র্যাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালে বিভিন্ন প্রশংসাসূচক কাজ করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসা মো. সারওয়ার আলম এবার শাস্তি পেয়েছেন। যদিও সেটি তিরস্কারসূচক লঘুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এমন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে তিনি পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছিলেন।
গত বছরের ৭ মার্চ প্রশাসনের ৩৩৭ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয় সরকার। কিন্তু পদোন্নতি বঞ্চিত হন ২৭তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সারওয়ার আলম। এরপর তিনি ওই বছরের ৮ মার্চ ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘চাকুরী জীবনে যেসব কর্মকর্তা কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকুরী জীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এদেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়।’
একে ‘অকর্মকর্তাসুলভ’ আচরণ এবং সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ধরে নিয়ে তাকে লঘুদণ্ড দিয়েছে জনপ্রশাসন। গত ২১ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কেএম আলী আজম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে সারওয়ারকে শাস্তি দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। তিনি বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কর্মরত।
শাস্তির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মো. সারওয়ার আলম ২০২১ সালের ৮ মার্চ বেলা ১২টা ১০ মিনিটে তার ফেসবুক আইডিতে ‘চাকরীজীবনে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাদের বেশিরভাগই চাকুরীজীবনে পদে পদে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন এবং এদেশে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই অন্যায়’ বলে মন্তব্য করেন। একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার মাধ্যমে ‘অকর্মকর্তাসুলভ’ আচরণ করেছেন। এতে জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ০১৫/২০২১ নম্বর বিভাগীয় মামলা রুজু করে গত বছরের ৩০ জুন অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী প্রেরণ করে কৈফিয়ত তলব করা হয়। যেহেতু অভিযুক্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত বা বর্ধিত সময়ের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো লিখিত বক্তব্য দাখিল করেননি এবং অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করলে তা পর্যালোচনায় মো. সারওয়ার আলমের বিরুদ্ধে ‘অকর্মকর্তাসুলভ’ আচরণ এবং জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ প্রমাণ হয়। এজন্য তাকে তিরস্কারসূচক লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০০৮ সালের নভেম্বরে চাকরিতে যোগ দেন সারওয়ার। ২০১৪ সালের ১ জুন পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হন তিনি। উপসচিব পদে পদোন্নতির শর্ত পূরণ হয়েছে তার। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় অভিযোগও ছিল না। তারপরও সারওয়ারের পদোন্নতি না হওয়ায় ওই সময় অনেকে হতাশা প্রকাশ করেন।
পদোন্নতি প্রসঙ্গে সারওয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি সবসময় জনগণের জন্য কাজ করেছি। যেসব জায়গায় জনগণ প্রতারিত হচ্ছিল, সেগুলো ধরে ধরে কাজ করে মানুষের মনে স্থান করতে পেরেছি। সততা, কর্মদক্ষতা কোনো দিক দিয়েই পিছিয়ে ছিলাম না। আমার প্রমোশন হয়নি- এটা কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না।’
এদিকে পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ার পর নতুন করে তিরস্কারসূচক লঘুদণ্ড দেওয়ায় সারওয়ারের মতো অন্য সাহসী কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বেন বলে মনে করেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। সারওয়ার আলমের শাস্তি নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে চাননি কোনো কর্মকর্তা।