দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে পতেঙ্গা প্রান্তের ফলক উন্মোচনের মধ্যদিয়ে নদীর তল দেশ থেকে নির্মিত এ টানেলের উদ্বোধন করেন তিনি। পরে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন। পরে প্রধানমন্ত্রী তার গাড়িবহর নিয়ে টোল দিয়ে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে টানেল দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছান। আনোয়ারা প্রান্তের টোলপ্লাজায় পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে টোল পরিশোধ করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী সেতুর পতেঙ্গা প্রান্তে গেলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে স্বাগত জানান। এ সময়ে নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেওয়া হয়। এ সময় ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই টানেল চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে আনোয়ারা উপজেলাকে যুক্ত করেছে। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সাগর উপকূল ঘিরে শিল্পের নতুন দুয়ার খুলেছে। চট্টগ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলার মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। টানেলটি রোববার সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল নতুন মাত্রার যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এ অঞ্চলে নতুন মাত্রার উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা করে স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রাপথে আমাদের আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।’ শনিবার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন হচ্ছে। এ উপলক্ষে শুক্রবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এই টানেল নির্মাণে জড়িতদের অভিবাদন জানিয়ে বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের এক গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের শুভ উদ্বোধন হচ্ছে আজ। উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত সর্বস্তরের দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, পরামর্শক, বিশেষজ্ঞ প্যানেল, সেতু বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং নির্মাণশ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের অবদান ও অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য অভিবাদন জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করেন। পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৭৮টি রেলব্রিজ এবং ২৭০টি সড়কব্রিজ ধ্বংস করে। জাতির পিতা যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত সড়ক, সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণ এবং মেরামত করে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য যোগাযোগ অবকাঠামো পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়নযাত্রার সূচনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশকে একটি আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার কার্যক্রম শুরু করেন।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে গত প্রায় ১৫ বছরে যোগাযোগ খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারসহ দেশব্যাপী নির্মিত অবকাঠামো জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।’
শেখ হাসিনা এই টানেল প্রসঙ্গে বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম “ওয়ান সিটি টু টাউনস” মডেলে দৃশ্যমান হবে। এই টানেল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তি, চট্টগ্রাম শহরের যানজট হ্রাস, আনোয়ারা প্রান্তে বিদ্যমান ও গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চল এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ চট্টগ্রাম বন্দর ও প্রস্তাবিত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে পণ্য পরিবহনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। টানেলটি চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রায় ০.১৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর নিচে প্রথম সড়ক টানেল। দেশপ্রেমিক জনগণের আস্থা ও অকুণ্ঠ সমর্থনের ফলেই আজকে উন্নয়নের এ নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনেও গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবো।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার আজীবন লালিত ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, ইনশাল্লাহ।’