আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন। গত ২৩ আগস্ট ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পরই চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতার নাম জানা গেছে। তারা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তবে এই নির্বাচন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলোর। এদের মধ্যে বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যেতে চাচ্ছেন না। এর আগে ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। সেবারও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদের ভোটার সংখ্যা ১১৮৬ জন। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, পৌরসভার মেয়র, পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার। তাদের ভোটে একজন চেয়ারম্যান ও ১২ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। ১২ জনের মধ্যে তিনজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য।
রাজশাহীতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন, রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক মোহাম্মদ আলী সরকার, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক এমপি রায়হানুল হক রায়হান, জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবিউল আলম বাবু এবং সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান আখতার।
এই পাঁচজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে রাজশাহীতে পরিচিত। তবে এই পাঁচজনের বাইরে আরও দু-একজন দলের কাছে প্রার্থিতা চাইতে পারেন। এদের মধ্যে কাঁকনহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল মজিদ মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগে সহসভাপতি এ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শরিফের নাম শোনা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে মীর ইকবাল ও রায়হানুল হক ও রবিউল আলম বাবুকে নিয়ে। এদের মধ্যে মীর ইকবাল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রবিউল আলম শহীদ পরিবারের সন্তান। রবিউলের বড় ভাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।
মীর ইকবাল আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য। তিনি ১৬ বছর রাজশাহী শহর ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মীর ইকবাল বলেন, ‘জীবনের শেষ সময়ে এসে নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছি। আশা করি দল আমাকে সেই সম্মান দেবে।’
চারঘাটের বাসিন্দা রায়হানুল হক রায়হান ১৯৯৬ সালের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কাছে হেরে যান। প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা হিসেবে তাঁকে নিয়েও আলোচনা চলছে।
রায়হানুল হক বলেন, ‘আমার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে। এখন দল যা সিদ্ধান্ত দেবে, তা-ই হবে।’
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়ে রবিউল আলম বাবু। আশির দশকের সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির ছাত্র নেতা রবিউল আলম বাবু জেলা কৃষক লীগের টানা তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এছাড়াও তিনি রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাস্টির সাবেক পরিচালক। শহীদ পরিবারের সন্তান রবিউল আলম বাবুর বড় ভাই শামসুল আলম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।
রবিউল আলম বাবু বলেন, ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারো চাইবো। এবার আশাবাদি। তবে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে।’
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন আক্তারুজ্জামান আখতার। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে ভোটার স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা। আমি তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান থাকায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। সে কারণেই জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন চাচ্ছি।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘কেবল তফসিল ঘোষণা করা হলো। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সমন্বিত সিদ্ধান্তে প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সমন্বয় করবেন। তারপরই প্রার্থীর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হবে।’
রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা বলেন আগামী জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল একই কথা জানিয়েছেন ।