শনিবার (২১ মে) ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ করা ওই শিশু শিক্ষার্থীকে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার সুন্দরপুর সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে ১৯ মে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মাটিলা বিওপি ক্যাম্পের এবং ঝিনাইদহের মহেশপুর থানা পুলিশ সদস্যরা যৌথভাবে শ্বাসরুদ্ধকর এক অভিযান চালিয়ে মানব ও শিশু পাচার সংঘবদ্ধ চক্রের জিম্মি দশা থেকে তাদের উদ্ধার করে। বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযান।
এদিকে শিশু শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের কবল থেকে উদ্ধারের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষানগরী সৈয়দপুরের স্কুল শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা মানব ও শিশু পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতাসহ ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, উদ্ধার শিক্ষার্থী সৈয়দপুর শহরের কাজীরহাট পানির ট্যাঙ্কি এলাকার জনৈক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের আদরের মেয়ে। সে শহরের বিমানবন্দর সড়কের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
ঘটনার দিন গত ২১ মে বেলা ১১টার দিকে ওই শিশু শিক্ষার্থী প্রতিদিনের মতো তাদের বাসা থেকে স্কুলে যায়। এরপর একটি সক্রিয় মানব ও শিশু পাচারকারী চক্রের সদস্যরা সুকৌশলে স্কুল গেট থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত শুক্রবার শিশু শিক্ষার্থীর বাবা সৈয়দপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
শিশুটির বাবা জানান, ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের সুন্দরপুর সীমান্তবর্তী জুবলি এলাকার একটি মেহগনি গাছের বাগানের মধ্যে তার মেয়ে সহ ১১ জন শিশুকে হাত পা বেঁধে ও মুখে টেপ লাগিয়ে আটকে রাখা হয়। রাতেই তাদের সবাইকে সেখানে থেকে ভারতে পাচারের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল পাচারকারী চক্রের। সেখানে সংঘবদ্ধ মানব ও শিশু পাচারকারী চক্রের সদস্যের পাচার কাজে সহায়তাকারী হিসেবে নারী সদস্যরাও উপস্থিত ছিল।
সূত্রটি জানায়, এ সময় সেখানে সৈয়দপুর থেকে অপহৃত ওই শিশু শিক্ষার্থী তার মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে শেষ বারের মতো একটু কথা বলার আকুতি জানায় পাচার কাজে সহায়তাকারী এক নারী কাছে। এ সময় পাচারের উদ্দেশ্য অপহরণ করা শিশুটির ব্যাকুল আকুতিতে এক নারীর মন কিছুটা নরম হয়। সে শিশুটিকে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ সময় তার (শিশু) মায়ের মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় তার খালার সঙ্গে কথা বলেন।
শিশুটি মুঠোফোনে তার খালাকে বলে, ‘খালামনি, তোমরা আমাকে বাঁচাও, এরা আমাকে একটু পরেই ভারতে পাচার করে দেবে।’ শিশুটি মুঠোফোনে খালাকে এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে পাচারকারী দলের সদস্যরা ওই মুঠোফোনটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
মুঠোফোনে শিশুটির খালা এ ধরনের আবেগঘন আকুতি মিনতি শুনে তৎক্ষণাৎ ঘটনাটি তার বাবা-মাকে অবগত করেন। পরবর্তীতে ওই মুঠোফোনে অনেক বার চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করা যায়নি। এ অবস্থায় শিশুটির বাবা বিষয়টি তাৎক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবগত করেন। আর এ তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওই মুঠোফোনটি ট্র্যাকিং করে সেটির অবস্থান নিশ্চিত হন।
পরবর্তীতে শিশুটিকে উদ্ধারে বর্ডার গার্ড ৫৮, ব্যাটালিয়নের মাটিলা ক্যাম্পের ও ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানা পুলিশ সদস্যরা যৌথ অভিযোগে নামেন।
এ অভিযানের এক পর্যায়ে ওই দিন রাত দেড়টার দিকে মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের সুন্দরপুর সীমান্তের জুবলি এলাকার একটি মেহগনি বাগান থেকে সৈয়দপুর থেকে অপহৃত শিশুসহ ১১ শিশুকে উদ্ধার করে।
সীমান্ত রক্ষা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার শিশুদের প্রত্যেকর বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে।
জানা গেছে, সম্প্রতি ভারত থেকে মানব ও শিশু পাচারকারী চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য সৈয়দপুরে এসে আস্তানা গড়ে তুলেছে। এ চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য সামস্ নিজামী আতিব। সে মূলত ভারতীয় নাগরিক। গত কয়েকদিন আগে সে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসে। তাকে সৈয়দপুরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। কিন্তু শিশু শিক্ষার্থী অপহরণের পর থেকে তার সৈয়দপুরে দেখা মিলছে না। শহরের বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এতে অনেকেই তাদের ফেসবুকের টাইমলাইনে ওই ব্যক্তিই ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সৈয়দপুরের শিশু শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে উল্লেখ করে তার ছবিসহ পোষ্ট দেন। এতে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এ পোষ্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান শিশু শিক্ষার্থী নিখোঁজে সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।