এইচআইভি আক্রান্তদের ‘ক্যাফে পজিটিভ’
‘এইডস রোগী নাকি, ওরে বাবা। দূরে থাকতে হবে।’ ছোটবেলা থেকেই সমাজের এই নেতিবাচক মনোভাব দেখে এসেছেন তারা। বারবার শুনতে শুনেও বেঁচে থাকার লড়াইয়ে হাল ছাড়েননি। জীবন আর সমাজের সঙ্গে তাদের এই লড়াইটা শুরু হয়েছিল জন্মের সময়। এমনকি বাবা মায়ের পরিচয়ও জানা ছিল না। হ্যাঁ, বলছি একদল তরুণ এইডস রোগীর কথা।
সমাজ তাদের তুচ্ছ করলেও জীবন তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। নিজেদের প্রচেষ্টায় কলকাতার উত্তরাঞ্চলে গড়ে তোলেন একটি রেস্তোরাঁ, যা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয়, পুরো এশিয়া মহাদেশে প্রথম ক্যাফে, যেখানকার কর্মীরা সবাই এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী। আর এভাবেই ২০১৮ সালে মাত্র ৭ জন কর্মীর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ‘ক্যাফে পজিটিভ’।
তবে ভাইরাস বহন করলেও নিয়মিত রেট্রো ভাইরাল চেকআপ করান ‘ক্যাফে পজিটিভ’র কর্মীরা। সুস্থ থাকতে মেনে চলেন ডাক্তারের সব নির্দেশ। শুধু তাই নয়, নৈতিকতার অংশ হিসেবে, যারাই তাদের রেস্তোরাঁয় আসেন তাদের প্রথমেই জানিয়ে দেন যে ‘ক্যাফে পজিটিভ’র কর্মীরা সবাই এইচআইভি পজিটিভ। এতে অনেকে অস্বস্তি বা দ্বিধান্বিত হলেও বেশির ভাগই তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মূলত এইডস নিয়ে সচেতনতা প্রসার এবং এইচআইভি পজিটিভদের কাছে কর্মসংস্থানের নতুন দিশা খুলে দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের এ যাত্রাটা মসৃণ ছিল না মোটেই। প্রথমদিকে কেউ তাদের জমি কিংবা দোকান দিতে রাজি হয়নি। এমনকি তাদের সংস্পর্শও এড়িয়ে চলেছে সবাই। তবে সমাজের এই ট্যাবু ভাঙতে করেছেন লড়াই, লক্ষ্য পূরণে তারা ছিলেন অবিচল। ভারতজুড়ে এমন আরও ক্যাফে খোলার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে প্রায় এক হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন ‘ক্যাফে পজিটিভ’ সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এইডস কোনো ছোঁয়াছে রোগ নয়। আর তাই এইচআইভি নিয়ে চলমান সংকট দূর করতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।