ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই মামলায় তার স্ত্রীকেও আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন- শিল্প পুলিশের পরির্দশক মো. শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার। শাহজাহান চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সন্দ্বীপ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। বাসা চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার হাইলেভেল রোডে।
২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল পরিদর্শক শাহজাহানের স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার তিন কোটি ২১ লাখ ৮৬ হাজার টাকার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। সেখানে স্বামীর কাছ থেকে দান স্বরূপ ৪৩ লাখ ১০ হাজার ৮৬৭ টাকার তথ্য দেওয়া হয়। স্বামীর কাছ থেকে দান স্বরূপ পাওনা টাকা ছাড়া ফেরদৌসি নিজের স্থাবর সম্পত্তি দেখিয়েছেন দুই কোটি ৭৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৩ টাকার। কিন্তু দুদক অনুসন্ধান করে এর পরিমাণ পেয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৭ টাকার।
এদিকে ফেরদৌসি তার স্বামীর দান ছাড়াও নিজের নামে ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩১ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। এতে তার মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় তিন কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৬৪ টাকা।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ২০০৬-০৭ কর বছর থেকে ২০২০- ২১ কর বছরে দাখিল করা রিটার্নে বৈধভাবে আয়ের পরিমাণ দেখান দুই কোটি ৪৩ লাখ ৫১ হাজার ৪২৭টাকা। এর মধ্যে মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি খামার থেকে আয় দেখান দুই কোটি ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩৫টাকা। তবে এই আয়ের কোনো প্রমাণপত্র দুদকে দাখিল করা হয়নি।
দুদকের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে নিজের আয় হিসেবে দেখিয়েছেন ফেরদৌসি, যা পুরোপুরি ভুয়া। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের খরচ ও ব্যাংক ঋণ নেওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয় ফেরদৌসীর দাখিল করা রিটার্নে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ফেরদৌসী তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পতির মোট তিন কোটি ২৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯৮ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন এবং একই সময়ে ৬১ লাখ ৬০ হাজার ৭৩৪ টাকা পারিবারিক ব্যয় দেখান। কিন্তু ওই সম্পদের বিপরীতে তার বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া যায় দুইটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ১১৯ টাকার।
মামলার বাদী আতিকুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শক শাহজাহান ও তার স্ত্রী পরষ্পর যোগসাজসে ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিবিহীন এক কোটি ২৮ লাখ ৪ হাজার ৪১৩ টাকার অর্জন করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া সম্পদ বিবরণীতে এক লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করা হয়েছে।’
উভয়ের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ২৬ (২), ২৭ (১) মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২), ৪(৩) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ৭৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শাহজাহানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে আরও একটি মামলা দায়ের করেছিল দুদক। একই মামলায় তার বিরুদ্ধে প্রায় ৫০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগও আনা হয়।