দেশে বিচারিক কাজে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে। অর্ধশত বছর আগে দেশে নারী বিচারক ছিলেন মোটে একজন। বর্তমানে দেশের বিচারিক (অধস্তন) আদালতে বিচারকাজে নিয়োজিত ৫৮০ জন নারী বিচারক।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে অধস্তন আদালতে বিচারকের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে পুরুষ বিচারকের সংখ্যা ১৪০০ থেকেও বেশি আর নারী বিচারকের সংখ্যা প্রায় ৬ শতাধিক।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন বলেন, বর্তমানে জেলা জজ থেকে শুরু করে সহকারী জজপদ পর্যন্ত ৫৮০ জন নারী বিচারক কর্মরত আছেন। অর্থাৎ অধস্তন আদালতের মোট বিচারকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধস্তন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেই হিসেবে দেশে নারী বিচারকের এ সংখ্যা পর্যাপ্ত। তবে, তাদের প্রত্যাশা এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
তবে, উচ্চ আদালতে নারী বিচারক তুলনামূলক কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা। তারা বলেন, উচ্চ ও সর্বোচ্চ আদালতে আরও বেশি নারী বিচারক আসা উচিত। উচ্চ ও সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, এমন অনেক নারী বিচারক অধস্তন আদালতে কর্মরত আছেন।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বিচারিক আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা বেড়েছে। বিচারকাজে ভালো করছেন নারীরা। তবে, উচ্চ আদালতে আরও নারী বিচারক হওয়া দরকার।’
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, দেশের উচ্চ আদালতে আরও নারী বিচারক আসা উচিত। নারীরা বিচারক হিসেবে খুব ভালো করছেন। এ জন্য জুডিসিয়ারিতে নারীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আমার ধারণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারী বিচারকের সংখ্যা পুরুষের সমান হয়ে যাবে। এক সময় হয়তো সংখ্যার দিক দিয়ে পুরুষদের ছাড়িয়েও যেতে পারে। নারীরা জুডিসিয়ারিতে অনেক ভালো করছে।
বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারক ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন এমন অনেক নারী বিচারক অধস্তন আদালতে কর্মরত আছেন। আছেন যোগ্য নারী আইনজীবীও।
সুপ্রিম কোর্টে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গ টেনে সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, বইয়ে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে যে হতাশাজনক কথা বলেছেন আমি লেখকের সঙ্গে একমত না। আপনারা জানেন আমি বর্তমানে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যোনের দায়িত্ব পালন করছি। আমি এ পর্যন্ত ১৫২ জন জুডিসিয়াল অফিসারের রিকমেন্ডেশন করেছি।
সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে বুধবার (১ মার্চ) আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সহধর্মিণী নাফিসা বানুর লেখা বঙ্গবন্ধু শুদ্ধাচার নারীর ক্ষমতায়ন ও অন্যান্য বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে জুডিসিয়ারিতে নারীরা মেধার সঙ্গে অবদান রাখছেন বলেও মূল্যায়ন করেন তিনি। তারা পরিশ্রমী সৎ ও সাহসী বলেও জানান প্রধানবিচারপতি।