all-in-one-wp-security-and-firewall
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home2/nababani/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ব্ল্যাক রাইসসহ
আরিফ জানান, দ্বিতীয়বার কালো রঙের (ব্ল্যাক রাইস) ধানের আবাদ করায় এবং বৃষ্টি কম হওয়ায় ধানের ফলন কিছু কম হলেও তিনি সফল হয়েছেন। কৃষক বাবার অনুপ্রেরণা এবং করোনাকালীন দারিদ্র্য তাকে একজন সফল কৃষক হতে সহযোগিতা করেছে।
আরিফ বলেন, ’প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে পুরো পৃথিবীর মতো আমাদের পরিবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আমরা যৌথ পরিবার, বাবা-মা বাড়িতে থাকেন। চাচা বিদেশে থাকার সুবাদে তার সহযোগিতায় এবং টিউশনি করে আমি ও আমার বোনসহ কুমিল্লা শহরে থেকে পড়াশোনা করি। করোনায় চাচার চাকরির সমস্যা ও টিউশনি বন্ধ হওয়ায় আমরা গ্রামে চলে আসি। আমি বাবার সাথে কৃষিকাজে এবং গরুর খামার ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিই। কিন্তু আমরা লাভের মুখ দেখছিলাম না। এরই মধ্যে আমার এক চাচা আবু মাসুদ লন্ডন থেকে ব্ল্যাক রাইসের একটি ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে বলেন, এই চাল কোথায় পাওয়া যায় একটু খোঁজ নিয়ে দেখ। আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পেলাম না।’
পরে গত বছরের আগস্টে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কাজী আপন তিবরানী ম্যাডাম ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স ফোরাম নামে অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসার একটি মাধ্যম চালু করেন। আমি সেখানে যুক্ত হয়ে দেখলাম, শিক্ষার্থীরা কিছু-না-কিছু নিয়ে কাজ করছে। আমি তখন ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করে ম্যাডামকে জানাই, আমার বাবা কৃষক, তাই আমি কৃষি উদ্যোক্তা হতে চাই। তিনি আমাকে সাহস দিলেন। আমি তাকে ব্ল্যাক রাইসের বীজ সংগ্রহ করে দেয়ার জন্য বললে তিনি কৃষি বিভাগের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে আমাকে তাদের ঠিকানা দেন। আমি কুমিল্লার বীজ প্রত্যয়ন অফিসার তারিক মাহমুদুল ইসলামের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদে নেমে পড়ি। বর্তমানে মোট চার একর কৃষি জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ১ একর পুরো হচ্ছে ব্ল্যাক রাইস। আর ৩০ শতক বেগুনি এবং ৩০ শতক জমিতে লাল চালের ধান চাষ করেছি। বাকিগুলো হীরা-১৯, হীরা-২, ময়না, মিনিকেট, বিন্নি ধান ইত্যাদি। আমাকে এসব কাজে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স ফোরামের সদস্যরা অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। বাবা ও আমি নিজেই ধানের পরিচর্যা করেছি। ব্যতিক্রমী এসব কালো, লাল ও বেগুনি রঙের চালের ধানে শিক্ষার্থী আরিফের চোখে এখন রঙিন স্বপ্ন। আরিফ স্বপ্ন দেখছেন তার বাবাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। আরিফের ভাষ্য, আমার বাবা একজন আদর্শ কৃষক, আর আমি চাচ্ছি কৃষকের পাশাপাশি একজন কৃষি উদ্যোক্তা হতে।’ সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন আরিফ।
আরিফ জানান, এক একর জমিতে ২০ মণ ব্ল্যাক রাইস উৎপন্ন হয়েছে। ৬০ শতাংশ জমিতে ১২ মণ বেগুনি ও লাল চালের ধান উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া অন্য আড়াই একর জমিতে বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড প্রায় ২০০ মণ ধান উৎপাদিত হয়েছে। ব্ল্যাক রাইস, বেগুনি ও লাল চালের ধান কুমিল্লার কোতোয়ালির মনোগ্রাম গ্রামের কৃষক মঞ্জুর ভাইয়ের ঢেঁকিছাঁটা মেশিনের মাধ্যমে ভাঙিয়ে চাল করব। ব্ল্যাক রাইস ধান প্রতি মণ ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে। ধান উৎপাদনে তার প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো আয় হবে। বিদেশে এক কেজি ব্ল্যাক রাইস ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এখনো চার-পাঁচ মণ চালের অর্ডার আছে।
আরিফ আরো জানান, এরই মধ্যে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্ল্যাক ও রেড রাইস সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি শুরু করেছেন। পাশাপাশি খাঁটি সরিষার তেল, লাল চিনি এবং কিছু নিরাপদ খাদ্য বিক্রি করছেন। এখন তিনি অনেকটাই স্বাবলম্বী। তার থেকে দেখে অনেকে ব্ল্যাক রাইস ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে। তিনি তাদেরকে বীজ দেবেন বলেও জানান। চলতি মৌসুমে ব্ল্যাক রাইস আবাদ করা যায় কি না কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলে সামনে তিন-চার একর জমিতে ব্ল্যাক রাইস আবাদ করার আশা করছেন। তার স্বপ্ন হচ্ছে, কম খরচে এসব চাল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া।
আরিফ জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলাম দুলাল সার্বক্ষণিক আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাদের সহযোগিতায় ভালো ফলন উৎপাদন করতে পেরেছি। বর্তমানে কৃষি বিভাগ আমাকে অর্ধেক ভর্তুকি দিয়ে ধান কাটার মেশিন ক্রয় করতে বলছে।
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী আরিফ আমাদেরকে না জানিয়ে এসব ধানের চাষাবাদ শুরু করেন। পরে আমরা খবর পেয়ে নিয়মিত তার সাথে যোগাযোগ রেখেছি এবং নিয়মিত তার জমিগুলো পরিদর্শন করছি। এ উপজেলায় আরিফই প্রথমবারের মতো এ ধরনের ধানের চাষ করেছেন। কৃষি বিভাগ যে কোনো প্রয়োজনে তার পাশে থাকবে।