খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেশরহাট বাজারের সরকারি জায়গা দখল করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কাউন্সিলরগণ ও প্রভাবশালিরা। এরমধ্যেই ২০ অক্টোবর শুক্রবার ও আগামী দিনে পূজার ছুটি কাজে লাগিয়ে বে-আইনিভাবে কেশরহাট বাজারের প্রায় অকেজ পান বাজারের জায়গা গুলোর একাংশে কাউন্সিলর পদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে তারা ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করতে শুরু করে। এখবর বাজারে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এবং তারা অনেকটাই অবাক ও হতাশ হয়ে পড়েন এবং এই কাজে স্থানীয় লোকজন বাধা প্রয়োগও করেন। পরে বিষয়টি ভূমি কর্মকর্তা অবগত হয়ে লোক পাঠিয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দেন।
স্থানীয়রা জানান, কেশরহাট বাজারের অধিকাংশ সরকারি জায়গাগুলো অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ দখল করে, সেগুলিতে ইট বা টিন দিয়ে ঘর নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যবসা করতে থাকেন। এ সময় ১৯৮৬/৮৭ সালের দিকে সরকারিভাবে ছয়টি টিনশেড নির্মাণ করা হয় এবং সেখানে পানহাটা বসানো হয়। প্রথমদিকে পানের হাট জম-জমাট ভাবে বসলেও এখন আর তেমন পান আসে না এ হাটে। এর ফাঁকে স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে প্রায় প্রতিদিন অস্থায়ীভাবে বসেন এই ছয়টি টিনসেডে। সময়ের ব্যবধানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে এই ছয়টি সরকারিভাবে নির্মিত টিনসেড। এই টিনশেড গুলো কখনো সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি কেশরহাট পৌরসভা বা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে। শুক্রবার সকালের দিকে কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার ও বকুল লোকজন নিয়ে ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করতে শুরু করে এবং পরে ভূমি কর্মকর্তার পদক্ষেপে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লোকজন আরো বলেন, এখানে যদি ঘর নির্মাণ করতে হয় তাহলে এই টিনশেড গুলো ভেঙ্গে নতুন করে সরকারিভাবে দুই বা তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা উচিত। এতে করে এখানে অসংখ্য ঘর নির্মাণ হবে এবং সেই ঘরগুলো মোটা অংকের সিকিউরিটি ও ভালো অংকের মাসিক ভাড়া মিটিয়ে সরকারিভাবে ঘরগুলো সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে লিজ দেওয়া সম্ভব।পাশাপাশি সরকারিভাবে ভবন নির্মাণ করা হলে এই জায়গাটা অনেক সৌন্দর্য বর্ধন করবে। এখান থেকে সরকার বা কেশরহাট পৌরসভা বছরে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে। তাছাড়া এই পান বাজারটি কেশরহাট বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান এটা। জনসাধারণ চায় না যে, এ টিনশেড গুলো না ভেঙ্গে সেখানে ঘর করে কাউন্সিলাররা ভাড়া দিয়ে সরকারি টিনসেড গুলো নষ্ট করুক বা কেশরহাট পৌরসভা এবং সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করুক। এখানে বর্ষাকালে এমনিতেই ব্যাপক জলাবদ্ধতা হয়, এলোমেলো ভাবে ঘর নির্মাণ করা হলে ভবিষ্যতে আরো বেশি জলবদ্ধতার সৃষ্টি হবে এবং পরিবেশ দূষিত হবে। তাই জনসাধারণ এবিষয়ে দ্রুত কেশরহাট পৌর মেয়র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এবিষয়ে কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান বকুল ও কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার বলেন, পৌরসভার সিধান্তক্রমে রাজস্ব বাড়াতে টিনসেডে দোকানঘর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। বিষয়টি ডিডিএলডি, ডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিক অবহিত করে কাজ শুরু করি। তারা আরো জানান, সেখানে অস্থায়ী দোকান ভাড়া দিয়ে কিছু লোক টাকা নিতেন। আমরা সেটা বন্ধ করেছি। আমরা টিনসেড গুলো ভাঙতে চায় না বরং টিনসেড গুলোর নিচে ঘর নির্মাণ করতে চাই। পাশাপাশি নষ্ট হওয়া টিনগুলো পরিবর্তন করে ঠিক করতে চাই। আমাদের নির্মাণকৃত ঘর ভাড়া দিলে কেশরহাট পৌরসভা এখান থেকে একটা রাজস্ব পাবে।
এ বিষয়ে কেশরহাট পৌর মেয়র শহীদুজ্জামান শহীদ বলেন, কেশরহাট পৌর বাজারে নির্মিত টিনশেড গুলো দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে মিটিং করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিব। দুই কাউন্সিলরের ঘর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জায়গাগুলো বে-দখলের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ঐ দুই কাউন্সিলর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঘর নির্মাণের কিন্তু ঘটনাটা জানার পরে আমি সঙ্গে সঙ্গে কাজটি বন্ধ করে দিয়েছি।
কেশরহাট ভূমি অফিসের উপ-সহকারি অফিসার ইকবাল কাশেম বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়া মাত্র লোক পাঠিয়ে কাজটি বন্ধ করে দিয়েছি। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা এবং কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান শহীদকেও অবগত করেছি। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ওখানে কোন ঘর নির্মাণ হবে না।
এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, দোকানঘর নির্মানের বিষয়ে আমাকে আগে কেউ অবগত করেননি এবং জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে বলেও আমার জানা নাই। নির্মানের খবর পাওয়া মাত্রই পৌর মেয়রকে ফোন করলে তিনি আমাকে জানান, জায়গাটি বে-দখল হওয়ার সম্ভাবনায় কাউন্সিলরা এ দোকানঘর নির্মাণ করছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আমি নিষেধ করায় তারা আর সেখানে দোকান ঘর নির্মাণ করবেন না বলে জানিয়েছেন। পরবর্তীতে ভবিষ্যতে কোন ধরণের নির্মাণ কাজ করতে হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন নিয়ে করতে হবে।
এবিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার তার সরকারি নাম্বারে (০১৭১৩২০০৫৬৯) ফোন দেওয়া হলেও রিসিভ না করাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।