★চলছে প্রতিমা তৈরি
★শহরে এবার মণ্ডপের সংখ্যা ৭৯
★নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে পুলিশ
দুয়ারে কড়া নাড়ছে দেবীদুর্গার আগমনী বার্তা। আগামী ১৪ য় মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে শুরু হবে দেবী-বন্দনা। এদিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষের সূচনা হবে। মূূলত মহালয়া এলেই সবাই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যান, এখন থেকে দুর্গাপূজার ক্ষণ গোনা শুরু। মহালয়ার পরদিন থেকেই মাতৃবন্দনা শুরু করবেন সনাতন ধর্মাম্বলীরা।
তাইতো এখন ব্যস্ততা বেড়েছে প্রতিমা কারিগরদের। ফুরসৎ নেই দম ফেলার! এরই মধ্যেই নগরীর মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রতিমালয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কারিগররা। সময়ের ব্যবধানে শিল্পীদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় পূর্ণ রূপ পাচ্ছে দেবীদুর্গার দৃষ্টিনন্দন সব প্রতিমা। প্রতিবারের ন্যয় এবারও রাজশাহী শহরে উৎসবমূখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
বাংলা পঞ্জিকা মতে, গত দুই বছর অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও এবারে রয়েছে ভিন্নতা। এবার শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে। ১৪ অক্টোবর শনিবার পালিত হবে মহালয়া। শারদীয়া নবরাত্রি যারা পালন করেন; তাদের সেদিন থেকেই পূজা শুরু। পরে আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার পালিত হবে মহাষষ্ঠী। ২১ অক্টোবর শনিবার পালিত হবে মহাসপ্তমী। ২২ অক্টোবর রোববার পালিত হবে মহাঅষ্টমী। আর মহানবমী পালিত হবে ২৩ অক্টোবর সোমবার। পরেরদিন ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, মহাসপ্তমী শনিবারে পড়ায় এবছর দুর্গাদেবীর আগমন হবে ঘোড়ায়। শাস্ত্র অনুসারে, দেবীর আগমন ঘোড়ায় হলে ‘ছত্র ভঙ্গ স্তরঙ্গমে’ অর্থাৎ- সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রাজায়-রাজায় বা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যুদ্ধ সূচিত হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিকস্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে। এক কথায় ‘ছত্রভঙ্গম’। আবার এ বছর বিজয়া দশমী মঙ্গলবার পড়ায় দেবীর গমনও হবে ঘোড়ায়।
এদিকে দুর্গোৎসবের প্রধান আনুষ্ঠানিকতা আরম্ভ হতে এখনো ২০ দিন বাকী থাকলেও ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নান প্রস্তুতি। রাজশাহী শহরের বিভিন্ন এলাকার মন্দির-মণ্ডপে চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ। এতে দারুণ ব্যস্ত শহরের প্রতিমা কারিগররা। কাদা-মাটি, খড়-কাঠ দিয়ে পুরোদমে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।
নগরীর আলুপট্টি এলাকার প্রতিমা কারিগর কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, এখন থেকে প্রায় দুই থেকে তিন মাস আগে থেকে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রায় ২০ থেকে ২৫টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন তিনি। প্রতিমায় মাটির বিভিন্ন কাজ এখন শেষের পথে। এখন চলছে মাটির সর্বশেষ পর্যায়ের কাজ। আর কয়দিন পরে প্রতিমার গায়ে পড়বে রঙ-তুলির আঁচড়। পরে স্ব-স্ব মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা পোঁছে দেয়া হবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবার জেলায় ৩৮৯টি ও মহানগরীতে ৭৯টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করার লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব মণ্ডপের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এবার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ এবং আনন্দঘন পরিবেশে পূজা উদযাপিত হবে। এজন্য দেয়া হয়েছে প্রায় ২৬টি নির্দেশনা। সবাইকে এই নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
অপরদিকে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন থেকেই কাজ শুরু করেছে উল্লেখ করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, শহরে এখন চারটি স্থানে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। এসব স্থানে যখন থেকে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে; তখন থেকেই নগর পুলিশ তাদের খোঁজ-খবর রাখছে এবং নিয়মিত মনিটরিং করছে। এটি আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যেই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ থানাগুলো দুর্গাপূজা নিয়ে অভ্যন্তরীণ মতবিনিময় করেছে। যখন দুর্গোৎসব শুরু হবে, তখন আমাদের রেগুলার যে দায়িত্ব থাকে, সেটি চলমান থাকবে।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি আনসারসহ র্যাব সদস্যরাও থাকবেন। কয়েক দিনের মধ্যে আমরা স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করবো। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যেখানে-যেখানে প্রয়োজন বা নিরাপত্তার যে বিষয় থাকবে- তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। আমাদের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত আছে সেসব তাদের অবগত করা হবে এবং তাদের কাছে যে সকল তথ্য আছে সেগুলো আমাদেরকে জানাবেন। এভাবেই মূলত সমন্বিতভাবে উৎসবমুখর পরিবেশেই রাজশাহী মহানগরীতে শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি।
রাজশাহী মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আইনজীবী শরৎ চন্দ্র সরকার বলেন, রাজশাহী শহরে এ পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি চলছে। এখনো কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর জানা যায়নি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিবার যে নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়, সেটি এবারও অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে শহরজুড়ে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। মূলত নগরীর ধর্মসভা মন্দির থেকে পুরো শহরের পূজা মণ্ডপগুলোতে তদারকি ও মনিটরিং করা হবে। যদিও আমাদের রাজশাহীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর। এখানে ঝুঁকিপূর্ণ কোন ঘটনার সম্ভাবনা তেমন নেই। তবুও আমাদের পক্ষ থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব সম্পন্ন করার জন্য যা-যা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, আমরা তা গ্রহণ করব।