বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ভারতসহ উন্নত বিশ্বে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, সরকার বহাল থেকে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। সেইভাবেই বাংলার মাটিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসুক আর না আসুক, কিছু যায় আসে না।
মঙ্গলবার নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের ১ম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বাগাতিপাড়া পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস। সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যার প্রতিটি পরতে পরতে ইতিহাস জড়িয়ে আছে। যে ইতিহাস বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস। ইতিহাসের বাকে বাকে আওয়ামী লীগের কৃর্তি স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিএনপির অন্তরে সব সময় পাকিন্তানের প্রতি মায়া-দরদ, ভক্তি, শ্রদ্ধা ভালোবাসা উতলে পড়ে। সেই বিএনপির কাছ থেকে আওয়ামী লীগকে শিখতে হবে কীভাবে রাজনীতি করতে হয়? কীভাবে ভোট করতে হয়?
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বিএনপির অন্তরে সব সময় পাকিন্তানের প্রতি মায়া-দরদ, ভক্তি, শ্রদ্ধা ভালোবাসা উতলে পড়ে। সেই বিএনপির কাছ থেকে আওয়ামী লীগকে শিখতে হবে কীভাবে রাজনীতি করতে হয়? কীভাবে ভোট করতে হয়?
তিনি আরো বলেন, অতীতে আওয়ামী লীগ যখন নিরেপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করেছিল তখন বিএনপি বলেছিল, ‘পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নেই।’ সেই বিএনপি এখন এসে বলছে, ‘নিরপেক্ষ র্নিদলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে আমরা আলোচনাতেও যাব না, চা খেতেও যাব না, ইসির সঙ্গেও বসবো না, নির্বাচনেও যাব না।’ এতো শর্ত দিয়ে আপনারা নির্বাচনে আসবেন, সেই শর্ত আমাদের মেনে নিতে হবে, আমরা কি আপনাদের মতো ভুঁইফোড় দল? যে আপনাদের কথা আমাদের শুনতে হবে। অতীতের নির্বাচনে আপনারা আসেননি দেশ কি চলছে না? গণতান্ত্রিকভাবে দেশ কি এগিয়ে যাচ্ছে না? বিদেশীরা দেশের উন্নয়নের প্রশংসা করছে না?
সম্মেলনে খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আপনারা (বিএনপি) মানুষ পুড়িয়েছেন, গাড়ি পুড়িয়েছেন, রেল লাইন, ব্রিজ ভেঙেছেন, গাছ কেটেছেন, এমনকি বায়তুল মোকাররমের সামনে বইয়ের দোকানে পবিত্র কোরআন শরীফেও আগুন দিয়েছেন। শিশুদের হত্যার কারণে, অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যার কারণে বিএনপি জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে, শেষ হয়ে যাবে। বিএনপি নামে কোন দল বাংলাদেশ থাকবে না। অন্য কোন দল হবে, অন্য কোন নামে হবে। আওয়ামী লীগের বিরোধী স্রোত একটা থাকবে। তবে বিএনপি নাম দিয়ে জামাত-শিবিরের সাথে মিলিয়ে একটা উগ্র মৌলবাদী দল, গোষ্ঠী বা জোট এই বাংলাদেশে আর হবে না।
রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দেশের উন্নয়ন আরো অনেক বাকি। নেত্রী শেখ হাসিনা আরো উন্নয়ন দিতে চান, উন্নয়ন করতে চান। তাঁকে সেই সুযোগটা দিতে হবে। কিছুদিন আগে তিনি বলেছেন, ‘ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি এদেশের সবার মা। এদেশে কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না।’ ১০ লাখ গৃহহীন মানুষকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার টার্গেট আছে। আগামীতে আরো বাড়তে পারে। যে নেত্রী মাতৃসুলভ মনোভাব নিয়ে দেশের মানুষকে ভালোবাসে, তিনার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি এখন বিশ্ব দরবারে। জি-৮, জি-৭ এর মতো শিল্প উন্নত বড় গোষ্ঠীগুলো আছে, দেশগুলো আছে, তাদের কাতারে শেখ হাসিনাকে নিয়ে তারা ফটো তোলেন- সেটা আমরা দেখেছি সবাই। শেখ হাসিনা বিদেশ গেলেই তিনি প্রশংসিত হন, পুরস্কৃত হন, তাকে মানবতার মা বলা হয়। তাঁকে নিয়ে কটুক্তি করতে বিএনপির এখনো লজ্জা হয় না। চারঘাটেবসকারী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ নিতান্তই একটা গন্ডমুর্খ, পড়াশোনা বলতে কিছু নাই, বাংলা ভাষা শুদ্ধ করে বলতে পারে না। সেই গন্ডমুর্খ আমাদের নেত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, কত বড় সাহস। বাংলার মাঠিতে বাস করে একবার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, আমাদের নেত্রীকে নিয়ে আর যদি এরকম কটুক্তি করা হয়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার জিভ টেনে ছিড়ে দেবে। আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ইতোমধ্যে রাজশাহীর আদালতে হয়ে গেছে। গতকাল আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। এটি শুধু আবু সাঈদ চাঁদ নয়, এটা বিএনপির মধ্যে যে মানসিকতা, হিংসা, ক্ষোভ, বিদ্বেষ-তারই বহিঃপ্রকাশ চাঁদের মুখ দিয়ে বেড়িয়েছে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, সদস্য বেগম আখতার জাহান, সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এমপি, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) সংসদ সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলাম বকুল, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪৩ এর সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রত্না আহম্মেদ, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান। সম্মেলনে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ইউনুস আলী সভাপতিত্ব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব সঞ্চালনা করেন।
সম্মেলনের ১ম অধিবেশনে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নূরুল ইসলাম ঠান্ডু এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মজিবুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।#