ঢাকা ০৭:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিমাগারে আলু মজুত করে বিপাকে রাজশাহীর চাষি ও ব্যবসায়ীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় ০৫:০৮:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ২৬৫ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি।

হিমাগারে আলু মজুত করে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে অন্য সবজির দাম বেশি হলেও আলুর দাম তুলনামূলক কম। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ টাকা। একই আলু পাইকারি বাজারে ১৯ থেকে ২০ টাকা। চাষিদের উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণের খরচের হিসাবে প্রতিকেজি আলুতে গড়ে লোকসান সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা।
মৌসুমের শুরুতে হিমাগারে মজুত করার সময় যে দাম ছিল তার চেয়ে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। এমন দরপতনের কারণে হিমাগারগুলোয় বর্তমানে ভরা মৌসুমেও কৃষক ও ব্যবসায়ীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
হিমাগার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার আলুর দাম কম। হিমাগারে আলু নিতে আসছেন না অনেকে। এখন পর্যন্ত ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ আলু হিমাগারে পড়ে আছে।
কৃষি বিপণন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৬টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে ৮০ লাখ বস্তা ওজনের দিক দিয়ে যা ৪ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। চলতি বছরের জুন-জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাসে ১ লাখ ৭৩ হাজার ২২৪ টন আলু উত্তোলন করা হয়েছে। এখনো হিমাগারে পড়ে রয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ২৪৩ টন আলু। তবে এই বিপুল পরিমাণ সংরক্ষিত আলু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ নভেম্বর।
চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিমাগারের খরচসহ প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) প্রকারভেদে আলুর খরচ পড়েছে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমান বাজারে আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার ২০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গড়ে বস্তাপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যাস্টারিক্স জাতের আলু বেশি চাষ হয়। গত কয়েক বছর থেকেই বাড়ছে আলুর চাষ। ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ভালো দামের আশায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয় আলু। এসব জমি থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও উৎপাদন হয় ৮ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন।
তানোর উপজেলা যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতিকেজি ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, অ্যাস্টারিক্স (লাল) জাতের আলু উৎপাদন খরচ পড়ে ১৫ টাকার বেশি। আর বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত আলুর উৎপাদন খরচ সাড়ে ১৬ থেকে ১৭ টাকা।
তিনি বলেন, প্রতি বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। কোল্ড স্টোরেজে এখন আমার ১ হাজার ২০০ বস্তা আলু আছে। ২৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারলে বাঁচতাম।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বকর বলেন, বাজারে ২৫ থেকে ২৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে আলু। আর পাইকারিতে সাড়ে ১৯ থেকে ২০ টাকা। এ হলো আমাদের দেশের সমস্যা; সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে চাষিদের টাকা।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত আলু চাষ হলেও চাহিদা আছে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই। চাষিরা এ কারণেই লোকসানে পড়ছেন। কৃষকের এ সমস্যা সমাধানে আমরা সরকারি দপ্তরে জানিয়েছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে আলু সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বর্তমানে আলুর দাম কিছুটা কমে গেছে। এখনো দুইমাস সময় আছে আলুর দাম বাড়ার। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে আলুর দাম কিছুটা বাড়ে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
আপলোডকারীর তথ্য

Daily Naba Bani

মিডিয়া তালিকাভুক্ত জাতীয় দৈনিক নববাণী পত্রিকার জন্য সকল জেলা উপজেলায় সংবাদ কর্মী আবশ্যকঃ- আগ্রহীরা আজই আবেদন করুন। মেইল: [email protected]
জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার ও আমাদের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত।

হিমাগারে আলু মজুত করে বিপাকে রাজশাহীর চাষি ও ব্যবসায়ীরা

আপডেট সময় ০৫:০৮:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
হিমাগারে আলু মজুত করে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে অন্য সবজির দাম বেশি হলেও আলুর দাম তুলনামূলক কম। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ টাকা। একই আলু পাইকারি বাজারে ১৯ থেকে ২০ টাকা। চাষিদের উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণের খরচের হিসাবে প্রতিকেজি আলুতে গড়ে লোকসান সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা।
মৌসুমের শুরুতে হিমাগারে মজুত করার সময় যে দাম ছিল তার চেয়ে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। এমন দরপতনের কারণে হিমাগারগুলোয় বর্তমানে ভরা মৌসুমেও কৃষক ও ব্যবসায়ীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
হিমাগার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার আলুর দাম কম। হিমাগারে আলু নিতে আসছেন না অনেকে। এখন পর্যন্ত ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ আলু হিমাগারে পড়ে আছে।
কৃষি বিপণন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৬টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে ৮০ লাখ বস্তা ওজনের দিক দিয়ে যা ৪ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন। চলতি বছরের জুন-জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাসে ১ লাখ ৭৩ হাজার ২২৪ টন আলু উত্তোলন করা হয়েছে। এখনো হিমাগারে পড়ে রয়েছে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ২৪৩ টন আলু। তবে এই বিপুল পরিমাণ সংরক্ষিত আলু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ নভেম্বর।
চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিমাগারের খরচসহ প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) প্রকারভেদে আলুর খরচ পড়েছে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমান বাজারে আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার ২০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গড়ে বস্তাপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও অ্যাস্টারিক্স জাতের আলু বেশি চাষ হয়। গত কয়েক বছর থেকেই বাড়ছে আলুর চাষ। ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ভালো দামের আশায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয় আলু। এসব জমি থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও উৎপাদন হয় ৮ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন।
তানোর উপজেলা যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতিকেজি ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, অ্যাস্টারিক্স (লাল) জাতের আলু উৎপাদন খরচ পড়ে ১৫ টাকার বেশি। আর বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত আলুর উৎপাদন খরচ সাড়ে ১৬ থেকে ১৭ টাকা।
তিনি বলেন, প্রতি বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। কোল্ড স্টোরেজে এখন আমার ১ হাজার ২০০ বস্তা আলু আছে। ২৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারলে বাঁচতাম।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বকর বলেন, বাজারে ২৫ থেকে ২৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে আলু। আর পাইকারিতে সাড়ে ১৯ থেকে ২০ টাকা। এ হলো আমাদের দেশের সমস্যা; সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে চাষিদের টাকা।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত আলু চাষ হলেও চাহিদা আছে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই। চাষিরা এ কারণেই লোকসানে পড়ছেন। কৃষকের এ সমস্যা সমাধানে আমরা সরকারি দপ্তরে জানিয়েছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে আলু সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বর্তমানে আলুর দাম কিছুটা কমে গেছে। এখনো দুইমাস সময় আছে আলুর দাম বাড়ার। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে আলুর দাম কিছুটা বাড়ে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।