প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ১১:২৯ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১০, ২০২৩, ৩:২৫ পি.এম
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে নতুন ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় এক সুধী সমাবেশে নতুন রুটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে রেলের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। যার ফলে যাত্রী ও পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হওয়ায় প্রসার হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানার। যা অবদান রাখবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
এর আগে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সড়ক পথে গণভবন থেকে মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া পৌঁছান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।
মাওয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিশেষ ট্রেনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিশেষ ট্রেনে পদ্মা সেতু পার হন।
রেলওয়ের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ ঢাকা ও ভাঙ্গাকে সংযুক্ত করে খুলে দেওয়া ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগদার। শীঘ্রই যশোর পর্যন্ত সংযোগকারী অবশিষ্ট অংশটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য,
গত বছরের জুনে যুগান্তকারী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে বিশেষ ট্রেনের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়।
এর আগে পদ্মা সেতুতে পাথরহীন রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত ট্রায়াল ট্রেন চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’র আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯,২৪৬.৮০ কোটি টাকা। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১,০৩৬.৭০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।
প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার পর রেল যোগাযোগ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী শহরের প্রবেশ পথ আরও বর্ধিত হবে- যা মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং নড়াইল জেলার নতুন এলাকাকে যুক্ত করবে।
প্রকল্পটি ঢাকা-যশোর-খুলনাকে ২১২.০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট দিয়ে বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপন করবে।
এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী ও বিজি কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এই রুটটি কনটেইনার বহনের জন্য গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে।
★পদ্মা সেতু হয়ে রেল চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী
এক অনারম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে
পদ্মা সেতু হয়ে রেল চলাচল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে গণভবন থেকে মাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ সুধী সমাবেশে আছেন তিনি এরপর নতুন এ রেলপথের উদ্বোধন করবেন।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আরেকবার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো পদ্মা সেতু হয়ে রেল চলাচলে। দক্ষিণের পথে নতুন রেলপথটি ঢাকার গেন্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাদারীপুর–ফরিদপুর গেছে। আগামী বছর এ রেলপথের বাকি অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীকে বরণে অধির আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা। ভোর থেকে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দেয় প্রাণচাঞ্চল্য। বর্ণিল সাজে সাজানো হয় মাওয়া ও ভাঙ্গাকে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বাধভাঙ্গা আনন্দের জোয়ার।
বাংলাদেশকে বদলে দেয়া উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনাকে স্বচক্ষে এক নজর দেখতে অধীর অপেক্ষায় ছিলো সাধারণ মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর মাওয়া স্টেশন থেকে একটি বিশেষ ট্রেনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে যান। ট্রেনটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যাত্রী ছিলেন। চীন থেকে আমদানি করা ১৪টি কোচ দিয়ে সরকারপ্রধানের জন্য ট্রেনটি প্রস্তুত করা হয়।
এরপর বেলা ২টায় ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের বর্ণিল ইতিহাসে:-
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হয়। দ্বিতল এ সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর ভেতরে রয়েছে ট্রেন চলাচলের পথ। পদ্মার দুই পাড়ে যোগাযোগ স্থাপন করতে নেয়া হয় আলাদা প্রকল্প, যা পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প নামে পরিচিত।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, উদ্বোধনের পর শিগগিরই এই পথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে। তবে এখনও দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। শুধু আধুনিকই নয়, দৃষ্টিনন্দন এ রেল সংযোগ প্রকল্পটির মাধ্যমে আরও একধাপ এগিয়ে গেছে দেশের রেলখাত।
বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৩ জেলায় রেলপথ রয়েছে। ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুর রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। ঢাকার দক্ষিণের উপজেলা কেরানীগঞ্জে এতদিন রেল যোগাযোগ ছিল না। যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে নড়াইল নতুন করে যুক্ত হবে। ভবিষ্যতে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালী পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে রেলওয়ের। বর্তমানে বরিশাল বিভাগে কোনো রেলপথ নেই।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে জানা গেছে, ঢাকা-খুলনা পথের সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-যশোর পথের বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন ৩টি পদ্মা সেতু হয়ে চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ট্রেনগুলো বর্তমানে ঢাকা থেকে টঙ্গী-জয়দেবপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু-ঈশ্বরদী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হয়ে চলাচল করছে। একইভাবে রাজশাহী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করা মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চালানোরও পরিকল্পনা আছে। এর বাইরে কমিউটার ট্রেন চালুর বিষয়টিও বিবেচনায় আছে।
তিন অংশে ভাগ করে পদ্মা সেতুতে, রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রথম অংশ ঢাকা-মাওয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। এই অংশে কেরানীগঞ্জে একটি নতুন স্টেশন তৈরি হচ্ছে। মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। এ অংশে নতুন স্টেশন ভবন রয়েছে পাঁচটি। এ দুই অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পের শেষ অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৩ কিলোমিটার। স্টেশনের সংখ্যা ১৪। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে।
রেলওয়ে সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের সময় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক)। চীনের অর্থায়নে ওই দেশেরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলপথ নির্মাণের কাজটি করছে।
নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর সংযোগ রেলপথে কী পরিমাণ যাত্রী ও মালামাল পরিবহন হতে পারে, তার একটি বিশ্লেষণ এরই মধ্যে তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ (সিআরইসি)। স্বল্পমেয়াদি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এই সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে এই প্রাক্কলন তৈরি করেছে সিআরইসি। আর কাজ তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।