আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ফিরে না এলে দেশের অবস্থা কী হতো? ২০২২ সালের ১৭ মে আমরা কে কোথায় থাকতাম? বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের কাছে আত্মমর্যাদাশীল দেশের একটি উদাহরণ। আমরা যদি একটু ভাবি আজ থেকে ৪২ বছর আগে দেশের অবস্থা কতটা মর্যাদাহীন ছিল। আজ আমরা যে বাংলাদেশ দেখছি তা শেখ হাসিনার লড়াই সংগ্রামের কারণে সম্ভব হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে তিনি একাই এই লড়াই চালিয়ে গেছেন।
১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টেলিভিশনে ‘ডেভিড ফ্রস্ট প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ’-এ যখন বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আপনি যখন জানলেন, দেশে আপনার কবর খনন হয়েছে তখন আপনার মনে কার কথা প্রথম জাগল? উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার প্রথম চিন্তা আমার দেশের জন্য, আমার আত্মীয়-স্বজনদের চাইতেও আমার ভালোবাসা দেশের জন্য। আমার যা কিছু দুঃখভোগ, সে তো আমার দেশেরই জন্য।
১৯৮১ সালের ’১১ মে ‘নিউজউইক’-এ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ‘বক্স আইটেম’ হিসেবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র কর্তৃক ক্ষমতা দখলকালে নিহত পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারিণী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমনকি যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না। তিনি বলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত থেকে বঞ্চিত হয়।’
অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও জনগণের জন্য দেশে ফিরতে ব্যাকুল ছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘যেসব কাজ অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য বলে আমি বিবেচনা করি তার মধ্যে থাকবে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।’
নিজের কর্তব্য পালনে তাঁর পিতার অবদান সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। ‘তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) প্রতি বাংলাদেশের জনগণের প্রীতি ও ভালোবাসা ছিল অপরিমিত,’ শেখ হাসিনা বলেন। ‘আমাকে (আওয়ামী লীগের) সভানেত্রী নির্বাচিত করে পরোক্ষভাবে তাঁকেই সম্মান দেখানো হয়েছে। আমি তাঁর অসমাপ্ত কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে পারব।’ (নিউজউইক, ১১ মে, ১৯৮১)
২০২১ সালের আগস্ট মাসে ‘১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড/প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ দিন’ পাঠকদের হাতে এসেছিল। পশ্চিম জার্মানির এক প্রবাসী লেখক সরাফ আহমেদ এই বইটা লিখেছেন। বইটার প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এতিম করে দিয়েছিল। তারপর বাঙালি জাতির জীবনে অমানিশার অন্ধকার। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার কষ্ট এখনকার সময়ে আওয়ামী লীগারদের বোঝার কথা নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের পুরোনো নেতারা কতখানি উপলব্ধি করেছিলেন। কারা কারা মমতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। হাতেগোনা কয়েকজন।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু যখন সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন, তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন ব্রাসেলসে। নিষ্ঠুর সেই ঘটনার পরের দুঃসহ কয়েকটা দিন কীভাবে কাটলো তাদের? প্রবাসী লেখক সরাফ আহমেদের লেখা এই বই থেকে- যে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর দিয়ে ৩০ জুলাই ১৯৭৫ শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও দুই শিশুসন্তান জয় আর পুতুলকে নিয়ে জার্মানিতে এসে পৌঁছেছিলেন- সেই বিমানবন্দর হয়েই ২৫ দিন পর ২৪ আগস্ট, ভগ্নহৃদয় নিয়ে গোপনে তারা চলে গেলেন ভারতের দিল্লিতে।
যাওয়ার বেলায় বিমানবন্দরে আমি তাদের মলিন মুখচ্ছবি দেখেছিলাম। যেদিন তারা এখানে আসেন, সেদিন তাদের মধ্যে ছিল আনন্দ-অনুভূতি। আর যাওয়ার বেলায় বেদনা ও আতঙ্ক। অজানার পথে পা। কার্লসরুয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট হয়ে দিল্লি পৌঁছানোর পর বিমর্ষ হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৭৬-এর শেষ দিকে শেখ রেহানা লন্ডনে চলে যান। শুরু হয় দুই বোনের নতুন এক জীবনযুদ্ধ।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫, শুক্রবার। জার্মানির বনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ফোনে দুঃসংবাদ পেলেন, দেশে অভ্যুত্থান হয়েছে, বঙ্গবন্ধু আর নেই। তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা তখনও অস্পষ্ট। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন ব্রাসেলসে, রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাড়িতে। এ খবর তারা পাননি। পরদিন সকালেই সীমান্ত পেরিয়ে তাদের যেতে হবে জার্মানিতে, রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বাসায়।
এমনকি রটনা ছড়িয়ে পড়েছিল, নিহত রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ১৬ আগস্ট জার্মানির ‘দ্য ভেল্ট’ পত্রিকার দুই রিপোর্টার ক্লাউস কর্ন, উলরিশ লুকে এবং ফটো সাংবাদিক রিচার্ড সুলজে-ফরবের্গ হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বাসায় যান।
বাসার নিচতলায় ড্রয়িংরুমে তাদের আধঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। বাসার তৃতীয় তলায় তিনটি ঘর। শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, ওয়াজেদ মিয়া, জয় ও পুতুলের সেখানে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সাংবাদিকরা শুনছেন, ওপর তলা থেকে কান্না ভেসে আসছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ‘দ্য ভেল্ট’ পত্রিকা লিখেছে- শোকে মুহ্যমান শেখ হাসিনা সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলেন। পরনে হলুদ পাড়ের সবুজ শাড়ি। ডান হাতে আঁচল ধরা। বাঁ হাতের সাদা রুমালে বারবার চোখ মুছছেন। পেছন পেছন নেমে এলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। তিনিও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। দুজনই ড্রয়িংরুমের খয়েরি সোফায় বসলেন।
মুখে কথা নেই। নিচের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছেন। কেঁপে কেঁপে উঠছেন কান্নার দমকে। দুই বোনের কান্নায় বড় ড্রয়িংরুমের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো। এভাবেই তাঁরা তিন-চার মিনিট সোফায় বসে রইলেন। রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে তাঁদের সোফার কাছে গিয়ে হাসিনা ও রেহানার মাথায় হাত দিলেন। ওঁদের নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে গেলেন সিঁড়ি বেয়ে উপরে।
এটি ছিল ক্লাউস কর্ন ও উলরিশ লুকের যৌথ লেখা। ১৮ আগস্ট তিনটি ছবিসহ চার কলামে খবরটি প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ‘বনে শোকগ্রস্ত শেখ মুজিবের কন্যারা’। আবেগী ও হৃদয় স্পর্শ করা ৭০ মিনিটের ডকুফিল্মে ইতিহাসের অভূতপূর্ব উপস্থাপনায় ফুটে উঠেছে ‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল’। উঠে এসেছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে একজন শেখ হাসিনার গল্প; যেখান থেকে তার জীবনের নানা অজানা বিষয় জানতে পারবে নতুন প্রজন্ম। এক কথায় টুঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা এবং প্রধানমন্ত্রী নয়, একজন ‘সাধারণ’ নারীর ‘অসাধারণ’ হয়ে ওঠার বাস্তব গল্পই যেন দেখানো হয়েছে এ ফিল্মটিতে।
ছবির শুরুতেই দেখা যায় ব্যক্তি-জীবনের শেখ হাসিনাকে, যেখানে তিনি পরিবারের সবার জন্য রান্না করছেন এবং একই সঙ্গে নাতি-নাতনিদের রান্না শেখাচ্ছেনও। আর এই রান্নাঘরের সূত্র ধরেই তিনি স্মৃতিচারণ করেন তার মায়ের হাতের রান্না ও খাবারের প্রতি বাবার ভালোবাসা নিয়ে। বলেন, মা অনেক সুন্দর রান্না করতে পারতেন। আর বাবা ভালোবাসতেন মুরগির মাংস, গরুর মাংস, রেজালা।
শুধু শেখ হাসিনা নয়, এই ডকুফিল্মে কথা বলেছেন ছোট বোন শেখ রেহানাও। দুই বোনের ব্যক্তি-জীবনের নানা গল্প ঠাঁই পেয়েছে এই ৭০ মিনিটের গল্পে। ছবিতে দুই বোনের ছোটবেলার স্মৃতি নিয়ে মজা করে শেখ রেহানা বলেন, ও (শেখ হাসিনা) তো ছোটবেলায় ভীষণ অলস ছিল। একটা ঘরের ভেতরই সব। এখন তো কত কাজ অথচ ছোটবেলায় এতটা অলস ছিল যে ওর ঘরের নাম রাখা হয়েছিল ‘আলসেখানা’!
দুই.
বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা- বাঙালি জাতির এই দুই কাণ্ডারির বারবার দেশে ফেরার অনুপ্রেরণার উৎসই ছিল জনগণ। সোনা না-কি পুড়ে পুড়েই খাঁটি সোনায় পরিণত হয়- বঙ্গদেশে কথাটির বেশ প্রচলন। তবে এই কথাটি শুধু স্বর্ণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, হেমরূপী মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও প্রযোজ্য। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রায় সবাই ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে হারিয়ে গিয়েছিল; কিন্তু শিবরাত্রির সলতেটি যে তখনও রয়ে গিয়েছিল সবার অগোচরে!
বঙ্গবন্ধু তার শাহাদাতের সময় যেমন সদ্য স্বাধীন এক নাজুক বাংলাদেশকে দেখে গিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি রেখে গিয়েছিলেন তার এক খণ্ড হৃদয়কে। সময়ের পরিক্রমায় শত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তিনিই ১৯৮১ সালের ১৭ মে রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো ফিরে এসেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন একজন দক্ষ কাণ্ডারি, একজন জাত যোদ্ধা।
শেখ হাসিনা মানেই হলো হার না মানা এক লড়াকু প্রতিচ্ছবি। বাঙালি জাতিতে যতবারই ক্রান্তিকাল এসেছে, ততবারই তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ক্রান্তির আগুনে। যে সবকিছু হারিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে জেগে উঠেছে বারবার। পিতার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করে যাচ্ছেন সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।
ক্ষণজন্মা এই বঙ্গকন্যা জন্মেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সেই নিভৃত পল্লী গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়, যখন ১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলমানরা বহু স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শেখ হাসিনার ব্যক্তি-জীবনে তার গ্রাম টুঙ্গিপাড়া যে মায়াবী ভূমিকা রেখেছে, আমরা তার ছোঁয়া পাই তার প্রবন্ধ সাহিত্যে।
স্মৃতির দখিন দুয়ার প্রবন্ধে তিনি শিল্পির নিপুণ তুলিতে মানসপটে এঁকেছেন তার শৈশবের দিনগুলো। এ যেন বাংলা সাহিত্যের আরেক বিভূতিভূষণ। যিনি অপু-দুর্গার নিশ্চিন্দপুর গ্রামকে তুলে এনেছেন টুঙ্গিপাড়ায়। মাঠ, ঘাট পুকুর পাড়, আমের মুকুল, ভাঁটফুল কী নেই তার বর্ণনায়। কিছুটা শুনি এই বর্ণনাতেই-
‘গ্রামের বড় তালাবের (পুকুর) পাড়ে ছিল বিশাল এক বরুই গাছ। ঝাঁকুনির ফলে লালের আভা লাগা সব থেকে টলটলে বরুইটা পুকুরের গভীরে পড়ত এবং কারও পক্ষে যখন সেটা তুলে আনা সম্ভব হতো না। তখন সেই বরুইটার জন্য মনজুড়ে থাকা দুঃখটুকু এখন ভুলতে পারলাম কই?” সেদিন কে জানত, এই লাল বরুই না পাওয়ার দুঃখে কাতর কিশোরীটিই হবে একদিন এই জাতির কাণ্ডারি!
জাতির কর্ণধাররূপী শেখ হাসিনার চরিত্রও অনন্য। তিনি বাংলাদেশের স্থপতির উত্তরসূরি। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী। নব্বইয়ের দশকের সূচনালগ্নে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী। তিনিও বঙ্গবন্ধুর মতো এই বাংলার মাটি, জল, হাওয়া, ধুলোয় বেড়ে ওঠা মানুষ। টুঙ্গিপাড়ার পাঠশালা থেকে টিকাটুলি নারী শিক্ষার মন্দিরে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি।
১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক আর ১৯৬৭ সালে বদরুন্নেসা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হন। এরপর সাহিত্যিক মুনীর চৌধুরীর একান্ত উৎসাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। আর এ সময়টাই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের মাইলফলক স্পর্শের দিনগুলো। যখন বাঙালি জাতি পেয়েছিল ৬ দফার মতো জাতীয় জীবনের লক্ষ্য আর বঙ্গবন্ধুর মতো একজন গতিশীল সম্মোহনী রাজনৈতিক নেতা। তাই তো ৬ দফা ও আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ১১ দফায় বাঙালি ছাত্র-যুবক প্রাণ সঞ্চার করলো।
মওলানা ভাসানীকে মিছিলের সামনে রেখে আইয়ুব-মোনায়েম চক্রকে হুঙ্কার দিল- ‘জেলের তালা ভাঙব, শেখ মুজিবকে আনব’। আগরতলা মামলার প্রহসন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছিলেন একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের ভাষণ তিনি রেসকোর্স ময়দানে বসে প্রত্যক্ষ করেছেন সমগ্র জাতির সঙ্গে। এ যেন রাজনীতির কবির এক অতিউৎসাহী ভাব শিষ্যা।
তিন.
১৯৮১ সালের ১৮ মে দৈনিক ইত্তেফাকে লেখা হয়েছিল, “দীর্ঘ ছ’ বছর বিদেশে অবস্থানের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সতরই মে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন।
লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেন তাদের নেত্রীকে। মধ্যাহ্ন থেকে লক্ষাধিক মানুষ কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করবে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিমানবন্দরে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।”
ওই সময়কার সরকারি পত্রিকা ‘দৈনিক বাংলা’ ১৮ মে, ১৯৮১ শেখ হাসিনার বিমানবন্দর সংবর্ধনা সংবাদে উল্লেখ করেছিল, ‘‘ঐ দিন কালবোশেখী ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ৬৫ মাইল। এবং এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে লাখো মানুষ শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য রাস্তায় ছিল।”
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন আওয়ামী লীগ সমর্থক পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। ‘সাপ্তাহিক রাজনীতি’ নামক পত্রিকায় ‘স্বাগতম শেখ হাসিনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনা দেশের বুকে ফিরে আসছেন নির্যাতিত-শোষিত মানুষের মুক্তির করিয়ে দিয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে এসেছিলেন, সেদিন স্বজন হারাবার ব্যথা ভুলে গিয়েও লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল নেতাকে একনজর দেখার জন্য।
গতকালও হয়েছে তাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছয় ঘণ্টা। [ দৈনিক সংবাদ, ঢাকা, ১৮ মে ১৯৮১]
আরেকটি রিপোর্ট বলা হয়, কখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমান অবতরণ করবে সেদিকে নজর রেখে লক্ষাধিক মানুষ মধ্যাহ্ন থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকেই বিমানবন্দরে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। হাজার হাজার মানুষ ভিআইপি লাউঞ্জের গেটে নিয়োজিত পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে প্রথমে দেওয়ালের উপর ওঠে।
একই সময়ে বিমানবন্দর ভবনের দোতলায় কন্ট্রোল টাওয়ারের যেখানে স্থান করা সম্ভব সেখানেই জনতা উঠে যায়। উদ্দেশ্য শেখ হাসিনাকে একনজর দেখা। পুলিশ বারবার চেষ্টা করেও তাদের সরাতে পারেনি। বিমান অবতরণের সময় যতই এগিয়ে আসছিল, বাইরে অপেক্ষমাণ জনতার স্রোত ততই উদ্বেল হয়ে উঠছিল।
বিমানবন্দরের বাইরে অসংখ্য মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। অগণিত ট্রাক-বাসে লাখো জনতা শহর থেকে ১১ মাইল দূরে অবস্থিত বিমানবন্দরের ভিতরে ও বাইরে নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। তারা জনতাকে অতি অল্প সময়ের জন্য বিমানবন্দরের কাছাকাছি আসা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়।
বিকেল ৩টায় জনতা বিমানবন্দরের সামনের পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। ৩টা ২০ মিনিটে তারা দেওয়াল টপকে ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে বিমানবন্দরের ভিতর ঢুকে পড়ে। আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকরা শত চেষ্টা করেও তাদের সরাতে পারেননি। বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বোয়িং আকাশে দেখা যায়। এই সময় হঠাৎ করে হাজার হাজার মানুষ বাইরে থেকে ভিতরে ঢুকে একেবারে বিমানবন্দরের রানওয়ে পর্যন্ত চলে যায়।
আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আহমদ ও মোহাম্মদ হানিফ জিপে করে মাইক দিয়ে তাদের রানওয়ে ও টারম্যাক থেকে সরে যাওয়ার জন্য অসংখ্যবার অনুরোধ করার পর জনতা রানওয়ে থেকে সরে যায়। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টায় সত্যি সত্যিই যখন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ বোয়িংটি আকাশে দেখা গেল, তখন সব নিয়ন্ত্রণ আর অনুরোধ-আবেদন অগ্রাহ্য করে হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরের ভিতরে ঢুকে যায়।
অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বিমানটি অবতরণ করে। টারম্যাকে পৌঁছে ইঞ্জিন বন্ধ করার সাথে সাথে অগণিত মানুষ তিন দিক থেকে ছুটি গিয়ে বিমানটি ঘিরে ধরে। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। সমসাময়িক ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মচারী ও পুলিশের নীরবে এ দৃশ্য অবলোকন করা ছাড়া করার কিছুই ছিল না। জনতা একেবারে বিমানের কাছে চলে যায়।
বিমানের চারদিক ঘিরে এত লোক ছিল যে শেখ হাসিনাকে বয়ে আনার জন্য যে ট্রাকটি নেওয়া হয়েছিল তা বিমানের কাছাকাছি নেওয়াই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বহু চেষ্টার পর জনতার স্রোত কিছুটা সরিয়ে ট্রাকটি বিমানের ককপিটের দরজার একেবারে সামনে নেওয়া হয়। ৪টা ৩২ মিনিটে শেখ হাসিনা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে বিমান থেকে ট্রাকে নেমে আসেন।
এ সময় লাখো জনতার কণ্ঠে ছিল গগনবিদারী স্লোগান- ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা, স্বাগত শুভেচ্ছা’। অনেকের চোখেই ছিল অশ্রুধারা। বিমান থেকে নামার আগে রাজ্জাক যখন হাসিনার গলায় মালা দেন, তখন তিনি কাঁদছিলেন। কলকাতা বিমানবন্দরে এবং ঢাকা আসার পথে ৫-৬ বার হাসিনা অঝোরে কেঁদেছেন।
আকাশে কালো মেঘ ছিল। পৌনে ৫টায় শেখ হাসিনাকে নিয়ে মিছিল শুরু হওয়ার পরপরই চারদিক অন্ধকার করে বৃষ্টি শুরু হয়। মুষলধারে বৃষ্টি ঝরে একটানা রাত ৮টা পর্যন্ত। একদিকে প্রবল বর্ষণ, সেই সাথে তীব্র ঝড়। প্রকৃতির ভয়াল রুদ্রমূর্তি। কুর্মিটোলা থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত ৮ মাইল রাস্তা সময় লাগার কথা বেশি হলে ৩০ মিনিট। প্রায় তিন ঘণ্টায় শেখ হাসিনা শেরেবাংলা নগরে পৌঁছলেন। ঝড়-বৃষ্টিতে নগরজীবন তখন প্রায় বিপন্ন, রাস্তাঘাটে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে গেছে। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে শেরেবাংলা নগরে অপেক্ষায় থাকেন লাখ কয়েক লোক। হাসিনাকে তারা দেখবেনই। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি গণসংবর্ধনা সভার মঞ্চে এলেন।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আয়োজিত গণসংর্ধনায় ভাষণদানকালে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমি জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। আমার আর কিছু পাওয়ার নেই। সব হারিয়ে আমি এসেছি আপনাদের পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য।
শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত লাখো জনতার গণসংবর্ধনাটি ছিল আনন্দঘন ও হৃদয়বিদারক। দলীয় নেত্রীর আগমনে নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল আনন্দ, উল্লাস আর উচ্ছ্বাস। অন্যদিকে আপনজনহারা নেত্রীর দুঃখ আর বেদনার কথা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি করে। বক্তৃতাদানকালে শেখ হাসিনা বারকয়েক কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আজকের জনসভায় লাখো চেনা মুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনোদিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।
ছয় বছর বিদেশে কাটিয়ে ছেড়ে ফেরার পরও যে শেখ হাসিনা ভালো ছিলেন, তা নয়। এমনকি থাকা নিজ বাড়িতেও প্রবেশের অনুমতি ছিল না তৎকালীন ক্ষমতাসীনের। ১৭ মে সন্ধ্যায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জনসভা শেষে সেখানে থাকা তো দূরের কথা, শ্রদ্ধা নিবেদন ও মিলাদ পড়ার জন্য পর্যন্ত যেতে পারেননি। পরের দিনগুলো তার কেটেছিল অনেকটা উদ্বাস্তুর মতো। ‘স্মৃতি বড় মধুর স্মৃতি বড় বেদনার’ জীবন গল্পে তিনি লিখেছেন, ‘১৯৮১ সালে আমি ফিরে এসে বাড়িটি খুলে দিতে বলি, কিন্তু জেনারেল জিয়াউর রহমান অনুমতি দেয়নি। এমনকি বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতিও পাইনি। মিলাদ পড়ানোর জন্য বাড়ির দরজা জিয়া খুলে দেয়নি। রাস্তার ওপর বসেই আমরা মিলাদ পড়ি।’
চার.
দেশে ফিরে শেখ হাসিনা যে শুধু জাতির ভাগ্যোন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন, তা নয়। জাতির পিতার হত্যার কারণ উদ্ঘাটন ও বিচার প্রক্রিয়াও চালিয়েছেন সমানতালে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেন, ইউরোপ ও বাংলাদেশের বিভন্ন জনসভায় উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের সমর্থনপ্রাপ্ত এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্যার টমাস উইলিয়ামস্, কিউ সি, এম পি’কে চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত করে একটি কমিশন গঠন করা হয়। শেখ মুজিব ও অন্যান্য নিহত নেতোর পরিবার-পরিজন এই আবেদন পেশ করেন।
কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সন্ ম্যাকব্রাইড (প্রবীণ আইরিশ কৌঁসুলি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টসের যথাক্রমে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী), জেফরি টমাস, কিউসি, এমপি, এবং অব্রে রোজ (সলিসিটার)। সিদ্ধান্ত হয়- মি. রোজ কমিশনের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করবেন। হত্যাকারীদের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন প্রয়োগ করার ব্যাপারে কীভাবে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে সে সম্পর্কে কমিশন তদন্ত করবে।
১৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমিশনের প্রথম বৈঠকে উপর্যুক্ত বিষয় সম্পর্কে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রয়াত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যাদ্বয় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং নিহত প্রধানমন্ত্রী ও সহকারী-রাষ্ট্রপতির পুত্রদ্বয় যথাক্রমে মোহাম্মদ সেলিম ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অনুরোধ অনুযায়ী স্যার টমাস উইলিয়ামস্, কিউ সিএমপি, এই কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
স্যার টমাস উইলিয়ামসের সভাপতিত্বে ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর (ব্রিটিশ) হাউস অব কমন্সের একটি কমিটি রুমে কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সন্ ম্যাকব্রাইড, এস সি, জেফরি টমাস, কিউ সি, এম পি এবং অব্রে রোজ, সলিসিটার। বৈঠকের পর একই দিনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশন গঠন এবং কমিশনের উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
১৯৮৪ সালের মে মাসের শেষ দিকে আলজিয়ার্সে আফ্রো-এশীয় সংহতি সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ২৯ মে সম্মেলনে প্রদত্ত ওই ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় লাভের পর আফ্রো-এশিয়ার ও জোট নিরপেক্ষ সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী শেখ মুজিবুর রহমান ১১ বছর আগে এই আলজেরিয়ায় এসেছিলেন।
আফ্রো-এশিয়ার যে মহতী সম্মেলনে আজ এখন আমি বক্তৃতা করছি তাতে বক্তৃতা করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু আফ্রো-এশিয়ার নির্যাতিত জনগণের বিপ্লবী কণ্ঠস্বর প্যাট্রিস লুমুম্বাকে যেভাবে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই ১৯৭৫ সালে আফ্রো-এশিয়ার মুক্তিকামী জনগণের আর এক বীর সেনানী শেখ মুজিবের কণ্ঠস্বরকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
লাখো মানুষের ভালোবাসা নিয়ে দেশে ফিরে তিনি যে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের সংগ্রাম চার দশক আগে শুরু করেছিলেন, তা আজও চলছে। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, মানবসম্পদের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রসারের স্বীকৃতির পর মানবসম্পদের চিন্তাধারা অতিক্রম করে যেতে হবে। তাঁর বিশ্বাস, এ প্রসারতা হবে আরও ব্যাপক, কোনোমতেই পরিপ্রেক্ষিতের দৃষ্টিকোণের বিকল্প হিসেবে নয়। কখনও কখনও আরও উন্নততর ভাবনার মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করেছে।
হোঁচটও খেয়েছেন কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েননি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো আগের সিদ্বান্ত পরে নিয়েছেন; আবার অনেক পরের সিদ্ধান্ত আগে নিয়ে ফেলেছেন। বিকল্প পথের চিন্তা তিনি সবসময় করে রাখেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঝুঁকিও নেন। দায়িত্বের আন্তঃনির্ভরতায় তাঁর অগাধ বিশ্বাস এবং আস্থা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের পথ একেবারে ঋজুপথ নয়। এ পথে নিরবচ্ছিন্ন সাফল্য আসে না, এ পথ বহু বিঘ্নসংকুল, সুদীর্ঘ এবং সর্পিল।’ শেখ হাসিনাও জানেন এই পথের কথা। হয়তো এ কারণে প্রায়ই বলেন, ‘মানুষের জন্য করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের জন্য যা ত্যাগ করার করব, আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।
বঙ্গবন্ধু কন্যা ৯ কোটি মানুষের জন্য করেছেন; ১৬ কোটির জন্যও করছেন, করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অগ্রগতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পূর্ণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে Crown Jewel (মুকুট মণি) হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বাংলার মুকুট মণি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আরও উঁচু সোপানে পৌঁছে দেবেন- স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এটাই বাংলার জনগণের প্রত্যাশা।