রাজশাহী মহানগরীতে নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে রাজশাহী কোর্ট কলেজের এক ছাত্রকে অপহরণ, প্রাণনাশের হুমকী ও পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা আদায়ের অপরাধে প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে আটক করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় গ্রেফতারকৃত আাসামীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া নগদ ৩ হাজার দুইশত টাকা, ২ টি মোবাইল ফোন, ২ টি জিআই পাইপ, ১ টি চাকু, পুলিশের ওয়াকিটকির মতো দেখতে একটি ছোট কালো রংয়ের ওয়াকিটকি, পুলিশ লেখা ও পুলিশের মনোগ্রাম সম্বলিত ২টি আইডি কার্ড হোল্ডার এবং সাদা-নীল রংয়ের পুলিশ লেখা সম্বলিত ১ জোড়া জুতা উদ্ধার হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী হলো রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার হাদির মোড় বৌ বাজারের মৃত আলম শেখের ছেলে মো: মাসুম শেখ (৩৮), রামচন্দ্রপুর মিরেরচকের মো: সেলিম আলীর ছেলে মো: আশিক আলী (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো: মুনতাসির আলী সিয়াম (২৯), কেদুর মোড় বৌ বাজারের মৃত সামসুলের ছেলে মো: পলাশ (২৭) এবং রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার হলিদাগাছী, খুদির বটতলার মো: মামুনুর রহমান বাবুর স্ত্রী মোসা: শরিফা আক্তার সাথী (২৭)। সে নগরীর রাজপাড়া থানার তেরখাদিয়া, ডাবতলার বাসিন্দা।
আজ ১৯ এপ্রিল ২০২২ দুপুর ১২.০০ টায় আরএমপি সদরদপ্তর কনফারেন্স রুমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত পুলিশ কমিশনার জনাব মো: আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয় এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, পলাশ (ছদ্মনাম) রাজশাহী কোর্ট কলেজের ৩য় বর্ষের ছাত্র। সে লেখপড়ার পাশাপাশি ইউনিলিভার পিয়রইট কোম্পানী রাজশাহী শাখায় চাকুরী করে। বাসাভাড়া নেওয়ার জন্য সে রাজশাহী বাসা ভাড়া নামক একটি ফেসবুক পেইজে পোস্ট দেয়।
আসামী শরিফা আক্তার সাথী পলাশকে ফোন দিয়ে বলে, রাজশাহী কমিউনিটি সেন্টারের পাশে তার মায়ের বাসায় একরুম বিশিষ্ট একটি ভালো রুম আছে। পলাশের এক রুমের বাসা প্রয়োজন ছিল। তাই সে সরল বিশ্বাসে গত ১৩ এপ্রিল ২০২২ দুপুর সাড়ে ১২ টায় রাজশাহী কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গিয়ে আসামী শরিফাকে ফোন দেয়। ফোন পেয়ে শরিফা এসে পলাশকে কাশিয়াডাঙ্গা থানার হড়গ্রাম পূর্বপাড়ায় একটি বাড়ীর নীচতলার একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে বাসার চারপাশ দেখার সময় শরিফা কৌশলে রুমের দরজা আটকিয়ে দিয়ে পলাশকে জড়িয়ে ধরে। সেখানে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা প্রতারক চক্রের ৪ জন সদস্য রুমের মধ্যে প্রবেশ করে। তারা শরিফার সাথে পলাশের আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তোলে। এরপর পলাশকে চড়থাপ্পড়, হুমকী, ফেসবুকে ছবি ছেড়ে দেওয়ার-সহ পুলিশ পরিচয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ ও চাঁদা দাবি করে। পরবর্তীতে তার কাছ থাকা নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে মোট ১৪ হাজার ৯০০ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে।
এ ঘটনায় পলাশ ডিবি পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ প্রদান করেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত পুলিশ কমিশনার জনাব মো: আবু কালাম সিদ্দিক মহোদয়ের নির্দেশনায়, রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব মো: আরেফিন জুয়েলের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) জনাব মো: আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক জনাব মো: আবুল কালাম আজাদ, এসআই মো: আশরাফুল ইসলাম ও তার টিম আসামী গ্রেফতারের অভিযানে নামে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামীদের অবস্থান নির্ণয় করে গত ১৮ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার তেরখাদিয়া ডাবতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের মূলহোতা-সহ ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এসময় গ্রেফতারকৃত আাসামীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া নগদ ৩ হাজার দুইশত টাকা, ২ টি মোবাইল ফোন, ২ টি জিআই পাইপ, ১ টি চাকু, পুলিশের ওয়াকিটকির মতো দেখতে একটি ছোট কালো রংয়ের ওয়াকিটকি, পুলিশ লেখা ও পুলিশের মনোগ্রাম সম্বলিত ২টি আইডি কার্ড হোল্ডার এবং সাদা-নীল রংয়ের পুলিশ লেখা সম্বলিত ১ জোড়া জুতা উদ্ধার হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।