তথ্য গোপন, জালিয়াতি ও বিকৃতি করে সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চাকরির শুরুতেই যারা এ ধরনের কাজ করে, তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা থাকতে পারে এমন ধারনা সবার।
কুবিরা বেগম (৪১) সরকারি চাকুরীরতে প্রবেশের বয়স ৬ বছর আগেই পেরিয়ে গেছে। তবুও সরকারি চাকুরীবিধিকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে ৬ বছর ধরে পরিবার কল্যান সহকারী (এফ ডব্লিউ এ) পদে চাকুরী করছেন। বয়স জালিয়াতি করে সরকারি চাকুরীর খবর প্রকাশ পাওয়ায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তিনি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল ইউপি’র ৩ নম্বর ইউনিট এ পরিবার কল্যান সহকারী হিসেবে কর্মরত এবং কৃষ্ণপুর গ্রামের মোঃ কুবাদ আলীর মেয়ে।
চাকুরী হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ও জেলা প্রশাসক, দূর্ণিতি দমন কমিশন, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার, ইউএনও, বিভিন্ন গনমাধ্যমে এক ইউপি সদস্যের অভিযোগের মাধ্যমে জানা গেছে, ৩৬ বছর বয়সে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই সরকারি চাকরি বিজ্ঞপ্তি আবেদন করেন কুবিরা এবং ২০১৮ সালে তিনি চাকুরীতে যোগদান করেন। সবই ঠিক চলছিল। জাতীয় পরিচয়পত্রে (নম্বর ৮১১২০১….৮৩৪) তার জন্ম তারিখ ১৬ জুন ১৯৮১। স্বামী: মো: জালাল, পেশা গৃহিণী। সরকারি চাকুরী বিধি অনুযায়ী বয়স বেশি হওয়ায় এখানেই ঘটে বিপত্তি। তথ্য গোপন করে পরিবার কল্যান সহকারী পদে চাকুরি নেন। ৩৬ বছর বয়সে তিনি কিভাবে সরকারি চাকুরি পান তা নিয়ে এলাকার মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
চাকরি বাঁচাতে এবার একই ভোটার আইডিতে বয়স সংশোধন করে যাদুর কাঠির মাধ্যমে বয়স কমান ১৬ বছর। স্বামী নামের পরিবর্তে বসান বাবার নাম। পেশা সরকারি চাকুরীজীবি। নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে মুঠোফোনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কুবিরা দাবি করেন, ছোট বেলায় বিয়ে হয় তার। কয়েক বছর পর স্বামী মারা যায় এবং তিনি পরবর্তীতে স্কুলে ভর্তি হয়ে এসএসসি ও এইচ এসসি পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে নিয়ম মেনে চাকরি পেয়েছেন তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ ভুল থাকায় তা সংশোধনও করেছেন বলে দাবি তার।
তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কুবিরার সংশোধিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী জন্ম তারিখ ৩০/১২/১৯৯৭। বড় ছেলে আতিকুর রহমানের ভোটার তালিকা অনুযায়ী
জন্ম তারিখ ২৮/১২/১৯৯৭ হিসাব অনুযায়ী ছেলের চেয়ে মা ২ দিনের ছোট। এদিকে মেজো ছেলে খায়রুজ্জামান লিটনের ভোটার
তালিকা অনুযায়ী জন্ম তারিখ ০৫/০১/২০০০ হিসাব অনুযায়ী মেজো ছেলে তার মায়ের থেকে ৭ বছরের ছোট।
পরিবার কল্যান সহকারী পদে কুবিরা’র চাকুরী হবার মাস চারেক পর তার নামে বয়স জালিয়াতির অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন একই ইউপির শাহনাজ নামের চাকুরি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী এক প্রার্থী। পরবর্তীতে চাকুরি বাঁচাতে কুবিরা ও তার পরিবার বিষয়টি নিয়ে আপোষ মিমাংসা করে নেওয়ায় বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি।
এবিষয়ে অভিযোগকারী বাকশিমইল ইউপি ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কাজি আজিজুল ইসলাম জানান, দেশে লাখ লাখ বেকার যুবরা মেধা থাকা স্বত্বেও চাকরি পাচ্ছেনা। সেখানে কিভাবে চাকুরির বয়স ৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও একজন চাকুরী পায়। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ না হওয়ায় এমনটি হয়েছে।
উর্ধতন মহলের দৃষ্টি ফেরাতে এবং রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণা করে সরকারি চাকুরি নেওয়ায়
পরিবার কল্যান সহকারী কুবিরা’র চাকুরী বাতিল ও সরকারী টাকা কোষাগারে ফেরতের জন্য জোরালো দাবি করছি। সেই কারণেই বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ্- জোহ্ রা জানান, জন্ম তারিখ জালিয়াতি করে সরকারি চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে এক ইউপি সদস্যের দেওয়া অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য সমাজসেবা অফিসারকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের
উপপরিচালক ড. কস্তুরী আমিনা কুইন জানান, জন্ম তারিখ জালিয়াতি করে সরকারি চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এটা ডিসি স্যার বরাবর আবেদন করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আমি দেখলাম। এত বড় একটা জালিয়াতি কি করে হল। এনআইডিতে বয়স চেঞ্জ করে দিছে যারা এটা একটা বড় অপরাধ। তারপরও নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াতে একটা ভেজাল মনে হচ্ছে। যেহেতু ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তির বিষয়। এব্যাপারে একটা তদন্ত করা হবে। সম্ভবত ডিসি স্যার ও এবিষয়ে একটি তদন্ত দিবেন বলেও তিনি মতামত দেন।