ঢাকা ০৬:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জীবনের শেষ চাওয়া হিসেবে তাঁর মৃত্যুর পর লাশটি যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হয় সে আবেদন জানিয়েছেন। 

৯০ বছর বয়সী এক মুক্তিযোদ্ধার শেষ আকুতি

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:০৯:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২
  • ৪৫৫ বার পড়া হয়েছে

ফাইল ছবি

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সেরাপাড়ার বার্ধক্য জনিত শারীরিক অসুস্থ ৯০ বছরের এক মুক্তিযোদ্ধা সংবাদ কর্মীদের কাছে শোনালেন তাঁর মুক্তিযুকালীন বীরত্বের কথা এবং শোনালেন স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব থেকে শুরু করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ দশকের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর নেতৃত্বের ইতিহাস। সেই সাথে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি জীবনের শেষ চাওয়া হিসেবে তাঁর মৃত্যুর পর লাশটি যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হয় সে আবেদন জানিয়েছেন।
তিনি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তোরাব আলী। পিতা মৃত হাজী নাসিরুদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ৩ নং পাকড়ী ইউনিয়ের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ৫৪ বছর রাজনৈতিক জীবনে তিনি  ১৯৭২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর ছেলে আব্দুর রাকিব সরকারও এই ইউনিয়ের আওয়ামী সমর্থিত চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন। আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে এই পরিবারের ৭ জন আলহাজ মোঃ সামসুদ্দিন, কোরবান আলী, জয়নাল আবেদীন, এমরান আলী, সোলেমান আলী, ফজলুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক’কে ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাক আর্মি তুলে নিয়ে যায় এবং নির্মম অত্যাচার করে তোরাব আলীর খোঁজ জানতে চায়। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াত-বিএনপির জোট সরকারের আমলেও বারংবার চরম অত্যাচারের স্বীকার হয়েছিল তোরাব আলীর পরিবার।
তোরাব আলী জানান, মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার পানিপিয়া শেখ পাড়ায় রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড চালনার ট্রেনিং নিয়েছিলেন তিনি। এর পর তিনি পাহাড়পুর, লালগোলা, কাঁকন হাট ও তানোর-গোদাগাড়ী এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন। সেসময় তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন তাঁদের অধিকাংশই বিগত হয়েছেন। জীবিতদের মধ্যে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী সুশিল সরেন (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩০২০৯০০৯৩), বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মালেক  (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩০২০৯০০৯৯) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী ঠাকুর মাঝি  (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩০২০৯০০৯১)। মুক্তিযুদ্ধে ৭ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন লেঃ কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামান এবং ৪ নং সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর গিয়াস।
সংবাদ কর্মীদের সাথে আলাপ কালে সেখানে উপস্থিত ছিলেন কাঁকনহাট পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও গোদাগাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম মহসিন এবং
কাঁকনহাট পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আকবর। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা তোরাব আলী সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং গোদাগাড়ী-কাঁকন হাট সহ আওয়ামী লীগের একজন শক্তিশালী সংগঠক ও নেতা। এই এলাকার প্রত্যেকেই জানেন তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বা ভাতা পাওয়ার আশা বা চেষ্টা কোনদিনই করেননি বা প্রয়োজনও মনে করেননি। সেকারনে তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে কোন কাগজ-পত্রও সংগ্রহে রাখেননি।  তবে তিনি জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসে শুধুমাত্র তাঁর মৃত্যুর পর লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের দাবি তুলেছেন। এটি একটি যৌক্তিক দাবি বলে আমরা মনে করি। এটি করতে পারলে আমরাও মানসিক ভাবে শান্তি পাবো। আর না হলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটি একটি অপমান জনক ব্যাপার হবে।
আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য পুত্র রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি বীর মুক্তিযোদ্ধা তোরাব আলী’র শেষ ইচ্ছাটি পূরণ করা হোক।
জনপ্রিয় সংবাদ

জীবনের শেষ চাওয়া হিসেবে তাঁর মৃত্যুর পর লাশটি যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হয় সে আবেদন জানিয়েছেন। 

৯০ বছর বয়সী এক মুক্তিযোদ্ধার শেষ আকুতি

আপডেট সময় ০৪:০৯:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সেরাপাড়ার বার্ধক্য জনিত শারীরিক অসুস্থ ৯০ বছরের এক মুক্তিযোদ্ধা সংবাদ কর্মীদের কাছে শোনালেন তাঁর মুক্তিযুকালীন বীরত্বের কথা এবং শোনালেন স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব থেকে শুরু করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ দশকের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর নেতৃত্বের ইতিহাস। সেই সাথে কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি জীবনের শেষ চাওয়া হিসেবে তাঁর মৃত্যুর পর লাশটি যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হয় সে আবেদন জানিয়েছেন।
তিনি মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তোরাব আলী। পিতা মৃত হাজী নাসিরুদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ৩ নং পাকড়ী ইউনিয়ের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ৫৪ বছর রাজনৈতিক জীবনে তিনি  ১৯৭২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর ছেলে আব্দুর রাকিব সরকারও এই ইউনিয়ের আওয়ামী সমর্থিত চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন। আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে এই পরিবারের ৭ জন আলহাজ মোঃ সামসুদ্দিন, কোরবান আলী, জয়নাল আবেদীন, এমরান আলী, সোলেমান আলী, ফজলুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক’কে ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাক আর্মি তুলে নিয়ে যায় এবং নির্মম অত্যাচার করে তোরাব আলীর খোঁজ জানতে চায়। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াত-বিএনপির জোট সরকারের আমলেও বারংবার চরম অত্যাচারের স্বীকার হয়েছিল তোরাব আলীর পরিবার।
তোরাব আলী জানান, মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার পানিপিয়া শেখ পাড়ায় রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড চালনার ট্রেনিং নিয়েছিলেন তিনি। এর পর তিনি পাহাড়পুর, লালগোলা, কাঁকন হাট ও তানোর-গোদাগাড়ী এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন। সেসময় তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন তাঁদের অধিকাংশই বিগত হয়েছেন। জীবিতদের মধ্যে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী সুশিল সরেন (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩০২০৯০০৯৩), বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মালেক  (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩০২০৯০০৯৯) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী ঠাকুর মাঝি  (লাল মুক্তিবার্তা নং ০৩০২০৯০০৯১)। মুক্তিযুদ্ধে ৭ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন লেঃ কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামান এবং ৪ নং সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর গিয়াস।
সংবাদ কর্মীদের সাথে আলাপ কালে সেখানে উপস্থিত ছিলেন কাঁকনহাট পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও গোদাগাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম মহসিন এবং
কাঁকনহাট পৌর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আকবর। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা তোরাব আলী সম্পর্কে বলেন, তিনি ছিলেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং গোদাগাড়ী-কাঁকন হাট সহ আওয়ামী লীগের একজন শক্তিশালী সংগঠক ও নেতা। এই এলাকার প্রত্যেকেই জানেন তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বা ভাতা পাওয়ার আশা বা চেষ্টা কোনদিনই করেননি বা প্রয়োজনও মনে করেননি। সেকারনে তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে কোন কাগজ-পত্রও সংগ্রহে রাখেননি।  তবে তিনি জীবনের এই শেষ প্রান্তে এসে শুধুমাত্র তাঁর মৃত্যুর পর লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের দাবি তুলেছেন। এটি একটি যৌক্তিক দাবি বলে আমরা মনে করি। এটি করতে পারলে আমরাও মানসিক ভাবে শান্তি পাবো। আর না হলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটি একটি অপমান জনক ব্যাপার হবে।
আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় নেতা শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য পুত্র রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি বীর মুক্তিযোদ্ধা তোরাব আলী’র শেষ ইচ্ছাটি পূরণ করা হোক।