসি)

সব সংশয় কাটিয়ে ভোটের পথে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিস্থিতি যা-ই হোক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট করবে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ‘এই মুহূর্তে’ তফসিল ঘোষণার মতো প্রস্তুতিতে রয়েছে তারা।

জানা গেছে, চলতি সপ্তাহেই কমিশন সভা করে সেদিনই তফসিল ঘোষণা হবে। এক্ষেত্রে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শেষ বা দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কেবল ব্যালট ছাপানো বাদে সব ধরনের নির্বাচনি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ব্যালটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজও সংগ্রহ করা হয়েছে।

কমিশনের প্রস্তুতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইসি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এই মুহূর্তে তফসিল ঘোষণার মতো প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। কমিশন যখন চাইবে তখনই তফসিল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি ইসি সচিবালয়ের রয়েছে।

নির্বাচনের পরিবেশ ইস্যুতে কমিশনের মধ্যে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল, ইতোমধ্যে তা কেটে গেছে বলে জানা গেছে। এক সপ্তাহ আগেও খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) মধ্যে একটা দ্বিধা তৈরি হয়েছিল।

গত ২৬ অক্টোবর গণমাধ্যম সম্পাদকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একটি সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। আমরা চাই রাজনৈতিক পরিবেশটা অনুকূল হয়ে উঠুক।

আমার যে প্রত্যাশা ছিল, আজ ছয় মাস, আট মাস, ৯ মাস; এটার সমাধান করতে পারলেন না। দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সমাধান করতে পারেন না, আমি একা কীভাবে একটা জিনিস ওভারনাইট (রাতারাতি) সমাধান হবে না।’

পরে ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় সিইসি তার আগের বক্তব্যের সুরে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়।’

তবে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানে ‘পুরো জাতি তাকিয়ে আছে’ মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে পুরো দেশ মাতোয়ারা হয়ে আছে। পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিদিন বক্তব্য হচ্ছে। একটা ডাইমেনশনও পেয়ে গেছে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনের তফসিলের বিষয়ে প্রস্তুতি অবহিত করার পর ‘নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর’ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে নির্ধারিত সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। দ্রুত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।’

অবশ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সিইসির নেতিবাচক বক্তব্যের পর ইসির মুখপাত্র ও কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। সম্পূর্ণরূপে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মতো পরিবেশ রয়েছে।’

এদিকে সিইসি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে বারবার রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বললেও বিষয়টি এখনও দৃশ্যমান নয়। বিরোধীপক্ষ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান কমিশনের অধীনে তারা ভোটে যাবেন না বলেও অবস্থান তুলে ধরেছে।

জানা গেছে, ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে কমিশনের মধ্যে কিছুটা সংশয় তৈরি হলেও গত ৩০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এবং পরে সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে সিইসির পৃথক সভার পর ইসির সেই সংশয় কেটে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে ইসিকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী পক্ষ না এলেও ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না বলেও তারা জানিয়েছেন। এছাড়া ভোটসহ নীতিনির্ধারণী কিছু ইস্যুতে কমিশনের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলেও এরই মধ্যে সেটা কেটে গেছে।

সব মিলিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কমিশন কিছুটা হলে স্বস্তির মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে যে সংশয়টা তৈরি হয়েছিল তা প্রশমিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে আগামী ২৯ জানুয়ারির আগেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। দ্রুতই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি, আমাদের ওপর যে সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে; বাধ্যবাধকতা, সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বদ্ধপরিকর।’

এদিকে রবিবার শুরু হতে যাওয়া নতুন সপ্তাহের মধ্যে তফসিল ঘোষণার কথা জানানো হলেও এখনও কমিশন সভা ডাকা হয়নি।

অতীতের তফসিল ঘোষণার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কমিশন সভায় প্রথমে তফসিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুয়েক দিন বিরতি দিয়ে রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করেন।

তবে শোনা যাচ্ছে এবার কমিশন সভার দিনই সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা করে হবে। এক্ষেত্রে রেডিও-টেলিভিশনকে আগেই প্রস্তুত রেখে সকালে কমিশন সভা করার পরপরই তা রেকর্ডিং করে সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা হবে।

ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৩, ১৪ বা ১৫ নভেম্বরের যেকোনও একদিন তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এক্ষেত্রে ১৫ নভেম্বর সম্ভাবনা বেশি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ভোটগ্রহণের তারিখের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শেষ বা দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুর দিকটার কথা জানিয়েছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে ৮-৯ জানুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণের চিন্তা করেছিল। কমিশন এখনও ৬-৯ জানুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণের অবস্থানে রয়েছে। অবশ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছুটা আগ-পিছ হতে পারে।

আগামী সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখনও কমিশন সভা ডাকা হয়নি।

যেদিন কমিশন সভা হবে সেদিনই তফসিল ঘোষণা হবে। টেলিভিশন ও রেডিওতে ভাষণের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটার তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে ইসি। দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন।

আর হিজড়া ভোটার ৮৫২। সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের খসড়াও প্রস্তুত করা আছে। বিধান অনুযায়ী তফসিলের পর ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হবে।

স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মার্কিং সিলসহ প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সিল, ছোট-বড় চটের বস্তা ও নির্বাচনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের বেশিরভাগ ইতোমধ্যে জেলা নির্বাচন কার্যালয়গুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর কখন কোন কাজটি করা হবে, তা-ও চূড়ান্ত করা আছে। নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল (নির্দেশিকা) ছাপানোর কাজ চলছে।

প্রশিক্ষক হিসেবে যারা প্রশিক্ষণ দেবেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) এক ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার আরেক ধাপে এসপি ও ডিসিদের দুই দিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা) নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াসহ কিছু সুবিধা যুক্ত করে তৈরি নতুন নির্বাচনি অ্যাপ রবিবার (১২ নভেম্বর) উদ্বোধন করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ।

অবশ্য আগামী নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কারা দায়িত্ব পালন করবেন, তা এখনও ঘোষণা করেনি ইসি। সাধারণত জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়।

গত বছর ইসির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিশিষ্টজনদের অনেকে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

এদিকে আগে একটি জেলার সব আসনের জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান থাকলেও আরপিও সংশোধন করে জেলা অথবা নির্বাচনি আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইসি চাইলে জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তার পরিবর্তে আসনভিত্তিকও নিয়োগ দিতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিটার্নিং কর্মকর্তা করার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ‘মতভিন্নতা’ অনেকটা ক্ষোভের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। অবশ্য এখন সেটা প্রশমিত হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা কাদের করা হবে, তা তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে ঠিক করা হবে। তবে অতীতের মতো ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার সম্ভাবনাই বেশি।

আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: 24nababani@gmail.com
জনপ্রিয় সংবাদ

বোয়ালখালী’র লোকমানের বিরুদ্ধে দুদেকে অভিযোগ 

সব সংশয় কাটিয়ে ভোটের পথে ইসি

আপডেট সময় ১২:৫৩:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩

সব সংশয় কাটিয়ে ভোটের পথে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিস্থিতি যা-ই হোক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট করবে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ‘এই মুহূর্তে’ তফসিল ঘোষণার মতো প্রস্তুতিতে রয়েছে তারা।

জানা গেছে, চলতি সপ্তাহেই কমিশন সভা করে সেদিনই তফসিল ঘোষণা হবে। এক্ষেত্রে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শেষ বা দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কেবল ব্যালট ছাপানো বাদে সব ধরনের নির্বাচনি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ব্যালটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজও সংগ্রহ করা হয়েছে।

কমিশনের প্রস্তুতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইসি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এই মুহূর্তে তফসিল ঘোষণার মতো প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। কমিশন যখন চাইবে তখনই তফসিল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি ইসি সচিবালয়ের রয়েছে।

নির্বাচনের পরিবেশ ইস্যুতে কমিশনের মধ্যে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল, ইতোমধ্যে তা কেটে গেছে বলে জানা গেছে। এক সপ্তাহ আগেও খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) মধ্যে একটা দ্বিধা তৈরি হয়েছিল।

গত ২৬ অক্টোবর গণমাধ্যম সম্পাদকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একটি সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘প্রত্যাশিত অনুকূল পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। আমরা চাই রাজনৈতিক পরিবেশটা অনুকূল হয়ে উঠুক।

আমার যে প্রত্যাশা ছিল, আজ ছয় মাস, আট মাস, ৯ মাস; এটার সমাধান করতে পারলেন না। দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সমাধান করতে পারেন না, আমি একা কীভাবে একটা জিনিস ওভারনাইট (রাতারাতি) সমাধান হবে না।’

পরে ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় সিইসি তার আগের বক্তব্যের সুরে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়।’

তবে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানে ‘পুরো জাতি তাকিয়ে আছে’ মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে পুরো দেশ মাতোয়ারা হয়ে আছে। পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিদিন বক্তব্য হচ্ছে। একটা ডাইমেনশনও পেয়ে গেছে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনের তফসিলের বিষয়ে প্রস্তুতি অবহিত করার পর ‘নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর’ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে নির্ধারিত সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। দ্রুত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।’

অবশ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সিইসির নেতিবাচক বক্তব্যের পর ইসির মুখপাত্র ও কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। সম্পূর্ণরূপে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মতো পরিবেশ রয়েছে।’

এদিকে সিইসি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে বারবার রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বললেও বিষয়টি এখনও দৃশ্যমান নয়। বিরোধীপক্ষ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান কমিশনের অধীনে তারা ভোটে যাবেন না বলেও অবস্থান তুলে ধরেছে।

জানা গেছে, ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে কমিশনের মধ্যে কিছুটা সংশয় তৈরি হলেও গত ৩০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এবং পরে সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে সিইসির পৃথক সভার পর ইসির সেই সংশয় কেটে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে ইসিকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী পক্ষ না এলেও ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না বলেও তারা জানিয়েছেন। এছাড়া ভোটসহ নীতিনির্ধারণী কিছু ইস্যুতে কমিশনের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলেও এরই মধ্যে সেটা কেটে গেছে।

সব মিলিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কমিশন কিছুটা হলে স্বস্তির মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে যে সংশয়টা তৈরি হয়েছিল তা প্রশমিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেকোনও মূল্যে আগামী ২৯ জানুয়ারির আগেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। দ্রুতই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।’

সিইসি বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি, আমাদের ওপর যে সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে; বাধ্যবাধকতা, সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বদ্ধপরিকর।’

এদিকে রবিবার শুরু হতে যাওয়া নতুন সপ্তাহের মধ্যে তফসিল ঘোষণার কথা জানানো হলেও এখনও কমিশন সভা ডাকা হয়নি।

অতীতের তফসিল ঘোষণার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কমিশন সভায় প্রথমে তফসিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুয়েক দিন বিরতি দিয়ে রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করেন।

তবে শোনা যাচ্ছে এবার কমিশন সভার দিনই সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা করে হবে। এক্ষেত্রে রেডিও-টেলিভিশনকে আগেই প্রস্তুত রেখে সকালে কমিশন সভা করার পরপরই তা রেকর্ডিং করে সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা হবে।

ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৩, ১৪ বা ১৫ নভেম্বরের যেকোনও একদিন তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এক্ষেত্রে ১৫ নভেম্বর সম্ভাবনা বেশি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ভোটগ্রহণের তারিখের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের শেষ বা দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুর দিকটার কথা জানিয়েছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে ৮-৯ জানুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণের চিন্তা করেছিল। কমিশন এখনও ৬-৯ জানুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণের অবস্থানে রয়েছে। অবশ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছুটা আগ-পিছ হতে পারে।

আগামী সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখনও কমিশন সভা ডাকা হয়নি।

যেদিন কমিশন সভা হবে সেদিনই তফসিল ঘোষণা হবে। টেলিভিশন ও রেডিওতে ভাষণের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটার তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে ইসি। দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন।

আর হিজড়া ভোটার ৮৫২। সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের খসড়াও প্রস্তুত করা আছে। বিধান অনুযায়ী তফসিলের পর ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হবে।

স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মার্কিং সিলসহ প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সিল, ছোট-বড় চটের বস্তা ও নির্বাচনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের বেশিরভাগ ইতোমধ্যে জেলা নির্বাচন কার্যালয়গুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর কখন কোন কাজটি করা হবে, তা-ও চূড়ান্ত করা আছে। নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল (নির্দেশিকা) ছাপানোর কাজ চলছে।

প্রশিক্ষক হিসেবে যারা প্রশিক্ষণ দেবেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) এক ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার আরেক ধাপে এসপি ও ডিসিদের দুই দিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা) নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াসহ কিছু সুবিধা যুক্ত করে তৈরি নতুন নির্বাচনি অ্যাপ রবিবার (১২ নভেম্বর) উদ্বোধন করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ।

অবশ্য আগামী নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কারা দায়িত্ব পালন করবেন, তা এখনও ঘোষণা করেনি ইসি। সাধারণত জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়।

গত বছর ইসির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিশিষ্টজনদের অনেকে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

এদিকে আগে একটি জেলার সব আসনের জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান থাকলেও আরপিও সংশোধন করে জেলা অথবা নির্বাচনি আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ইসি চাইলে জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তার পরিবর্তে আসনভিত্তিকও নিয়োগ দিতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিটার্নিং কর্মকর্তা করার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ‘মতভিন্নতা’ অনেকটা ক্ষোভের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। অবশ্য এখন সেটা প্রশমিত হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা কাদের করা হবে, তা তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে ঠিক করা হবে। তবে অতীতের মতো ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার সম্ভাবনাই বেশি।