প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ১১:১৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ২১, ২০২৩, ৮:২৮ পি.এম
আর মাত্র তিনদিন পরেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এ মাসকে সামনে রেখে হঠাৎ করেই রাজশাহীর সবজির বাজারে আগুন লেগে গেছে। এক দিনের ব্যবধানে রাজশাহীর বাজারে সবজির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫টাকা পর্যন্ত। আজ মঙ্গলবার লোকজন সবজি বাজারে গিয়ে একদিন আগের দামের সাথে বর্তমান দামের হিসাব মেলাতে পারেন নি। একটি রাতের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি যা বাজার করতে যাওয়া লোকজনদের চোখ কপালে উঠার মত। অনেকেই বাজার করতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতকাল সোমবার সবজির আমদানি ছিল বেশি। যার কারণে দামও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আজ মঙ্গলবার বাইরে থেকে সবজি আদমানী একেবারে কম। যার কারণে আজ দামও বেশি। কিন্তু ক্রেতারা বলছেন, আমদানি বিষয় নয়, রমজানকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে। তাছাড়া এক রাতের ব্যবধানে এতো দাম বাড়বে কি করে।
রাজশাহী নগরীর মাস্টারপাড়া সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সবজি দোকানে পর্যাপ্ত পরিমান সবজি রয়েছে। তারপরও তারা বলছেন সবজির আমদানি কম। বিক্রেতারা বলছেন, আজ মঙ্গলবার পাইকারী কেজিতে ৮ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়ে সবজি কিনতে হয়েছে। যার কারণে তারাও ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিয়ে সবজি বিক্রি করছেন। কিন্তু পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, আজ সবজি কম এলেও খুব বেশি কম আসেনি। যতটুকু কম এসেছে তার প্রেক্ষিতে খুচরা ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ টাকা বেশি দাম নিতে পারে। কিন্তু তারা রীতিমত কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা আবার কেউ কেউ ২৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম নিয়ে সবজি বিক্রি করছেন। নগরীর নিউমার্কেট সবজি বাজার ঘুরেও একই চিত্র পাওয়া যায়।
নগরীর মাস্টারপাড়া সবজি বাজার ঘুরে ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সোমবার বাজারে ঢেড়শ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি। কিন্তু আজ মঙ্গলবার বিক্রি হচ্ছে ৮০, করলাও ছিল ৬৫ টাকা কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০, পটল ৬০ টাকা থেকে দাম বেড়ে হয়েছে ৭০, ৩০টাকা কেজির বেগুন ৪০, টেমটো ৩০, শশা ৩৫ থেকে ৪০, ৩০ টাকার গাজর ৪০, লাউ প্রকার ভেদে ৩০ থেকে ৪০, আলু ১৮, বাধা কপি ২০, শক ১৫ থেকে ২০, পেঁপেঁ ৩০, কাঁচা কলা ১২ থেকে ১৫ হালি, লেবুর হালি ৩৫টাকা, মরিচ সেঞ্চুরি করে ১শ’ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ৪০ টাকার সিম বিক্রি হচ্ছে ৬০, ১শ’ টাকার সাজনা ডাটা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, ৩৫ টাকার মিস্টি কুমড়া ৪০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে সাজনা ডাটা, ঢেড়শ, করলা, পটলের দাম একেবারে ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এই তিনটি সবজির দাম বাড়ানো হয়েছে কেজিতে ২৫ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বযলারের দাম তেমন বাড়েনি। বয়লার গতকাল সোমবার প্রতি কেজি বয়লার বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা। আজ মঙ্গলবার ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ কেজি, সোনালি ৩৫০ টাকা কেজি। মাছের বাজারেও রকম ভেদে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
দাম বৃদ্ধিও ব্যাপারে মাস্টারপাড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, সোমবার তিনি সবমিলে সাড়ে ৫হাজার টাকার সবজি কিনেছিলেন। সাড়ে ৫ হাজার টাকায় তিনি যে পরিমান সবজি পেয়েছিলেন আজ মঙ্গলবার ওই টাকায় তার চেয়ে অনেক কম পেয়েছেন। তিনি বলেন, পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাম বেশি নিয়ে তাদের সবজি দিয়েছে। যার কারণে তাদের বেশি দাম নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
নিউমার্কেট এলাকার সবজি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, গতকালের তুলনায় আজ সবজির দাম বেশি। কেনো বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ সবজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা কেজিতে বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। যার কারণে দাম বেশি নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
নগরীর হেতেমখাঁ এলাকা থেকে বাজার করতে আসা আসাদুল ইসলাম বলেন, দেশে আইনকানুন আছে বলে মনে হয় না। গতকালের বাজারের বাজেট নিয়ে আজ বাজার করতে এসেছি। কিন্তু কাঁচা বাজারে ঢুকেই চোখ কপালে উঠার মত অবস্থা। তিনি বলেন, দাম বাড়তে পারে সেটা একটা লিমিটের মধ্যে থাকতে হবে। এক রাতের ব্যবধানে কি করে সবজি কেজিতে ২০ থেকে ২৫ বাড়ে। এটা মগেরমুল্লুক ছাড়া আর কিছুই নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
নিউ মার্কেটে বাজার করতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, রমজান মাস এলেই ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমত দাম বাড়ায়। প্রতি বছর এই বিষয়টি দেখে আসছি। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার নেই। তিনি বলেন, গতকাল যে সবজি কিনেছি ৬০ টাকায় আজ তা কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকায়। সবজি তো বাজারে ভরপুরই রয়েছে। তবে কেনো ব্যবসায়ীরা দাম বেশি নিচ্ছেন। এই প্রশ্নই বা করবো কাকে।