প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার খোঁজ রাখেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, এমপি। পরিকল্পনামন্ত্রী আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এ কথা জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে তাঁর পিতার বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তাঁর মধ্যে অবিমিশ্র বাঙালির পরিচয় পাওয়া যায়। মাতৃভূমির প্রতি তাঁর রয়েছে সীমাহীন আনুগত্যবোধ। তিনি জানেন দেশের কোথায় কোন মানুষ কষ্টে আছে; তিনি সবার খোঁজ রাখেন। তিনি জানেন দেশের কোথায় কোন নদী আছে, কোথায় কোন হাওর আছে সেখানে মানুষের কী প্রয়োজন। কোন সময় কোন কাজ করতে হবে, কাকে দিয়ে কোন কাজ হবে।
প্রধানমন্ত্রী কখনো সময় নষ্ট করেন না উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, শেখ হাসিনা সঠিক সময় খেয়াল রেখে চলেন, তিনি কখনো সময়ক্ষেপণ করেন না। আমি তাঁকে গত বারো বছরে একবারও সময়ক্ষেপণ করতে দেখি নাই। আমরা সঠিক সময় মেনে চলার জন্য বিদেশের উদাহরণ দেই জাপানিদের কথা বলি, আমার মনে হয় বিদেশিদের মডেল হিসেবে খোঁজার দরকার নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ই আমাদের মডেল। পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করার জন্য নতুন প্রজন্মকে আহ্ববান জানান।
নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, বাঙালি হিসেবে আমরা গৌরব বোধ করি। কারণ, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ইতিহাস রয়েছে। তবে কেউ কেউ বাঙালি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে হীনম্মন্যতায় ভোগে। আমাদের মনোজাগতিক পরিবর্তনের এখনো অনেক বাকি আছে। তবে বাস্তব জগতে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিবর্তন করতে পেরেছি। আমাদেরকে নিজেদের সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করা দরকার।
পরিচ্ছন্ন রাজশাহী নগরীর প্রশংসা করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা রাজশাহীতে বিনিয়োগ বাড়াব। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে যা করা দরকার, আমরা তার জন্য সহযোগিতা করব। দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় দরকার বলে এ সময় তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃঢ়তা তুলে ধরে সভায় রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমাদের সৌভাগ্য যে, শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দেশে ফিরে তৎকালীন সরকারের নিপীড়নে বিধ্বস্ত আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি এমন পরিস্থিতিতে দলের দায়িত্ব নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজে নেমেছিলেন, যখন বঙ্গবন্ধুর নাম বলা যেত না। সেই থেকে তাঁর যাত্রা শুরু হয়।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, শেখ হাসিনা কোথাও নৌপথে, কোথাও রেলপথে, আবার কোথাও কোথাও পায়ে হেঁটে মানুষের কাছে গেছেন। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তিনি যান নাই। এরপর থেকে মানুষ আবার একত্রিত হতে শুরু করে, মানুষ সাহস ফিরে পায়। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ওই সময় সারাদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরার পর রাতে সার্কিট হাউজে বসতেন। সেখানে তিনি সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে দেখা করতেন, তাদের কথা শুনতেন, কী সমস্যা কী করতে হবে তা লিখে রাখতেন এটা আমি কাছ থেকে দেখেছি। এখন তিনি মানুষের সেই সব সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন, মানুষের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করছেন।
মেয়র বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তিনি পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানে এখন নানা ধরনের উন্নয়ন হচ্ছে, সেখানকার মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে। পার্বত্য এলাকা এখন দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। তিনি পদ্মার পানিবন্টন চুক্তি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে দূরদর্শী নেত্রী উল্লেখ করে মেয়র বলেন, শেখ হাসিনা ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কী করতে হবে তার চিন্তা করেন।
আলোচনা সভায় রাবি’র উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এর সভাপতিত্বে উপ-উপাচার্য প্রফেসর সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) অবায়দুর রহমান প্রামানিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বক্তৃতা দেন।
আলোচনা সভার শুরুতে রাবি’র সংগীত বিভাগের শিক্ষকদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর ‘তুমি বাংলা মাতা, তুমি বিজয়িনী, তুমি বুদ্ধিদীপ্ত-তেজস্বিনী……..’ ও রবীন্দ্রসংগীত ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে…..’ গান গেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়। সংগীত পরিবেশন শেষে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নৃত্য পরিবেশিত হয়।
এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী রাবি’র বঙ্গবন্ধু হলে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি রাবি’র কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও শহিদ অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা’র সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর মন্ত্রী শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটি বৃক্ষরোপণ করেন।