রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিশারীজ বিভাগের তিনজন গবেষক মাছ থেকে প্রোটিন সমৃদ্ধ ৫ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন ৯টি খাবার তৈরি করেছেন। রোববার (১২ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত ‘গবেষণা ফলাফল শেয়ার ও প্রোডাক্ট লঞ্চিং’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে এ দাবি করেন তারা।
খাবারগুলো হলো- রেডি টু কুক ধরনের মধ্যে রয়েছে ফিশ বল (তেলাপিয়া ও টুনা), ফিশ সসেজ (পাঙ্গাস ও ম্যাকেরেল), ব্যাটারড এন্ড ব্রেডেড ফিশ (তেলাপিয়া ও হোআইট স্ন্যাপার), ফিশ মেরিনেডস (সারডাইন) এবং রেডি টু ইট ধরনের মধ্যে রয়েছে ফিস ক্র্যাকার্স (তেলাপিয়া ও টুনা)। ভোক্তা পর্যায়ে এসব খাবারের স্বাদ ও মান যাচাইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যুভেনিয়র শপ, আমানা বিগ বাজার রাজশাহী ও বিএআরসি ক্যান্টিন ঢাকায় দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে খাবার ক্রয় করে সাধারণ মানুষরা একটি তথ্য ফর্ম পূরণ করতে পারবেন।
(বিএআরসি) ও বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগীতায় ‘Development of Fish-based food products and extension of shelf life to enhance nutritional security’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় তারা গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষকরা হলেন- মুখ্য গবেষক অধ্যাপক ড. তরিকুল ইসলাম, সহ-গবেষক অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন ও ড. সৈয়দা নুসরাত জাহান।
অনুষ্ঠানে মুখ্য গবেষক ও ফিশারীজ বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘শহুরে মানুষ এখন কাঁচা উপাদানের পরিবর্তে তাৎক্ষনাত রান্নার উপযুক্ত অথবা খাওয়ার উপযুক্ত খাদ্যদ্রব্য খুঁজে বেড়ায়। আমাদের দেশের সুপারশপগুলোতে বিভিন্ন ধরণের মাংসজাত দ্রব্য প্যাকেটজাত খাবার পাওয়া গেলেও মৎস্যজাত দ্রব্য খুব কম পাওয়া যায়। হিমায়িত দ্রব্যের পাশাপাশি কীভাবে শীতলীকৃত এসব মৎস্যজাত দ্রব্য বাজারে প্রচলন করা যায় সেটি নিয়ে ভারতে হবে। কারণ আমাদের দেশের ভোক্তারা হিমায়িত খাবারের চেয়ে শীতলীকৃত দ্রব্য বেশি পছন্দ করে।
তিনি আরো বলেন, ‘মডিফাইড এটমোস্ফিয়ার প্যাকেজিং (গঅচ) হলো টাটকা ন্যূনতম প্রক্রিয়াজতকৃত খাবারের স্থায়িত্বকাল বৃদ্ধির একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট গ্যাস অথবা গ্যাসের মিশ্রণ দ্বারা প্যাকেটের ভিতরে খাবারের চারিদিকের বায়ুকে প্রতিস্থাপন করা হয়। এভাবে দ্রব্যের প্রাথমিক সতেজভাব দীর্ঘায়িত হয়। এটির মাধ্যমে দ্রুত পচনশীল খাদ্য দ্রব্য মাছ, মাংস, ফলমূল এবং সবজির স্থায়িত্বকাল বৃদ্ধি করে থাকে।
সাধারণত দ্রব্যের ধরণ, প্যাকেজিং উপাদান এবং সংরক্ষণ তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে প্যাকেটের ভিতরের গ্যাসের মিশ্রণ নির্ধারণ করা হয়। উন্নত দেশসমূহে প্যাকেজিং শীতলীকৃত মাছ, মাংস এবং এদের বিভিন্ন দ্রব্য বাজারে প্রদর্শনের জন্য বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। এটা শীতলীকরণ তাপমাত্রায় টাটকা মাছের স্থায়িত্বকাল ৫০-৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারে। সুতরাং এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আমাদের দেশেও বাজারে গুণাগুণ সমৃদ্ধ মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্যের যোগান নিশ্চিত করা যাবে।
তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে এই শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের কাজ করা হয়। সেগুলো হলো- স্বাদুপানি ও সামুদ্রিক মাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের রেডি টু কুক এবং রেডি টু ইট খাদ্য দ্রব্য তৈরি করা, মডিফাইড এটমোস্ফিয়ার প্যাকেজিং করে বিভিন্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ ও স্থায়িত্বকাল নির্ণয় করা এবং প্যাকেটজাত এসব মৎস্যজাত দ্রব্য স্বল্প পরিসরে বিক্রি করার মাধ্যমে ভোক্তাদের গ্রহণযোগ্যতা নির্ণয় করা।’
সৈয়দা নুসরাত জাহানের সঞ্চালনায় সহ-গবেষক অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল মৎস্যজাত খাদ্যদ্রব্য হবে দেশের দ্বিতীয় রপ্তানীজাত পণ্য। আমরা সেই স¦প্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া বর্তমান সময়ে অনেকে নানা কারণে মাছ থেকে চান না। তাদের জন্য সরাসরি মাছ গ্রহণ না করে যাতে মাছের প্রোটিন পান সেটি নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি আমাদের তৈরি এসব খাবার মানুষের জন্য ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসবে।’
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধরনের চরিত্র হওয়া উচিত আপনারা সেটি গবেষণার মাধ্যমে পালন করেছেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু পুঁথিগত পাঠদান নয় বরং বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদানের সঙ্গে সঙ্গে গবেষণা করা ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এছাড়া কোনো জ্ঞান যদি মানব কল্যাণে ব্যাবহার না হয় তাহলে সে জ্ঞান মূল্যহীন। আপনারা যেটি করেছেন সেটি বর্তমান সময়ের জন্য বেশ কার্যকরী।’
ফিশারীজ বিভাগের সভাপতি মনজুরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বিশেষ অতিথি হিসেবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হকসহ বিভিন্ন বিভাগের ডিন ও অধ্যাপকরা উপস্থিত ছিলেন।