হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। তেল, চিনি, আদা, রসুন, কাঁচা মরিচসহ কিছুইতেই স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের।
এদিকে আদা, রসুন এবং কাঁচা মরিচের পর নতুন করে আগুন লেগেছে আলু-পেঁয়াজের বাজারেও। সপ্তাহঘুরেই কেজি প্রতি ৩০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। অপরদিকে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু।
(শুক্রবার) বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে৷
ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা দরে বিক্রির কথা থাকলেও সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও সপ্তাহঘুরে তা এখন ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আলুর বাজারেও আগুন! খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে কিছুটা স্বস্তির বাতাস ডিমের বাজারে। গত সপ্তাহে প্রতি পিস ডিম ১৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে পিসপ্রতি দুই টাকা কমিয়ে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে আলু-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কথা হয় বিক্রেতা মোশাররফ মিয়ার। তিনি বলেন, আমাদের করার কিছুই নেই। আড়ৎ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনে আনি।
পরিবহন ও মুনাফা মিলিয়ে এই পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়। দেশি পেঁয়াজের ঝাঝ আরও বেশি। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে পাইকারি কিনে সব খরচ ও লাভ মিলিয়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি করি
মোশারফ বলেন, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আড়ৎ মালিকরা। তারাই ইচ্ছামাফিক দাম বাড়ায়। তাদের থেকে বেশি দামে কিনে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়। এদিকে ক্রেতারা সেই পেঁয়াজ কিংবা আলু কিনতে সক্ষম কি না সেটা আমলে নেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, আগে পেঁয়াজের দাম কম থাকায় প্রতিদিন দুই থেকে তিন বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করতাম। পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা থাকায় ক্রেতারা একসঙ্গে ৫ কেজি ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনতেন। কিন্তু এখন তারা এসে বলেন ২০ টাকার পেঁয়াজ দেন, ৩০ টাকার পেঁয়াজ দেন!
আমরা যদি বেশি বিক্রি করতে পারি তাহলে লাভও বেশি হবে। কিন্তু এখন তো বিক্রি করতে পারি না। ক্রেতার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কিনতে পারে না। সবকিছু মিলিয়ে একটা খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি।
ভোক্তা অধিকারের অভিযান প্রসঙ্গে এই বিক্রেতা বলেন, তারা আমাদের এখানে আসে। আমাদের সাথে কথা বলে ও মালামালের মেমো দেখতে চায়। তারা যখন দেখে ৯৫ টাকার পেঁয়াজ আমি ১০০ কিংবা ১১০ টাকায় বিক্রি করছি তখন চুপ থাকে। কখনো কখনো ট্রেড লাইসেন্স দেখতে চায়।
সবকিছু বুঝে শুনে তারা বলে এভাবেই বিক্রি করুন তাহলে। আমাদের খোলা বাজারে অভিযান চালিয়ে লাভ নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অবশ্যই পাইকারি বিক্রেতাদের লাগাম টানতে হবে।
আরেক পেঁয়াজ বিক্রেতা নুরুল মিয়া বলেন, আমাদের ধরে লাভ নেই। যেখানে ধরলে কাজ হয় সেখানে ধরেন। আমরা যে দামে কিনি তার থেকে পাঁচ-দশ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি। কিন্তু যারা কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা খেয়ে ফেলে তাদের দেখার কিংবা কিছু বলার কেউ নাই৷
বাজার করতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, সবকিছুরই দাম বাড়ছে। আমরা কিছুই কিনতে পারছি না। সবকিছুর দাম বাড়ল, আমাদের আয় তো বাড়েনি।
আমার স্বামী আগে যেমন ৪০০ টাকা রোজ আয় করতো এখনও তাই করে। অনেক জিনিস প্রয়োজন থাকার পরও কিনতে পারি না। সরকার প্রধানের কাছে অনুরোধ থাকবে জিনিসপত্রের দাম কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
বাজার করতে আসা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জুবায়ের আহমেদ বলেন, সবকিছুতেই আগুন। কিনে খাবার মতো কিছুই নেই। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মরিচ কিছুই সাধ্যের মধ্যে আর নেই।
আগে তো একসাথে ২০-৩০ কেজি পেঁয়াজ কিনে রাখতাম। এখন এক থেকে দুই কেজির বেশি কিনতে পারি না। প্রতি সপ্তাহে দাম বাড়ছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণহীন। মানুষ ভালো নেই।