চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইটভাটার মালিককে মারধর করত জোরপূর্বক ইট ভাটা দখলে নিয়ে লুটপাটকারী এজাহারনামীয় প্রধান ০২ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম।
ভুক্তভোগী ভিকটিম আনসারুল হক এবং তার বন্ধু মোঃ কামাল উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন বন্ধু যৌথভাবে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানাধীন এসএমবি (শাহ মাজিদিয়া ব্রিকস) নামে ব্রিকফিল্ডে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। আসামী মোহাম্মদ নোমান ও এবং মমতাজউদ্দিনের নেতৃত্বে কতিপয় দুস্কৃতিকারী প্রায় সময়ই ভিকটিমদের নিকট ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা চাঁদা দাবী করত। ভিকটিম এবং তার ব্যবসায়িক পার্টনারগণ চাঁদাবাজদের দাবীকৃত চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে দুস্কৃতিকারীতার তাদের মারধরসহ প্রাণে মেরে ফেলা এবং উক্ত স্থানে তাদের ব্যবসা করতে দিবে না বলে হুমকি দিত।
গত ২৩ মে ২০২৩ ইং তারিখ দুপুর আনুমানিক ২:৩০ মিনিটে আসামী মোহাম্মদ নোমান এবং মমতাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে কতিপয় দুস্কৃতিকারী আগ্নেয়াস্ত্র, দা, কিরিচ, লোহার রড, হকিষ্টিক ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভিকটিম আনসারুল হকের ইট ভাটার অফিসে প্রবেশ করে ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা চাঁদা দাবী করে এবং বলে এখানে ব্যবসা করতে হলে প্রতি বছর ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা হারে চাঁদা দিতে হবে। তখন ভিকটিম চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ব্রিকফিল্ডের ম্যানেজার এবং কর্মচারীদের লোহার রড ও লাঠিশোঠা দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর আহত করে তাদের অফিস হতে বের করে দেয়। এ সময় আনসারুল হক এবং তার বড় ভাই বাধা দিলে আসামীরা তাদেরকেও মারধর করে এবং আনসারুল হকের পকেট হতে ১ লক্ষ টাকা এবং অফিসের ক্যাশ বাক্স ভেংগে ইট বিক্রির ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে নেয়।
ঐদিনেই দুস্কৃতিকারীরা ইট ভাটাটি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে ৫০/৬০ টি ডাম্পার ট্রাক গাড়ী এনে ব্রিকফিল্ড এর প্লাটফর্ম হতে আনুমানিক ২,১০,০০০ (দুই লক্ষ দশ হাজার) ইট নিয়ে যায় এবং ১০/১২ হাজার কাচা ইট ভাংচুর করে ক্ষতিসাধণ করে। এছাড়া আসামীরা ইট ভাটায় ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক মোটর, পানির পাম্প, পানির ড্রাম ইত্যাদি ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভিকটিম আনসারুল হকের স্ত্রী বাদী হতে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানায় ২১ জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০০/১২০ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ৪০ তারিখ ২৯ মে ২০২৩, ধারা ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৭৯/৩৮০/৪২৭/৩৮৫/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মে ২০২৩ ইং তারিখে নগরীর ওয়েল পার্ক হোটেলে ইটভাটা মালিক কামাল উদ্দিনের স্ত্রী মোর্তোজা বেগম ইটভাটা দখল করে নেওয়ার অভিযোগে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তার স্বামী ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ সুযোগে তাকে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার আসামি করে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ইটভাটাটি দখল করেছেন। তিনি জানান, প্রবাস থেকে ফিরে কামাল উদ্দিনসহ কয়েকজন মিলে সাতকানিয়ায় শাহ মজিদিয়া ব্রিকস (এসএমবি) নামে একটি ইটভাটা গড়ে তোলেন। ইটভাটা মূলত কামাল পরিচালনা করতেন। সম্প্রতি তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচার পরবর্তী জটিলতায় গত ১৬ মে থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ সুযোগে দুস্কৃতিকারীরা ইট ভাটাটি দখল করে লুটপাট করছে এবং ইটভাটার কর্মচারীদের পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে।
র্যাব-৭,সিনিঃ সহকারী পরিচালক মোঃ নুরুল আবছার জানান , চট্টগ্রাম বর্ণিত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, বর্ণিত ঘটনায় নেতৃত্ব দানকারী এবং মামলার এজাহারনামীয় ১ ও ২ নং আসামী নোমান ও মমতাজ উদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানাধীন লালদীঘি এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ৩০ মে ২০২৩ইং তারিখে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মামলা আসামী ১। মোহাম্মদ নোমান (৩৫), পিতা- মোঃ তৈয়ব, সাং- পালেগ্রাম, থানা- বাঁশখালী, জেলা- চট্টগ্রাম ও ২। মমতাজ উদ্দিন (৪০), পিতা- আলতাফ হোসেন দফাদার, সাং- ছনখোলা, থানা- সাতকানিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম’দ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা বর্ণিত নাশকতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।