রাজশাহীতে আবার করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার নমুনা পরীক্ষায় এ জেলায় সংক্রমণের হার পাওয়া গেছে ২৯ শতাংশ। ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে করোনা। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের মাঝে। তবে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তেমন দেখা যাচ্ছে না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের আরটি-পিসিআর ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজশাহীর ৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ১৮ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর আগের দিন বুধবার ৪৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সংক্রমণের হার ছিল ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। মঙ্গলবার ৫৫ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ৯ জন। সংক্রমণের হার ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর আগের দিন ২৭ জুন ৪৭টি নমুনা পরীক্ষা হলেও কেউ শনাক্ত হননি। করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণের সময় রাজশাহীতে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হন। ওমিক্রন ধরনের সময়ও একই অবস্থা দেখা যায়। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণের হার শূন্যে নেমে আসে। তাই বন্ধ করে দেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিট। বন্ধ হয় করোনারোগীদের জন্য নির্ধারিত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রও (আইসিইউ)। কিন্তু জুনের প্রথম থেকেই দু’একজন করে আবার রোগী শনাক্ত হতে শুরু করেছে মানুষের মাঝে সচেতনতার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শহর ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা দু একজন মানুষ ছাড়া কেউই এখন আর মাস্ক পরছেন না। সাধারণ মানুষ তো বটেই, সরকারি কর্মকর্তাদেরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে মাস্ক ছাড়াই। ঘন ঘন হাত ধোয়া কিংবা হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহারের অভ্যাসও ভুলে গেছেন বেশির ভাগ মানুষ। রামেক হাসপাতালের আইসিইউ-এর ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, কয় দিন হলো আমার মোবাইলটা বেশি বাজতে শুরু করেছে। মানে হচ্ছে আবার শুরু হয়ে গেছে। এবার কোথায় গিয়ে থামবে কে জানে। সরকারিভাবে কী পদক্ষেপ নিলো সেটা না ভেবে নিজের এবং প্রিয়জনের জীবন বাঁচানোর জন্য এখনই সবার সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, কয় দিন আগেই ভারতে সংক্রমণের হার ছিল ৪৫ শতাংশ। এটা ছিল আমাদের জন্য অশনি সংকেত। তাই যারা এখনও তিন ডোজ টিকা গ্রহণ করেননি, তাদের দেরি করার কোন সুযোগ নেই। মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়ার অভ্যাসটা আবার গড়ে তুলতে হবে। অবিলম্বে সকল প্রকার জনসমাগম পরিহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলায় করোনারোগী দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে। এখনও আমরা টিকাদানে জোর দিচ্ছি। যারা এখনও তিন ডোজ টিকা নেননি ,তারা যেন দ্রুত তিন ডোজ টিকা নেন। সে আহ্বান জানাচ্ছি। রোগী বেড়ে গেলে হাসপাতাল ও আবার প্রস্তুত হবে। তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, মানুষের মাঝে সচেতনতা কম। কম। যারা টিকা নিয়েছেন এবং শারীরীকভাবে সুস্থ তারা এবার আক্রান্ত হলেও খুব একটা সমস্যা হবে না। তারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেই হবে। কিন্তু আগে থেকেই যারা জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের সমস্যা হবে। এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী আসেনি। তবে যদি আসেও তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রথমে তিনটি ওয়ার্ডে রোগী রাখার চিন্তা-ভাবনা আছে। তখন ওয়ার্ডগুলোর রোগীদের অন্যখানে সরানো হবে