পেঁয়াজ ও আলুর পর এবার চট্টগ্রামে অস্থির হয়ে উঠছে চালের বাজার। মিলারদের কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম। সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কেজিপ্রতি ৬০ টাকার নিচে কোনো চাল পাওয়া যাচ্ছে না চট্টগ্রামে।
খাদ্য অধিদপ্তরের খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ডিলারদের মাধ্যমে নিম্নআয়ের মানুষদের কাছে কম দামে চাল বিক্রি করেও চালের বাজারকে স্থিতিশীল করতে পারছে না।
চট্টগ্রামের বেশির ভাগ মিলার চাল মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। জিটুজির আওতায় বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করলেও বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না।
সূত্র জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয় জিটুজি (সরকার টু সরকার) চুক্তির আওতায় বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করেছে। সব চাল এখন বাজারে আসার সুযোগ নেই। শুধু ওএমএস বা খোলাবাজারে সামান্য পরিমাণ চাল আসছে।
বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের এসব চাল ও গম খোলাবাজারে এলে তবেই চালের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গম ও চালের বাজার এখনো অস্থির। দাম এক দফা কমে তো দুই দফা বাড়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশ কিছুদিন চালের বাজার স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু সম্প্রতি চালের মিলার ও আমদানিকারকরা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন। তারা চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ না করে মজুত করে রাখছেন।
পাইকাররা ৩০ টন চাল কেনার চাহিদা দিলে আড়তদার বা মিলাররা ১৫ টন চাল বিক্রি করছেন। ফলে বাজারে চালের সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, বোরো মৌসুমে চালের ভালো ফলন হলেও কমছে না চালের দাম। উলটো দাম বাড়ছে। মৌসুম ছাড়াও সরকার বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করেছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে ৫০ কেজির প্রতিবস্তা চালের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চট্টগ্রামে গত সপ্তাহে প্রতিবস্তা মোটা সিদ্ধ চালের দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ১০০ টাকা।
সিদ্ধ মিনিকেটের দাম আগে ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। এ সপ্তাহে তা ৩ হাজার ৪০০ টাকা। গুটি স্বর্ণার দাম ছিল ৩ হাজার ১০০ টাকা, এখন ৩ হাজার ৩০০ টাকা। ভারতীয় স্বর্ণার দাম ৩ হাজার ১৫০ থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় উঠে গেছে। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে পারি সিদ্ধ জাতের চালের দাম ৩ হাজার ২১০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। এছাড়া খুচরা বাজারেও অস্থির চালের বাজার।
মোটা চাল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। নগরীর কাঁচাবাজারে অন্যান্য চালের মধ্যে মাঝারি মানের বিআর ২৮ চাল খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। আর নানা পদের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি।
নগরীর চালের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, চালের আড়তে থরে থরে সাজানো রয়েছে চালের বস্তা। বেঁচা-বিক্রিও স্বাভাবিক। গুদামগুলোতে চালে ঠাসা। কিন্তু দাম কমার পরিবর্তে আরও বাড়ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকদিন ধরে মিল পর্যায় থেকে চালের সরবরাহ করা হচ্ছে না। যে পরিমাণ চাল অর্ডার করা হচ্ছে, দিচ্ছে তার চেয়ে কম। এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এখনই যদি নজরদারি না করা হয়, তাহলে অন্যান্য পণ্যের মতো চালের বাড়তি দামে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার আবদুল হামিদ বলেন, মিলারদের কারণে বাড়ছে চালের দাম। এছাড়া আমন ফসল কাটার মৌসুমকে সামনে রেখে ধানের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে কারণে মোটা চাল তৈরিতে ব্যাঘাত হচ্ছে। তবে মোটা চালের তুলনায় চিকন চালের দাম ততটা বাড়েনি।