all-in-one-wp-security-and-firewall
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114পাক শাসনের শিকল ভেঙে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশ। সেদিন ঢাকায় নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এর মধ্য দিয়ে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় নব্য স্বাধীন বাংলাদেশ।
এ স্বাধীনতার কারিগর ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই বিজয়ের ৫০ বছর শেষে বাংলাদেশ উদযাপন করছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একই সঙ্গে উদযাপন করছে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। সব আনন্দ এবার এক বিন্দুতে মিলেছে, উদযাপনে যুক্ত হয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশ হবে ‘সোনার বাংলা’। সেই স্বপ্ন পূরণে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার হাত ধরে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব পথরেখায়। দেশের অভিযাত্রায় একের পর এক যুক্ত হচ্ছে সাফল্যের নতুন পালক।
[caption id="attachment_538" align="aligncenter" width="939"] Caption Caption Caption Caption Caption[/caption]
গত ২৪ নভেম্বর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশকে পরবর্তী ধাপে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সব প্রক্রিয়া শেষ করল। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে এটি একটি সুবর্ণ অর্জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট একটি দেশেরই সাফল্য নয়, এটি জাতিসংঘের নেতৃত্বে বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বের শক্তিরও প্রমাণ। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্ল্যানারি সভায় তা গৃহীত হয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে মানব উন্নয়ন, অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কর্তৃক ২০২০ সালের মে মাসে প্রকাশিত মেম্বার ফ্যাক্টচেক শিটের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি। এক দশক ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের উপরেই থাকছে।
https://www.youtube.com/watch?v=Ax5vUr51XU4
বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ভারত সরকারের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জন নিয়ে বলেছেন, এরই মধ্যে দেশটি বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সমীক্ষায় (কেস স্টাডি) পরিণত হয়েছে, যা খুব কম অর্থনীতিবিদই অনুমান করেছিলেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ যখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি হারে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যায়, তখন অনেকেই এটিকে একটি আকস্মিক সাফল্য হিসেবে খারিজ করেছিলেন। কিন্তু তখন থেকে প্রতি বছরই পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ এবং আশ্চর্যজনকভাবে দেশটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই সমৃদ্ধি অর্জনের পথে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৮ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে বর্তমানে দেশের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল দুই হাজার ২৪ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে তা বেড়েছে ১০ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ পাশের দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে।
ক্ষুধা সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতিও বেশ। গত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে এ সুসংবাদ আসে। কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফের যৌথ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (জিএইচআই) ১১৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৭৬তম স্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ১। প্রতিবেশী নেপালের অবস্থানও ৭৬তম। তবে পাশের দেশ ভারতের অবস্থান ১০১তম, পাকিস্তানের অবস্থান ৯২তম। সবমিলিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে খাদ্যের উৎপাদন। পুষ্টিকর খাবার কেনার সক্ষমতাও আগের চেয়ে বেড়েছে।
এখন মঙ্গা শব্দটি তেমনভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। আগে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা— এসব এলাকায় কার্তিক মাসে মঙ্গা প্রকট রূপ নিত। এ সময় খাবারের অভাব লেগেই থাকত। সেই অভাবের সংগ্রামে কাউকে কাউকে টিকে থাকতে হতো সেদ্ধ কচু খেয়ে। এখনও কার্তিক আসে, কিন্তু সেই মঙ্গা আর দেখা যায় না। মঙ্গাকে পাঠানো হয়েছে জাদুঘরে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিবিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। কৃষকদের মধ্যে খাস জমি বিতরণ, ভর্তুকিতে সার, কীটনাশক, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করেছিলেন। শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ বর্তমানে দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ফল ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে। মাছ ও মাংস উৎপাদনে দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে।
বিশ্বে বাংলাদেশ আজ কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, ধান ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে আছে। দেশে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়ে চার কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।
অস্থিতিশীলতা উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। দেশে বর্তমানে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। একুশে পদক পাওয়া বিশিষ্ট সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত নিজের ‘সাত দশকের হরতাল ও বাংলাদেশের রাজনীতি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও স্থানীয় মিলে ৫৫৪টি হরতাল হয়েছিল। গত ছয় বছরে হরতাল যেন জাদুঘরে চলে গেছে। অজয় দাশগুপ্ত বলেন, হরতালসহ বিভিন্ন অস্থিরতামূলক কর্মসূচি কমে গেছে। এর কারণ দেশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। হরতাল এ দেশে অকার্যকর হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষও অস্থিরতা চায় না।
একসময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে যারা পরিহাস করত, তারা আজ লজ্জিত। বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বাদ দিয়েই বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে পদ্মা সেতু। আগামী বছরের জুনে যান চলাচলের জন্য সেতুটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ যে নিজের পায়েই দাঁড়াতে পারে, তার প্রমাণ এ পদ্মা সেতু। সন্দেহের কুয়াশা ভেদ করে পদ্মা সেতুর একেকটি স্প্যান স্থাপন যেন বাংলাদেশের সাফল্যের বুননগাঁথাকেই মনে করিয়ে দেয়।
এদিকে, দেশে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলের জন্য উড়ালপথ তৈরি হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে উড়াল রেলপথে মেট্রো ট্রেন চলবে আগামী বছরের বিজয় দিবসে। এটিও এগিয়ে যাওয়ার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এছাড়া, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে নির্মাণ করা হয়েছে বিশ্বমানের এক্সপ্রেসওয়ে। পাশাপাশি চলছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ।
আশির দশকে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পায়নের পথে যাত্রা শুরু করে। প্রথম প্রথম সীমিত এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও পরের তিন দশকে এগুলোর বিস্তার লাভ করে। ইপিজেডগুলো রফতানি আয়ে ভূমিকা রাখে।
তৈরি পোশাক শিল্প ছাড়া অন্য সব শিল্পের বিকাশে ইপিজেডগুলোর অবদান বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। এ বৃত্ত থেকে বের হতে শ্রমঘন শিল্প স্থাপনে সাফল্য, উচ্চ উৎপাদনশীলতা ও অধিক মূল্য সংযোজনকারী শিল্প স্থাপনের দিকে নজর দেয় বর্তমান সরকার। নেয় দেশজুড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সাহসী উদ্যোগ।
২০১০ সালে সংসদে অনুমোদন পায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং এ সময়ের মধ্যে বার্ষিক অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রফতানির প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে।
গত প্রায় এক যুগ ধরে উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ রয়েছে উড়ন্ত গতিতে। এ অভিযাত্রায় সাফল্যের বুননকে সমৃদ্ধ করেছে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতারা বাংলাদেশকে বিশেষ স্বীকৃতি দিচ্ছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েও বাংলাদেশ মানবিক রাষ্ট্রের অভিধা পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার হয়েছে এ দেশে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সামনেই যেন অবস্থান করছে।